রাষ্ট্রপতি-রুহুল আমিন বৈঠক, আজ মন্ত্রিসভায় যাচ্ছেন না জাপা মন্ত্রীরা
নির্বাচনকালীন সরকারে থাকা জাতীয় পার্টির (জাপা) মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের পদত্যাগপত্র ডাকযোগে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার। গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় তিনি সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যোগাযোগ করেও তার সময়সূচি না পাওয়ায় ডাকযোগে পদত্যাগপত্র পাঠানো হয়েছে। এরপর রাত সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে বৈঠক করেন রুহুল আমিন। বঙ্গভবন থেকে বেরি হয়ে তিনি সাংবাদিকদের জানান, আজ সোমবার অনুষ্ঠেয় মন্ত্রিসভার বৈঠকেও যাবেন না জাপার মন্ত্রী-উপদেষ্টারা। অন্যদিকে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য জিএম কাদের সাংবাদিকদের গতকাল দুপুরে বলেছেন, ‘আজ রবিবার থেকে আমরা আর নির্বাচনকালীন সরকারে নেই।’
গতকাল দুপুরে রুহুল আমিন হাওলাদার সাংবাদিকদের জানান, দলের চার মন্ত্রী, দুই প্রতিমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর এক উপদেষ্টা-সবার পদত্যাগপত্র দলীয় চেয়ারম্যানের হাতে এসে পৌঁছেছে। রবিবার প্রধানমন্ত্রীর হাতে তারা পদত্যাগত্র দিতে চেয়েছেন। তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যোগাযোগ করেও সময়সূচি পাওয়া যায়নি। এজন্য ডাকযোগে পদত্যাগপত্র পাঠানোর সিদ্ধান্ হয়। দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে জাপা চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের বারিধারার বাসভবনে সাংবাদিকদের কাছে তিনি বলেন, পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার উদ্দেশে আজ একাধিকবার আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। কিন্তু সেখান থেকে কোনো সাড়া পাইনি।
সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত এরশাদের সঙ্গে বৈঠক করেন সফররত জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো। বৈঠক শেষে দলের পক্ষ থেকে সংবাদ ব্রিফিং করেন জিএম কাদের ও রুহুল আমিন হাওলাদার। বিফ্রিং শেষে তারা দু’জন বলেন ‘পদত্যাগপত্র দেয়ার জন্য আমরা এখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যাবো।’ কে কে পদত্যাগ করছেন, এই বিষয়ে জানতে চাইলে রহুল আমিন তার হাতে থাকা পদত্যাগের ফাইলটি তুলে সাংবাদিকদের দেখান। কিন্তু কোনো উত্তর দেননি। এসময় তার সঙ্গে থাকা জিএম কাদের বলেছেন, ‘আজ থেকে আমরা সর্বদলীয় সরকার থেকে আমাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে নিচ্ছি।’
দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জাপা চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক মুখপাত্র কাজী ফিরোজ রশীদ গতকাল দুপুর সোয়া ১টার দিকে এরশাদের বাসা থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের জানান, এরশাদের স্ত্রী এবং স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী রওশন এরশাদ, পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও নারী উন্নয়নবিষয়ক উপদেষ্টা জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর পদত্যাগপত্রও দলের চেয়ারম্যানের হাতে এসে পৌঁছেছে। উল্লেখ্য, নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভায় থাকা জাপার অন্য মন্ত্রীরা হলেন- বাণিজ্যমন্ত্রী জিএম কাদের, বিমানমন্ত্রী রুহুল আমিন হাওলাদার, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সালমা ইসলাম।
বিকেল পৌণে চারটায় জাপা মহাসচিব ফের এরশাদের বাসায় আসলে তখন সাংবাদিকদের বলেন ‘পদত্যাগপত্র চলে যাচ্ছে’। পাঠিয়েছেন কিনা, পাঠালে কোন মাধ্যমে কখন পাঠালেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন ‘সময়-ই সব বলে দেবে।’ এসময় তার গাড়িতে কোনো পতাকা ছিল না, তবে তার সঙ্গে পুলিশ প্রটেকশন ছিল। সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করেন ‘আপনি কি এখনও মন্ত্রী আছেন?’ জবাবে তিনি বলেন ‘না’। ‘তাহলে আপনার সঙ্গে পুলিশ প্রটেকশন কেন’-এমন প্রশ্নের জবাবে হাওলাদার বলেন ‘এত প্রশ্নের জবাব কীভাবে দেবো।’ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ফের এরশাদের বাসায় যান রুহুল আমিন হাওলাদার। সেখান থেকে যান বঙ্গভবনে। বঙ্গভবনে বৈঠক শেষে তিনি আবার এরশাদের বাসায় যান।
এরশাদের বাড়ির সামনে আবারও নিরাপত্তা বৃদ্ধি
দুপুরে জাপা মন্ত্রীদের ডাকযোগে পদত্যাগপত্র পাঠানোর কথা বলার পর বিকেলে আবারও এরশাদের বাড়ির সামনে নিরাপত্তা জোরদার করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শনিবার র্যাব-পুলিশের সংখ্যা কমিয়ে নেয়া হলেও গতকাল বিকেলে পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হয়। এরশাদের বাড়ির সামনের সড়কের দুই মাথায় পুলিশ দুটি চেকপোস্টও স্থাপন করেছে। অপরিচিতদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশি করা হচ্ছে। রাত সাড়ে ১০টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জানা গেছে, জাপা নেতা-কর্মীদের বেশিরভাগকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ।