জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মাধ্যমে দুই কূলই রক্ষা করলেন। বিএনপি নির্বাচনে না আসায় তার দল একদিকে অনেকটা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দশম জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে সংসদে যাচ্ছে। এতে পার্টির যে অংশটি নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে ছিলেন তাদের ইচ্ছা পূরণ হলো। আবার সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচনে যাবেন না এরশাদের এমন বক্তব্যও প্রতিষ্ঠিত হলো। এতে পার্টির যে অংশটুকু নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে ছিলেন তাদেরও কথা রক্ষা হলো। একদিকে এরশাদ নির্বাচনে না যাওয়ার প্রশ্নে অনড় থাকলেন। পাশাপাশি প্রধান বিরোধী দল হিসেবে তার দল সংসদেও যাচ্ছে। সবমিলিয়ে দুই কূলই রক্ষা করলেন এরশাদ।
জানা গেছে, বিএনপি নির্বাচনে না আসায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতায় জাতীয় পার্টিকে ৭০টি আসন ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এরশাদ শেষ মুহূর্তে সব দল ছাড়া নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকায়, পার্টির চেয়ারম্যানের নির্দেশে সমঝোতার আসন থেকে অনেকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। ফলে বর্তমানে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার আসন রয়েছে জাতীয় পার্টির ৪৬টি। এরমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২১ জন নির্বাচিত হওয়ার পথে। বাকিদের অধিকাংশই স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে লড়বেন। ওইসব আসনে নৌকা প্রতীকের কোনো প্রার্থী নেই। আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক এমন এক প্রেসিডিয়ামের সদস্য নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, আওয়ামী লীগ ৭০টি আসন ছেড়ে দিয়েছিল জাতীয় পার্টিকে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আমরা আরও ২০ থেকে ৩০টি আসনে বিজয়ী হতে পারতাম। শক্তিশালী বিরোধী দল হতে পারতাম সংসদে। এখন আশা করছি দশম সংসদে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সংখ্যা হবে ৬০ থেকে ৭০টি। জানা যায়, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে রয়েছেন রওশন এরশাদের নেতৃত্বে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, মজিবুল হক চুন্নুসহ আরও অনেকে। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষের নেতা-কর্মীরা বলছেন, জাতীয় পার্টিতে ভাঙাগড়া আসলেও আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জিয়াউদ্দিন বাবলু এরশাদকে ছেড়ে যাননি। সবসময় সুখে-দুঃখে বিশ্বস্ত সহকর্মী হিসেবে এরশাদের পাশে থেকেছেন। রওশন এরশাদও স্বামীর অকল্যাণ হবে এমন কোনো পদক্ষেপ নেননি। অন্যদিকে পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার দলের নেতা-কর্মীদের সুসংগঠিত করে দল পরিচালনায় বারবার এরশাদের প্রতি আনুগত্যের পরিচয় দিয়েছেন। এত দীর্ঘ সময় বাংলাদেশে আর কোনো নেতা পার্টির মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। ভাই জিএম কাদেরও এরশাদের বাইরে কিছু ভাবেন না। কাজী ফিরোজ রশীদও এরশাদের দুঃসময়ে সঙ্গে ছিলেন। এ দিকে জাতীয় পার্টিতে যা চলছে তা দুই কূল রক্ষায় সমঝোতা নাটক বলে মনে করছেন অনেকেই। কেউ কেউ মনে করছেন, খুব শীঘ্রই জাতীয় পার্টির চলমান ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটবে। রওশন-আনিস-বাবলু যেমন জাতীয় পার্টির বিভক্তি চান না, তেমনি চান না রুহুল আমিন হাওলাদার, জিএম কাদেরও। এরশাদের প্রতি আনুগত্য সবার। যারা সমঝোতায় সংসদ সদস্য হচ্ছেন তারাও যেমন এরশাদের প্রতি আনুগত্য। যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করছেন তারা এরশাদের মাঠের যোদ্ধা। মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, জাতীয় পার্টি একটি বড় দল। বহু নেতৃত্বের সমন্বয়ে এ দলের ব্যাপকতা। এখানে মত-পার্থক্য কিছু থাকলেও চূড়ান্ত বিবেচনায় পার্টির চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত সব নেতা মেনে নেবেন। এদিকে এরশাদ দুই কূল রক্ষা করে চলেছেন এমন বক্তব্য নেতা-কর্মীরা বললেও মনোনয়ন প্রত্যাহার করার পরও তা বহাল থাকায় এবং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এরশাদ নির্বাচিত হলেও তিনি শপথ নেবেন না বলে জানিয়েছেন