নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তে এরশাদ অনড় থাকায় তাঁর স্ত্রী রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির (জাপা) একাংশকে নির্বাচনে রাখার আয়োজন সরকার প্রায় সম্পন্ন করেছে। এমনকি এই অংশটিকে দলীয় প্রতীক লাঙ্গল বরাদ্দ দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।সরকারের এমন তৎপরতার খবর প্রচার হওয়ায় তড়িঘড়ি করে গতকাল বেলা ১২টায় সিইসিকে চিঠি দেন জাপার চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। চিঠিতে তিনি ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে জাপার নির্বাচনী প্রতীক ‘লাঙ্গল’ কাউকে বরাদ্দ না দিতে কমিশনকে অনুরোধ করেন। চিঠিতে বলেন, ‘জাতীয় পার্টি একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসেবে “লাঙ্গল” প্রতীকপ্রাপ্ত। আমাদের সিদ্ধান্ত, নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল মোতাবেক জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবে। ইতিমধ্যে দলের দেওয়া সব মনোনয়নপত্র বাতিল করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।’
কমিশন সচিবালয় সূত্র জানায়, জাপার যেসব প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করবেন না, তাঁদের লাঙ্গল প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
নির্বাচন কমিশন মনে করে, নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হলে প্রার্থীদের ব্যক্তিগতভাবে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে হবে। কারণ দলীয় প্রধানের চিঠির ভিত্তিতে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার হয়ে যাবে—এমন সুস্পষ্ট বিধান গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সুস্পষ্ট আইন না থাকায় এখন দেখতে হবে, কমিশন এর কী ব্যাখ্যা দেয় এবং সেটাই মেনে নিতে হবে। তবে এতে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা আদালতে যেতে পারবেন।
নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ বলেন, ‘জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের কেউ নির্বাচন করতে চাইলে তাঁকে দলীয় প্রতীক দেওয়ার ক্ষেত্রে আইনগত কোনো সমস্যা আছে বলে মনে করি না। কারণ, দল তাঁকে আগেই মনোনয়ন দিয়েছে।’
এদিকে এরশাদ ও তাঁর ভাই বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদেরসহ দলের অনেকে ইতিমধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন। তবে সরকারে থাকা জাপার অপর ছয় মন্ত্রী-উপদেষ্টা—রওশন এরশাদ, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, মজিবুল হক চুন্নু ও সালমা ইসলাম এবং আরও বেশ কয়েকজন নেতা গতকাল পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি।
উভয় দলের সূত্রগুলো জানায়, এরই মধ্যে গত বুধবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন গণভবনে আসন ভাগাভাগির নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জাপার সভাপতিমণ্ডলীর দুই সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও জিয়াউদ্দিন আহমদে বাবলু। ওই বৈঠকে জাপাকে ৫৯টি আসন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। গতরাতে রওশন এরশাদের নেতৃত্বে আনিস-বাবুল ও প্রতিমন্ত্রী সালমা ইসলামসহ জাপার প্রতিনিধি দল গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ নিয়ে আবার বৈঠক করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কতজন রওশনের সঙ্গে থাকেন, তা নিয়ে সংশয় থাকায় জাপাকে ৪২টি আসন দেওয়ার ব্যাপারে গতরাতের বৈঠকে আলোচনা হয় বলে জানা গেছে। এর আগে গতকাল সকাল থেকেই রওশনের বাসায় কাজী ফিরোজ রশীদসহ জাপার বেশ কিছু নেতা কয়েক দফায় বৈঠক করেন।
অবশ্য রওশন এরশাদের নেতৃত্বে আনিসুল ইসলাম, জিয়াউদ্দিন বাবলুসহ দলের একটি অংশ যে নির্বাচনে অংশ নিতে সক্রিয় আছেন, তা গত কিছুদিন ধরেই রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত হচ্ছিল।
অবশ্য জাপার মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার গত রাতে দাবি করেন, দলের কেউ এরশাদের নির্দেশের বাইরে যাবেন বলে তিনি মনে করেন না। তবে নির্দেশ অমান্য করে কারা কতটুকু যান, তা দেখার জন্য মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন আজ শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।