অভিযোগে বলা হয়, ওই নারী কুটনীতিককে সাধারণ অপরাধী এবং সন্ত্রাসীদের মতো বিবস্ত্র করেও দেহ তল্লাশি করেছে পুলিশ। এমনকি তাকে আটকের পর মাদকসেবনের দায়ে আটককৃতদের সাথে একত্রে রাখা হয়েছিল। দিল্লি একে ‘যা খুশি তা করা’ উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ভারত সরকার বলেছে, দেবযানীকে অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়ে ভারতে পাঠিয়ে না দেয়া পর্যন্ত দিল্লি তার অবস্থান বদলাবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপের অংশ হিসেবে গতকাল মঙ্গলবার দিল্লিস্থ মার্কিন দূতাবাসের সামনে থেকে নিরাপত্তা ব্যারিকেড বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হয়। মার্কিন দূতাবাসকে ভারত আর সর্বোচ্চ ক্যাটাগরির নিরাপত্তা দেবে না। এখন থেকে সেখানে শুধু পুলিশ পিকেট থাকবে। নয়াদিল্লির পুলিশ দুটো ট্রাক এবং বুলডোজার দিয়ে মার্কিন দূতাবাসের সামনের কংক্রিট বেষ্টনী ভেঙে ফেলে। দূতাবাসের বাইরের রাস্তায় গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণের জন্য এ বেষ্টনী ব্যবহার করা হতো। এ ব্যাপারে মার্কিন দূতাবাসের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
নিরাপত্তা দূর্বল করা ছাড়াও প্রত্যাহার করা হচ্ছে মার্কিন কূটনীতিবিদদের এয়ারপোর্টের পাস। এখানেই শেষ নয়, ভারতে অবস্থানকারী সকল মার্কিন কূটনীতিবিদদের পরিচয় পত্র জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে দিল্লি। কনস্যুলেটদের পরিবারকেও দেয়া হয়েছে একই নির্দেশ। বিরোধ এতটাই তুঙ্গে পৌঁছেছে যে মার্কিন কংগ্রেসের এক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে প্রস্তাবিত বৈঠকও বাতিল করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার সিন্ধে ও কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধী।
উল্লেখ্য, দেবযানীর বিরুদ্ধে জাল ভিসার সাহায্যে সঙ্গীতা রিচার্ড নামে এক ভারতীয় পরিচারিকাকে আমেরিকা নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ তুলেছে মার্কিন প্রশাসন। গত বৃহস্পতিবার সকালে মেয়েকে স্কুলে দিয়ে যাওয়ার পথে তাকে গ্রেফতার করে নিউইয়র্ক পুলিশ। সেদিনই তার জামাকাপড় খুলে তল্লাশি চালানো হয়। পরে তাকে আড়াই লাখ মার্কিন ডলারের (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় দুই কোটি) বিনিময়ে জামিন দেয়া হয়। একজন নারী কূটনীতিককে এভাবে হেনস্থা করাকে ‘বর্বরোচিত’ বলেছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন। কিন্তু মার্কিন স্বরাষ্ট্র দফতর শনিবার জানায়, কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে ভিয়েনা চুক্তিতে যা বলা রয়েছে, তার আওতায় দেবযানী পড়েন না।
এদিকে, দেবযানীর সাথে অগ্রহণযোগ্য আচরণের অভিযোগ তুলে ভারত সফররত মার্কিন কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক বাতিল করেছেন দেশটির রাজনীতিবিদরা। বিজেপি’র প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী নরেন্দ্র মোদী মার্কিন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের নারী কূটনীতিকের সঙ্গে অবমাননাকর আচরণের প্রতিবাদে আমাদের গোটা জাতির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে আমি মার্কিন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক বাতিল করেছি।’
ভারতের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের স্পিকার মীরা কুমারও মার্কিন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে অনুষ্ঠেয় বৈঠক বাতিল করেন বলে তার কার্যালয় জানায়। এর আগে কূটনীতিককে গ্রেফতারের প্রতিবাদে গত সপ্তাহেই ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব করে ভারত। সেসময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আচরণে ভারত ‘ মর্মাহত’।