অনলাইনে কাজ পেতে হলে

অনলাইনে কাজ পেতে হলে

ঘরে বসে ইন্টারনেটে আয় বা অনলাইনে কাজ এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। চাকরির চেয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ নিয়ে অনেকেই এখন ঝুঁকছেন ফ্রিল্যান্সিংয়ে।
গত কয়েক বছরে ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং ক্ষেত্রটি দ্রুতগতিতে জনপ্রিয় হয়েছে। যুক্তরাজ্যের ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টের এক জরিপে বলা হয়েছে, ২০১১ সালে ২০০৮ সালের তুলনায় ১২ শতাংশ ফ্রিল্যান্সার বেড়েছে। জনপ্রিয় অনলাইন মার্কেটপ্লেস হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে ইল্যান্স, ওডেস্ক ও ফ্রিল্যান্সার। জনপ্রিয় অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতে কাজ পোস্ট করার হারও বেড়েছে।
সম্প্রতি ইল্যান্সের এক জরিপে দেখা গেছে,  স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারায় ৯০ শতাংশ ফ্রিল্যান্সার নিজেকে সুখী মনে করেন এবং বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা হওয়া স্বত্বেও অর্ধেকের বেশি ফ্রিল্যান্সার চিন্তিত নন।
ফ্রিল্যান্সিং ক্ষেত্রে সফলতা দেখে অনেকেই ফ্রিল্যান্সিং করতে চান। অনেকে বলেন, অভিজ্ঞতা না থাকলে ফ্রিল্যান্সিং করা যায় না। তবে দক্ষ ফ্রিল্যান্সাররা বলেন, অভিজ্ঞতা না থাকলেও  ফ্রিল্যান্সিং করা যায়; এক্ষেত্রে ইচ্ছা, পরিশ্রম ও ধৈর্য থাকতে হয়।
বাংলাদেশে ইল্যান্সের কান্ট্রি ম্যানেজার সাইদুর মামুন খান কে জানিয়েছেন, দেশে নতুন ফ্রিল্যান্সারদের সম্ভাবনা অনেক। নতুন ও আগ্রহীদের জন্য বিশেষ পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।

লক্ষ্য নির্ধারণ করা

লক্ষ্য নির্ধারণ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনি ফ্রিল্যান্সিংয়ের কোন কাজটি করতে চান বা আপনার কোন সেবা বিক্রি করতে চান সেটি আগে নির্ধারণ করতে হবে। অধিকাংশ মানুষ যে ভুলটি করে, তা হল অন্যরা কি করছে তা অনুসরণ করা। এ ক্ষেত্রে আপনার যে অভিজ্ঞতা আছে বা আপনার যে বিষয়টি ভালো লাগে সেটি নির্বাচন করা। আপনি যদি গণিতে ভাল হন, তাহলে আপনার লক্ষ্য হওয়া উচিত প্রোগ্রামিং। আর যদি আঁঁকাআঁঁকি ভালো লাগে তাহলে আপনার জন্য গ্রাফিকস ডিজাইন সবচেয়ে সুবিধাজনক হবে। যদি লেখালেখি ভালো লাগে তাহলে লেখালেখিতেই ফ্রিল্যান্স ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। লিখতে পারেন ব্লগ, একাধিক ভাষা জানা থাকলে অনুবাদক হিসেবেও কাজ করতে পারেন। যদি ভালো গবেষণা করতে পারেন তবে গবেষক, পরিকল্পনাবিদ থেকে শুরু করে প্রযুক্তি দক্ষতার সব রকম কাজই পাবেন অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতে। কাজের দক্ষতাই ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হওয়ার চাবি।

ফ্রিল্যান্স প্রোফাইল তৈরি করা

ফ্রিল্যান্সাররা প্রথমেই যে মূল সমস্যায় পড়েন তা হচ্ছে প্রোফাইল তৈরি। সুন্দর একটি প্রোফাইল তৈরি করে নিজেকে অনলাইন মার্কেটপ্লেসে উপস্থাপন করতে পারলে কাজ পাওয়া সহজ হয়ে যায়। অধিকাংশ ফ্রিল্যান্সাররা ভাবেন যে, কাজের দক্ষতা অর্জনের পরেই কেবল প্রোফাইল তরি করা যায়। এটা একটি ভুল ধারণা। সুন্দর প্রোফাইল আগে তৈরি করা যেতে পারে তবে একজন ফ্রিল্যান্সারের দক্ষতা অর্জন করার আগে কাজে বিড করা উচিত নয়। এজন্য আগে ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট থেকে কাজ সম্পর্কে ভালো ধারণা নিতে হবে।

