শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকলে আমরা নির্বাচন করবো না। তিনি প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়লে বর্তমান সমস্যার সমাধান হতে পারে। তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকলে নির্বাচনে কারচুপি হতে পারে। নির্বাচন গতবারের মতো ক্র্যাকড হতে পারে। তাছাড়া, বিএনপি অংশ না নিলে নির্বাচনে যাবে না জাতীয় পার্টি। গতকাল বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি বলেন, এখন সঙ্কট সমাধানের একটি পথ বের করতে হবে। বিএনপি নির্বাচনে না এলে তার দল নির্বাচন করবে না। তার এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত এবং তা নিয়ে কোন বিভ্রান্তি থাকা উচিত নয়। তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার থেকে তার দলের মন্ত্রীরা পদত্যাগ করেছেন। তাকে প্রশ্ন করা হয়, সরকার দলের নেতারা এখনও কেন বলছেন যে, জাতীয় পার্টি নির্বাচন করবে? তিনি কি তাহলে আবারও সিদ্ধান্ত বদলাতে পারেন? জবাবে এরশাদ বলেন, চার বছর ধরে বলে আসছি আমি এককভাবে নির্বাচন করবো। বলেছি, সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের জন্য। তাছাড়া, নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। এমন নির্বাচনে আমি অংশগ্রহণ করবো না। নির্বাচন করার পরিবেশও নেই। তার কাছে বিবিসি জানতে চায়, আপনি কিভাবে ধারণা করলেন যে, বিএনপি নির্বাচনে আসবে? বিএনপি যে ইস্যু নিয়ে আন্দোলন করছে এতদিন ধরে সেই ইস্যু তো তাদের পূরণ হচ্ছিল না, এখনও হচ্ছে না। তারা তো আসবে না আপনি তো বুঝেইছিলেন নাকি? জবাবে এরশাদ বলেন, আন্দাজ করেছিলাম। বিএনপি ভিতরে ভিতরে কিন্তু আসতে চাইছিল। তাদের অনেক প্রার্থী গ্রামেগঞ্জে প্রচারণাও চালাচ্ছিল। তাই মনে হয়েছিল বিএনপি শেষ মুহূর্তে চলে আসতে পারে। সে জন্য আমি নির্বাচনে গিয়েছিলাম যে তারা এলে নির্বাচন হবে, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। সরকার পরিবর্তনের একটি সুযোগ সৃষ্টি হবে। বিবিসি জানতে চায়, পত্রপত্রিকায় খবর বেরিয়েছে যে, আপনার সঙ্গে যে সমস্ত শর্ত নিয়ে সরকারের কথাবার্তা হয়েছিল সেগুলো সরকার মানে নি বলেই আপনি সিদ্ধান্ত বদলেছেন। জবাবে এরশাদ বলেন, আমার সঙ্গে সরকারের কোন শর্ত ছিল না। আমি নির্বাচন করবো এককভাবে- সেটাই আমার প্রতিশ্রুতি ছিল। আমি সেই প্রতিশ্রুতিতে এখনও অটল আছি। বিবিসি এ পর্যায়ে জানতে চায়- অর্থাৎ আপনার সিদ্ধান্ত হচ্ছে বিএনপি নির্বাচনে আসবে না সুতরাং এ নির্বাচন আমি করবো না। তাইতো? জবাবে এরশাদ বলেন, সংসদে যারা যে সরকারের প্রতিনিধি আছে আশা করেছিলাম তারা সবাই নির্বাচনে আসবেন। তার মধ্যে একটা দল বিএনপি। তাদেরও ২৯-৩১টা সিট আছে। আশা করেছিলাম তারা আসবে। তারা বিরোধী দল। প্রধান বিরোধী দল। তারা তো এলোই না। তখন মনে হলো নির্বাচন করলে সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। অশান্তি বন্ধ হবে না। বিবিসি জানতে চায়- তো আপনি নির্বাচন করবেন না সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন? চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। তাহলে