বাংলাদেশের নির্বাচন অনিশ্চিত : গণশক্তি সম্পাদকীয়

বাংলাদেশের নির্বাচন অনিশ্চিত : গণশক্তি সম্পাদকীয়

যথাসময়ে বাংলাদেশের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে ভারতের কোলকাতা থেকে প্রকাশিত গণশক্তি। ‘কোন পথে বাংলাদেশ?’ শিরোনামে আজ এক সম্পাদকীয়তে পত্রিকাটি এই সংশয়ের কথা জানায়।
পত্রিকাটির সম্পাদকীয় নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো-
বাংলাদেশে দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচন শেষ পর্যন্ত কি হবে? গত একমাসেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে যেভাবে রাজনৈতিক হানাহানি বেড়ে চলেছে তাতেই এই প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে। বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে আমাদেরও প্রশ্ন, দক্ষিণ এশিয়ার ১৬ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত এই দেশটি তার অগ্রগতির যাত্রায় আগামী দিনগুলিতে কোন লক্ষ্যপথ অনুসরণ করবে? ২০০১-২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামাতে ইসলামী জোটের আমলে বাংলাদেশ যে লক্ষ্যে চলেছিল ভোটের পর কি সে-দিকে ফিরে যাবে? নাকি ২০০৮-২০১৩ আওয়ামি লিগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের আমলে যে পথে দেশ চলছে আগামী দিনেও তা অব্যাহত থাকবে? এই প্রশ্ন প্রতিবেশী দেশ হিসেবে শুধু আমাদের কাছে নয়, বাংলাদেশের মানুষের মনেও রয়েছে। একটু পেছনে ফিরে তাকালে দেখা যাবে, ২০০১-২০০৬ বিএনপি-জামাতে ইসলামী শাসনে বাংলাদেশে ধর্মীয় মৌলবাদী সন্ত্রাসবাদ দ্রুত মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, অতীতে যা কখনো চোখে পড়েনি।
বাংলাদেশে ধর্মীয় মৌলবাদী জঙ্গীদের প্রতিনিধি হচ্ছে জামাতে ইসলামী এবং বিএনপি জোট। ২০০১ থেকে ২০০৬ বিএনপি-জামাতের জোটশাসনে এরা সবচেয়ে বেশি পুষ্ট হয়েছে এবং গোটা দেশজুড়ে সাংগঠনিক জাল বিস্তার করেছে। স্থানীয় জনসমর্থন ছাড়াও এই শক্তি বিদেশী অর্থে পুষ্ট। সৌদি আরবের ইসলামী চিন্তাবিদ ড. ইরফান আলাভির তথ্য অনুসারে ২০০৯ সালে সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি মুসলিম প্রধান দেশগুলিতে ধর্মীয় কর্মকাণ্ড ও প্রচারণায় ৫০ বিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ করেছে। এই অর্থ ব্যয় হবে জামাতে ইসলামী এবং মুসলিম ব্রাদারহুডের মাধ্যমে। তারা বিভিন্ন ব্যবসা বাণিজ্যে এই অর্থের একটা বড় অংশও বিনিয়োগ করে। বাংলাদেশের বিশিষ্ট অধ্যাপক আবুল বারকাতের গবেষণা থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে বিভিন্ন শিল্প-বাণিজ্য ব্যবসা থেকে জামাতে ইসলামী দলের প্রতিবছর নিট মুনাফা ২ হাজার কোটি টাকা। এই অর্থের ১৫-২০ ভাগ তারা ব্যয় করে তাদের সাংগঠনিক জাল বিছানোর কাজে।
সহজেই ধারণা করা যেতে পারে এদের শক্তি কতটা। প্রতি সপ্তাহে তিন থেকে চারদিন করে হরতাল, অবরোধের ডাক দিয়ে এই শক্তি দেশকে সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক দিক থেকে অচল করে দেবার পরিকল্পনা নিয়েছে। এদের কার্যকলাপ কঠোরভাবে দমন করার পরিবর্তে সরকারের ব্যবস্থাপনায় শিথিলতাই চোখে পড়ছে বেশি করে। কেউ কেউ বলতে শুরু করেছেন, এর পেছনে বিদেশী শক্তির কমবেশি চাপ হয়তো রয়েছে। ইতিমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত রাষ্ট্রগুলির প্রতিনিধিরা ঢাকায় এসে উভয়পরে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে গেছেন। যদিও বলা হচ্ছে, গণতান্ত্রিক পথে বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন চান তারা কিন্তু এদের ঘোরাঘুরির পর কোনো কোনো বিষয়ে সরকারের দোলাচল ভূমিকা ল্য করা যাচ্ছে। ভারতের বিদেশসচিবও ঢাকায় গিয়ে উভয়পক্ষের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলে এসেছেন। কিন্তু তাতে কোনো ফল ফলবে কি? সমগ্র ঘটনা বিশ্লেষণ করলে একটি প্রশ্নই সামনে চলে আসছে তাহলো বাংলাদেশে শেষ পর্যন্ত কি নির্বাচন হবে? একের পর এক হরতাল, হরতালের নামে মানুষকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা, যানবাহনে আগুন, রেলে আগুন- সব কিছু ঘটনা বাংলাদেশকে কি অতীতে অশান্ত দিনগুলির দিকে নিয়ে যাবে? ডিসেম্বর মাস বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের বিজয়ের মাস। যে লক্ষ্যে বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়েছে, যে লক্ষ্যে বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীন অস্তিত্ব বিশ্বের দরবারে স্বীকৃতি পেয়েছে কিছু ধর্মীয় শক্তি তার উপর কালিমা ছেটাতে উদ্যত। বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ কি এটা বরদাস্ত করবেন?
অন্যান্য আন্তর্জাতিক