সাতক্ষীরায় ২ জামায়াত কর্মী নিহত, কাল সকাল-সন্ধ্যা হরতাল

সাতক্ষীরায় ২ জামায়াত কর্মী নিহত, কাল সকাল-সন্ধ্যা হরতাল

সাতক্ষীরার আগরদাঁড়িতে আসামী ধরতে গেলে পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের সাথে জামায়াত-শিবিরের সংঘর্ষের সময় পুলিশের গুলিতে জাহাঙ্গীর হোসেন(৪০) নামের এক জামায়াত কর্মী নিহত হয়েছে। এসময় অসুস্থ হয়ে (হার্ড এটাক করে) সাহেব বাবু (৪৩) নামের আরও এক জামায়াত কর্মীর মৃত্যু হয়েছে।

 

অপর দিকে দেবহাটার সকিপুরে আসামী ধরতে গেলে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে জামায়াত কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। সেখানে পুলিশের গুলিতে জামায়াত কর্মী রিয়াজুল ও আব্দুর রউফ গুলি বদ্ধি হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। তাদেরকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষের সময় সেখান থেকে শফিকুল ইসলাম, রবিউল, রেজাউল ও আহসান উল্যা সহ ৬ জামায়াত-শিবিরের কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অপর দিকে অভিযান চালিয়ে কলারোয়া থেকে কৃষক দলের সভাপতি আশরাফ হোসেনসহ বিএনপির ৩ কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এদিকে দুই জামায়াত নেতাকে গুলি করে হত্যা ও জেলা জামায়াতের আমির খালেক মাওলানার বাড়ী ভাংচুরের প্রতিবাদে মঙ্গলবার জেলা ব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহবান করেছে সাতক্ষীরা জেলা জামায়াত। দুপুরে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী নুরুল হুদা স্বাক্ষরিত জেলা জামায়াতের পক্ষ থেকে এক প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সাংবাদিকদের এ হরতাল কর্মসূচী জানানো হয়।

সাতক্ষীরা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী জানান, জামায়াত-শিবিরের সহিংসতার ঘটনায় রোববার মধ্যরাত থেকে ৪টি দলে ভাগ হয়ে পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব অভিযানে নামে। তারা এক যোগে সাতক্ষীরার তালা, কলারোয়া উপজেলা ও সাতক্ষীরার সদর উপজেরার আগরদাঁড়ী এবং দেবহাটার সখিপুর ও পারুলিয়া এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযান চলাকালে সীমান্তবর্তী গ্রাম আগরদাঁড়ি এলাকায় পুলিশ পৌছালে এই খবরে জামায়াত-শিবির গ্রামে মাইকিং করে প্রতিহত করার চষ্টো করে। তারা রাস্তায় গাছের গুড়ি ফেলে সড়ক অবরুদ্ধ করে ব্যারিকেট দিয়ে রাখে। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। জামায়াত-শিবির পুলিশকে লক্ষ করে ককটেল, পেট্রোল বোমা ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে মিছিল করতে থাকে।

এসময় আইন-শৃংখলা বাহিনী নিজেদেরকে রক্ষা করতে তাদের উপর গুলি ছোড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন জামায়াত কর্মী জাহাঙ্গীর হোসেন(৪০)।

অপর দিকে ওই রাতেই দেবহাটার সখিপুর ও পারুলিয়া এলাকায় সাতক্ষীরা বিজিবি’র৩৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃকর্নেল ইমান হাসান, খুলনা র্যাব-৬ এর অধিনায়ক কর্নেল সুমনের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালিত হয়। সেখানে অভিযান চলাকালে জামায়াত কর্মীরা তাদের উপরে চারিদিক দিয়ে হামলা করে গুলি চালায়। এসময় পাল্টা গুলি ছুড়লে আইন-শৃংখলা বাহিনীর গুলিতে জামায়াত কর্মী রিয়াজুল ও আব্দুর রউফ সহ বেশ কয়েক জন গুলিবদ্ধি হয়। গুলি বদ্ধি রিয়াজুল পারুলিয়া গ্রামের মনোয়ার হোসেনে ও গুলি বদ্ধি আব্দুর রউফ একই গ্রামের মাজেদ মোড়লের ছেলে। পরে এলাকাবাসী তাদেরকে উদ্ধার করে সকাল ৮ টার দিকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। সংঘর্ষের সময় সেখান থেকে জামায়াত-শিবিরের ৪ কর্মীকে আটক করে পুলিশ। অপদিকে অভিযান চালিয়ে কলারোয়া থেকে উপজেলা কৃষক দলের সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফ আলীসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এদিকে সংর্ঘষের সময় কতজন মারা গিয়েছে জানতে চাইলে সাতড়্গীরা পুলিশ সুপার চৌধুরী মুনঞ্জুরুল কবির জানান, আভিযান পরিচালনা কালে জামায়াত আইন-শৃংখলা বাহিনীর উপরে হামলা, ককটেল, প্রেট্রল বোমা ছুড়ে হামলা চালায়। এসময় তাদের সাথে দফায় দফায় সংর্ঘষ হয়। এই সংর্ঘষে ৫ জন নিহত হওয়ার খবর শুনেছেন বলে দাবী করেন। তবে তিনি মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত নন বলে জানান।

সখিপুরে অভিযানে নেতৃত্বে থাকা সাতক্ষীরা বিজিবি’র ৩৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্নেল ইমান হাসান জানান, অভিযানের সময় জামায়াত-শিবির তাদের লক্ষ করে গুলি চালায়। এসময় আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে পাল্টা গুলি চালালে ৩/৪ জন গুলি বদ্ধি হয়ে পড়ে ছিল। তবে আহতদের মৃতু্য হয়েছে কিনা সেটা তিনি নিশ্চিত নন।

এব্যাপারে জেলা জামায়াতের প্রচার সম্পাদক আজিজুর রহমান জানান, রাতে পুলিশ জেলা জামায়াতের আমির আব্দুল খালেক মাওলানা ধরতে আগঁরদাড়ী ও বৈকারী এলাকায় আসলে এলাকাবাসী ও জামায়াত কর্মীরা বাঁধা প্রদান করে। এসময় পুলিশ আমির সাহেবকে না পেয়ে বুলডেজার দিয়ে তার বাড়ী বাংচুর করে ও প্রাইভেটকারে গুলি চালায়। এর এক পর্যায়ে উভায়ের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া সংর্ঘষ বাধে। এতে পুলিশের গুলিতে জামায়াত কর্মী জাহাঙ্গীর হোসেন নিহত হয়। এসময় পুলিশের ধাওয়ায় অপর জামায়াত কর্মী সাহেব বাবু হার্ডএটাকএর স্বীকার হন।

পরে সকাল ৮ টার দিকে পার্শবর্তী গদাঘাটা গ্রামের নিজ বাড়ীতে অসুস্থ হয়ে তার মৃত্যু হয়। তার পিতার নাম ইলিয়াস সরদার।

 

জেলা সংবাদ বাংলাদেশ রাজনীতি