যাঁরা নতুন তাঁদের অনেকের প্রশ্ন থাকে কোথায়, কীভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করব? এ প্রশ্নের সহজ উত্তর হচ্ছে কাজ শুরুর আগে ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোতে কী ধরনের কাজ হয় তা পর্যবেক্ষণ করা। অ্যাকাউন্ট খোলা, সুন্দর প্রোফাইল তৈরি করা। নিজের কাজের স্যাম্পল তৈরি করা। পরীক্ষা দিয়ে নিজের দক্ষতা যাচাই করা। কাজের জন্য ইল্যান্স, ওডেস্ক, ফ্রিল্যান্সারের মতো পরিচিত সাইটগুলোতে অ্যাকাউন্ট তৈরি করে আগে প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করুন পাশাপাশি আপনার দক্ষতার কাজগুলোকে সাইটের কাজের বর্ণনার সঙ্গে মিলিয়ে অনুশীলন করুন। দক্ষতা না থাকলে শুরুতেই কাজ পাওয়ার জন্য বিড করবেন না। কাজে দক্ষ হয়ে তবে বিড করুন।

ফ্রিল্যান্সিং কাজের জন্য এখন কয়েকটি বিষয় খুব জরুরি। সাবলীল ইংরেজি বলা, লেখা ও ইংরেজি বোঝা। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো সম্পর্কে জ্ঞান থাকাও দরকার। স্কাইপ ব্যবহার জানতে হবে। দ্রুতগতির ইন্টারনেট থাকা সবার আগে দরকার।

প্রোফাইল তৈরির নিয়মকানুন

প্রোফাইল তৈরিতে দক্ষতা ও কাজের বর্ণনা দিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিন। ইউটিউবে দেখে নিতে পারেন আপনার প্রোফাইল সাজানোর টিউটোরিয়াল। আপনি যে বিষয়ে পারদর্শী, সেটিকে তুলে ধরতে চেষ্টা করুন। প্রোফাইল সুন্দরভাবে গোছান, শতভাগ প্রোফাইল সম্পূর্ণ করুন। ফ্রিল্যান্সার সাইটগুলোতে কাজ শুরু করার আগে আপনি যে বিষয়ে পারদর্শী, সেই বিষয়গুলোতে পরীক্ষা দিন এবং ভালো ফল করতে চেষ্টা করুন। যে বিষয়ে পরীক্ষা দেবেন, সে বিষয়ে আগে কিছু পড়াশোনা করে তবে পরীক্ষা দিন। আপনার কাজের নমুনা বা স্যাম্পল তৈরি করে প্রোফাইলে যুক্ত করুন। আপনার নমুনা কাজগুলো বায়ারকে আকৃষ্ট করতে পারে আর আপনাকে কাঙ্ক্ষিত কাজটি এনে দিতে পারে।

প্রোফাইল তৈরির সময় খেয়াল রাখবেন যে, আপনি একজন পেশাদার হিসেবে এখানে কাজ করবেন। আপনার অদক্ষতা যেমন আপনার জন্য বায়ারের কাছ থেকে খারাপ ফিডব্যাক দেবে তেমনি দেশের অন্য ফ্রিল্যান্সারদের সম্পর্কেও নেতিবাচক ধারণা দেবে। তাই প্রোফাইলে সব সময় সঠিক তথ্য দেওয়া উচিত্।

প্রোফাইল তৈরি সম্পূর্ণ হলে  এবং কাজের দক্ষতা নিয়ে আত্মবিশ্বাস থাকলে আপনি কাজ পাওয়ার আবেদন করার জন্য প্রস্তুত।

 

ইচ্ছা, ধৈর্য আর পরিশ্রম করলে অনলাইনে অভিজ্ঞতা ছাড়া ঘরে বসেই আয় করা সম্ভব। এ বিষয়ে যারা নতুন ও আগ্রহী, তাঁদের জন্য অনলাইনে আয় বিষয়ক এই পরামর্শ দিয়েছেন ইল্যান্সের কান্ট্রি ম্যানেজার সাইদুর মামুন খান।
মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে ধারণা নেওয়া
নতুন অবস্থায় একজন ফ্রিল্যান্সারের মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে ধারণা একেবারে না থাকতে পারে। তবে সঠিকভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে এ সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা থাকা প্রয়োজন। বেশির ভাগ ফ্রিল্যান্সারই এ ধারণা পাওয়ার জন্য বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটের গ্রুপে প্রশ্ন করে থাকেন। অথচ, প্রতিটি অনলাইন মার্কেটপ্লেসে তাঁদের হেল্প সেন্টার থাকে, যেখানে অনেক সঠিক তথ্য পাওয়া যায়। একজন ফ্রিল্যান্সারের নিয়মিত এই পোস্টগুলো দেখা উচিত। ভালোভাবে জানার পরেই মার্কেটপ্লেসে কাজের জন্য বিড করা বা কাজ করা উচিত।
বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করা
আমরা যেমন একটি কম্পিউটার কিনতে গেলে শুধু একটি কম্পিউটারের কেসিং বা বক্স কিনি না, এর সঙ্গে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশও কিনি। তেমনি, যখন কোন ক্লায়েন্ট একজন ফ্রিল্যান্সারকে কাজে নিয়োগ দেন তাঁর কাছ থেকে কাজের ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ ও দক্ষ পেশাদারিত্বই আশা করেন। এক্ষেত্রে একটি প্রোফাইল তৈরি করাই যথেষ্ট নয়, একজন ফ্রিল্যান্সারকে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে কাজটি করার জন্য তাঁর কি যোগ্যতা আছে। বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করতে এবং যোগ্যতা প্রমাণ করতে একজন ফ্রিল্যান্সার দুটি কাজ করতে পারেন-

দক্ষতার পরীক্ষা

একজন ফ্রিল্যান্সারের স্কিল টেস্টের মাধ্যমে তিনি কি কাজ করতে পারেন সে সম্পর্কে জানতে পারেন। ফ্রিল্যান্সার সাইটগুলোতে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য স্কিল টেস্টের ব্যবস্থা আছে, যেখান থেকে স্কিল টেস্ট দিয়ে আপনার দক্ষতা যাচাই করা খুবই সহজ। এই টেস্টগুলো বিনামূল্যে  দেওয়া যায় এবং কেউ যদি টেস্টে খারাপ করেন তাহলে ফলটি লুকিয়ে রাখতেও পারবেন এবং আবার  ১৪ দিন পরে পরীক্ষা দিতে পারবেন। যদি ফ্রিল্যান্সার তাঁর প্রোফাইলে ভালো স্কোর দেখাতে পারেন, তাহলে কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে নিশ্চয়তা অনেকাংশে বেড়ে যায়।

পোর্টফোলিও তৈরি

স্কিল টেস্ট প্রমাণ করে বৈষয়িক জ্ঞান, আর পোর্টফোলিও প্রমাণ করে একজন ফ্রিল্যান্সারের দক্ষতা এবং হাতে কলমে কাজ করার অভিজ্ঞতা। একজন নতুন ফ্রিল্যান্সার এর উচিত যত বেশি পোর্টফোলিও সংযোগ করা। ওয়েব ডেভেলপার তাঁর ডেভেলপ করা সাইটের স্ক্রিন-শট নিয়ে আপলোড করতে পারেন, এবং গ্রাফিকস ডিজাইনার তাঁর ডিজাইন তৈরি করে প্রোফাইলে যুক্ত করে দেখাতে পারেন। বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজগুলো সংযুক্ত করতে পারেন স্কিল হিসেবে। সার্ভিস হোল্ডাররা তাদের সার্টিফিকেট দিয়ে দিতে পারেন অভিজ্ঞতা হিসেবে। সর্বোপরি কোন প্রোফাইলের পোর্টফোলিও একজন ফ্রিল্যান্সার যে বিষয়ে দক্ষ সে বিষয়ে তার পরিপূর্ণ দক্ষতা আছে সেটা প্রমাণ করে।

নিজের প্রচারণা চালানো

নিজের ঢোল নিজে পেটানো কথাটি খারাপ শোনালেও একজন ফ্রিল্যান্সারের ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ। আপনাকে যেহেতু আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মার্কেটে কাজ করতে হবে তাই আপনার পরিচিতি থাকা আবশ্যক। ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে নিজের অবস্থান তৈরি করতে আপনার ত্রুটিমুক্ত প্রোফাইল এর পাশাপাশি নিজেকে বিভিন্নভাবে তুলে ধরতে হবে। তাই সম্ভব হলে নিজের একটি পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট তৈরি করা ভালো। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ সাইটের প্রোফাইল ও পেজের মাধ্যমে আপনার এবং আপনার বিভিন্ন সেবা তুলে ধরতে পারেন। অবশ্যই প্রফেশনাল ছবি ও তথ্য শেয়ার করা উচিত। সামাজিক যোগাযোগ সাইটে আপনার পার্সোনালটি নষ্ট হয় এমন কোন কিছু করা উচিত নয়।  অন্যান্য ফ্রিল্যান্সারদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ প্রয়োজন।  এতে তাদের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।

অন্যান্য অর্থ বাণিজ্য বিজ্ঞান প্রযুক্তি