নির্বাচনকালীন যে মন্ত্রিসভা, সেখানে আপনার মন্ত্রীরা তো এখনও আছেন কেন? এরশাদ বলেন, না। মন্ত্রীরা পদত্যাগ করেছেন। ৭ জনেরই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। আমরা তা জমা দিতে গিয়েছি তা নেননি। গতকালও আমার মহাসচিব গিয়েছিলেন। তারা সেটি এক্সসেপ্ট করেন নি। আমরা সেটি পোস্টে পাঠিয়ে দেবো। বিবিসি জানতে চায় এখনও আপনারা পোস্ট করেননি? এরশাদ বলেন, পোস্ট করার চেষ্টা করেছি। শনিবার পোস্ট করার চেষ্টা করেছিলাম। গতকালও চেষ্টা করেছি। বিবিসি জানতে চায়- তাহলে কি মন্ত্রীরা যাচ্ছেন না অফিসে? এরশাদ বলেন, না। মন্ত্রীরা যাচ্ছেন না। বিবিসি পাল্টা প্রশ্ন করে- আপনি এখন কি চাইছেন? কিভাবে এই সমস্যার সমাধান হবে? আপনার ফর্মুলা কি? এরশাদ বলেন, আমি একটি কথা বলবো। এ নির্বাচন কখনও গ্রহণযোগ্য হবে না। শান্তি ফিরে আসবে না। আন্দোলন চলতে থাকবে। মানুষ মরতে থাকবে। মানুষ জ্বলে মরতে থাকবে। এভাবে নির্বাচন করা তো কোন মতেই সমীচীন হবে না। ক্ষমতায় থাকার জন্য মানুষের জীবন দিতে হবে এটা গ্রহণযোগ্য নয়। বিবিসি জানতে চায়- তাহলে কিভাবে সব দলকে নিয়ে নির্বাচন হবে? আপনি কি বলছেন? এরশাদ বলেন, সেটা তো সরকারের ওপর নির্ভর করে। সরকার যদি একটু সময় পিছিয়ে দেয়। আমাদের সংবিধানের ১২৩ (খ) ধারায় আছে, সংসদ বাতিল হওয়ার তিন মাস পরে নির্বাচন হতে পারে। অর্থাৎ সংসদ যদি জানুয়ারি মাসে বাতিল হয় তাহলে ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল মাসে নির্বাচন হতে পারে। সেই ধারা যদি সরকার গ্রহণ করে…। তার কথা শেষ হওয়ার আগে বিবিসি প্রশ্ন করে- নির্বাচন পেছালেই যে বিএনপি অংশ নেবে তার তো কোন গ্যারান্টি নেই। এরশাদ বলেন, আমার একটা কথা মনে হয়। সত্য হতে পারে, না-ও হতে পারে। যদি প্রধানমন্ত্রী না থাকেন তাহলে উনারা চলে আসবেন। এটা আমার মনে হয়। সত্য না-ও হতে পারে। একটা কথা যে, প্রধানমন্ত্রী থাকলে আমরা নির্বাচনে যাবো না। তিনি যদি প্রধানমন্ত্রী থাকেন, নির্বাহী ক্ষমতা তার হাতে থাকে, তাহলে নির্বাচনে কারচুপি হতে পারে। বিবিসি জানতে চায়- আপনার সঙ্গে জাতিসংঘের কর্মকর্তা অস্কার ফার্নানদেজ-তারানকোর সঙ্গে কথা হয়েছে। তার সঙ্গে কি কথা হলো আপনার? এরশাদ বলেন, আমার ওনার সঙ্গে এক ঘণ্টার বেশি কথা হয়েছে। তারাও একমত যে, এই অবস্থায় নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়। আমার মনে হয়, নির্বাচন কমিশন দাবি করেছেন সময়টা বাড়িয়ে দেয়ার। একটা সমঝোতার পথ খুঁজে বের করার। তো সমঝোতার পথ খুঁজে বের করার উপায় নেই। সমঝোতার একটিই পথ আছে যে, প্রধানমন্ত্রী যদি না থাকেন তাহলে হয়তো বিএনপি আসতে পারে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তো পদত্যাগ করতে পারেন না বিভিন্ন কারণে। এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে হবে যেটা বিএনপির কাছে গ্রহণযোগ্য। সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য। সেটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।