ঢাকা সেনানিবাসে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ‘আটক’ জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এ জন্য গতকাল মঙ্গলবার এরশাদ, ছেলে এরিখ এরশাদ, তাঁর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মেজর (অব.) খালেদ আকতার ও ব্যক্তিগত সহকারী আবদুল ওয়াহাবের পাসপোর্ট সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা সংগ্রহ করেছে বলে জাপার একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
জাপার উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্র জানায়, এরশাদকে তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে আজ-কালের মধ্যে সিঙ্গাপুর অথবা মালয়েশিয়া পাঠানো হতে পারে। তিনি পাঁচ দিন ধরে সিএমএইচে আছেন।
একতরফা নির্বাচন বর্জন, দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়ার পর নানামুখী চাপে পড়েন এরশাদ। এরপর তিনি গত বৃহস্পতিবার দুপুরে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়ে জাপার দলীয় প্রতীক ‘লাঙ্গল’ কাউকে বরাদ্দ না দিতে অনুরোধ করেন। ওই দিন মধ্যরাতে র্যাবের একটি দল এরশাদকে তাঁর বারিধারার বাসা থেকে তুলে সিএমএইচে নিয়ে যায়। তখন র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, এরশাদ অসুস্থ, তাই হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।
এর পরদিন এরশাদ হাসপাতাল থেকে তাঁর বিশেষ উপদেষ্টা ববি হাজ্জাজের মাধ্যমে গণমাধ্যমকে জানান, তিনি অসুস্থ নন, তাঁকে গ্রেপ্তার করার জন্য সিএমএইচে আটকে রাখা হয়েছে।
এরশাদের ভাই ও জাপার সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জি এম কাদেরও গত শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, এরশাদ সুস্থ আছেন। তবে তাঁকে আরও দুই দিন হাসপাতালে রাখা হবে।
এরপর শনিবার ববি হাজ্জাজ সংবাদ সম্মেলন করে জানান, এরশাদ নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তে অনড় আছেন। ওই সংবাদ সম্মেলনের পর হাজ্জাজকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী একটি বাহিনীর কার্যালয়ে ডেকে নেওয়া হয়। পরে গভীর রাতে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর সোমবার তিনি দেশ ছেড়ে যুক্তরাজ্য চলে যান।
এ বিষয়ে ববি হাজ্জাজ গতকাল তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, তিনি চাপের মুখে বিদেশে যেতে বাধ্য হয়েছেন। তাঁকে ২০ ঘণ্টার বেশি সময় আটকে রেখে তাঁর সব বিবৃতি প্রত্যাহার করে আড়ালে যেতে বলা হয়েছে। অন্যথায় সরকারের রোষানলের মুখোমুখি হওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, এরশাদ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন করলেও দৃশ্যমান কোনো কারণ ছাড়াই তা গ্রহণ করা হয়নি। এ নির্বাচন প্রহসনের।
আইনি নোটিশ ও পরে প্রত্যাহার: এরশাদকে বেআইনিভাবে আটকাবস্থা থেকে মুক্তি দিতে গতকাল ডাকযোগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব ও উপসচিব (পুলিশ) বরাবর একটি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়। জাপার সাংগঠনিক সম্পাদক মো. বখতিয়ার উদ্দিন খানের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রফিক-উল হক এই নোটিশ পাঠান।
গতকাল বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে বখতিয়ার উদ্দিন খান এ কথা জানান। তিনি নোটিশের অনুলিপিও সাংবাদিকদের দেন। এরপর রাত আটটায় যোগাযোগ করা হলে রফিক-উল হক প্রথম আলোকে বলেন, ভুল তথ্যের ভিত্তিতে নোটিশটি পাঠানো হয়েছিল। পরে তা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
বিক্ষোভে পুলিশের বাধা: এরশাদের মুক্তির দাবিতে জাপার ঘোষিত বিক্ষোভ সমাবেশ গতকাল ঢাকায় পুলিশের বাধার মুখে হতে পারেনি। রাজধানীর কাকরাইলে বেলা তিনটায় জাপার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ কর্মসূচি দেওয়া হয়েছিল। এর আগেই বিপুলসংখ্যক পুলিশ কার্যালয়ের সামনে অবস্থা নেয়। পুলিশ নেতা-কর্মীদের রাস্তায় দাঁড়াতেই দেয়নি।
একইভাবে বনানীতে জাপার চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনেও পুলিশ অবস্থান নিয়ে নেতা-কর্মীদের ভেতরে ঢুকতে বাধা দেয়।
জাপার সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ গতকাল বেলা তিনটায় কাকরাইলের কার্যালয়ে আসেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এরশাদের মুক্তির দাবিতে কঠিন কর্মসূচি আসছে। এ সময় রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান সেখানে উপস্থিত হয়ে কাজী ফিরোজকে জানান যে সভা-সমাবেশের অনুমতি না থাকায় এই এলাকায় কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হবে না।