এবার এক ব্যতিক্রমী বিজয় দিবস উদযাপন করল রাজধানীবাসী। আজ পতাকা নিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়ল বাঙ্গালী জাতি। বিজয়ের দিনে আজ সোমবার বাঙালি জাতি অর্জন করল বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানব পতাকা তৈরির খ্যাতি। ফলে ‘৭১-এর পর আবারও ২০১৩ সালে এসে পাকিস্তানকে হারিয়ে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে সবচেয়ে বড় মানব পতাকা তৈরির রেকর্ড করল সোনার বাংলা। আজ সোমবার দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটে শের-ই-বাংলা নগরে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে এ মানব পতাকা তৈরি করা হয়।
এর আগে গত বছর পাকিস্তানের লাহোর জাতীয় হকি স্টেডিয়ামে পাঞ্জাব ইয়ুথ ফেস্টিভালে ২৪ হাজার ২০০ তরুণ-তরুণীর অংশগ্রহণে মানব পতাকা তৈরি করা হয়। এবার ১৬ ডিসেম্বর শেরেবাংলা নগরের জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ৩০ হাজারের বেশি মানুষের অংশগ্রহণে তৈরি হবে সবচেয়ে বড় মানব পতাকা।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্যোগে রবির সহযোগিতায় ‘লাল সবুজের বিশ্বজয়’ শীর্ষক সবচেয়ে বড় মানব পতাকা তৈরির বিশ্ব রেকর্ডের অনুষ্ঠানই বিজয় দিবসে রাজধানীর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ।
খুবই ভোর থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য ও রবি’র সদস্যরা প্যারেড গ্রাউন্ডে প্রবেশ করে। অবশ্য সকাল পৌনে আটটা পর্যন্ত ভেতরে কোনও সাধারণ জনগণকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। পৌনে আটটার দিকে সাধারণ দর্শকদের প্রবেশ কতে দেওয়া হলেও সেটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ৯টা ১০ মিনিটের মধ্যে সবাইকে প্যারেড গ্রাউন্ড থেকে বের করে দেওয় হয়।
বেলা ৯টার দিকে রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল থেকে শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত বাসে প্যারেড গ্রাউন্ডে প্রবেশ করতে থাকে। বেলা ১২টা পর্যন্ত চলে পতাকা তৈরির প্রস্তুতি।এরপর মানব পতাকার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার জন্য সবাইকে নির্ধারিত স্থানে পাঠানো হয়। সবার হাতে ছিল ভিন্ন প্লাকার্ড।
মানব পতাকা তৈরির জন্য প্যারেড গ্রাউন্ডে নির্দিষ্ট মাপের মধ্যে সাদা চুন দিয়ে ত্রিশ হাজার ছোট ছোট ঘর করে দাগ দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক ঘরে একজন করে নির্দিষ্ট রংয়ের প্লাকার্ড নিয়ে দাঁড়ায়।
এরপর এ কার্যক্রমের সমন্বয়ক নির্দেশ দেওয়ার পর সবাই একসঙ্গে তাদের হাতে থাকা প্লাকার্ডটি মাথার ওপর তুলে ধরবে। প্রায় পাঁচ মিনিট প্লাকার্ডটি মাথার ওপর ধরে রাখতে হয়। উপর থেকে যখন নিচের দিকে দেখা হয় তখন এগুলো বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার রূপ নেয়। পাঁচ মিনিট পরেই সবাইকে যথাযথ স্থানে প্লাকার্ড জমা দিয়ে প্যারেড গ্রাউন্ড ছাড়তে বলা হয়।
এ মানব পতাকা তৈরি করতে মোট ৩০ হাজার মানুষ ব্যবহার করা হয়। যার মধ্যে শুধু সশস্ত্র বাহিনীর ৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবী ছিল। যারা মূলত পতাকার লাল অংশটুকুর রূপ দেয়। আর বাকি ২২ হাজার সদস্য রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষদের দিয়ে পূরণ করা হয়। যারা মূলত পতাকার সবুজ অংশের রূপ দেয়।
মানব পতাকা তৈরির পুরো বিষয়টি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের একজন পর্যবেক্ষক প্যারেড গ্রাউন্ডে উপস্থিত থেকে দেখবেন এবং পতাকা তৈরি শেষে প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র ও ছবি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড কমিটির কাছে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য পাঠাবেন। উপর থেকে মানব পতাকার ছবি তুলতে ব্যবহার করা হয় হেলিকপ্টার।
গিনেস ক্রাইটেরিয়া অনুযায়ী মানুষের অংশগ্রহণে এ পতাকা তৈরি হচ্ছে বলে একে ‘মানব পতাকা’ বলা হচ্ছে। অনুষ্ঠানে মানব পতাকা তৈরিতে অংশগ্রহণকারীরা তাদের মাথার ওপর প্লাকার্ড তুলে এ পতাকা তৈরি করে। এ ছাড়া জাতীয় পতাকা বিধি মেনেই এ পতাকা তৈরি করা হয়। পতাকার রং নির্বাচন করেছেন শিল্পী মোস্তফা মনোয়ার।
জানা যায়, প্রবেশ গেটে অংশগ্রহণকারীদের টিকিটে থাকা বার কোড স্ক্যান করে মোট অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা নির্ধারিত হবে।