তারানকোর জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর তত্ত্বাবধানে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব

তারানকোর জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর তত্ত্বাবধানে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব

সঙ্কট উত্তরণে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব দু’টো বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনকালীন সরকার প্রধানের পদ থেকে সরে গিয়ে প্রেসিডেন্টের কাছে দায়িত্ব প্রদান এবং তার অধীনে অথবা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর তত্ত্বাবধানে নির্বাচন অনুষ্ঠান। জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফারনানদেজ-তারানকো প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রীর সঙ্গে বৈঠকে তার মাধ্যমে পাঠানো জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রস্তাব তুলে ধরেন। সরকার ও বিরোধী দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সূত্রে এ খবর জানা গেছে। সূত্র আরও জানায়, তারানকোর প্রস্তাব বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতকালে আলোচনায়ও স্থান পেয়েছে।
বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, সর্বজনসম্মানিত ব্যক্তির নেতৃত্বাধীন সর্বদলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবির ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেন। প্রধানমন্ত্রী সরে গিয়ে প্রেসিডেন্টকে নির্বাচনকালীন সরকার প্রধান করা হলেও বিরোধী দলের পক্ষে সেই নির্বাচনেও অংশ নেয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রস্তাব অনুযায়ী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর তত্ত্বাবধানে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের সম্মতি সাপেক্ষে তার আপত্তি নেই বলে বেগম খালেদা জিয়া জানিয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়ার বিশ্বস্ত নেতৃস্থানীয় সূত্র জানায়, সাংবিধানিক ব্যবস্থার মধ্য থেকেই সকলের গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ নির্দলীয় একজনকে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের দায়িত্ব দেয়ার যৌক্তিকতা ও প্রয়োজনের কথা বেগম খালেদা জিয়া জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিবের কাছে জোরালোভাবে তুলে ধরেন। তফসিল পিছিয়ে সংসদের মেয়াদ পরবর্তী ৯০ দিনে নেয়ার কথাও বলেন।
সরকারের একজন নীতিনির্ধারক বলেন, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও দিয়েছেন। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নামিবিয়ায় সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচন হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। ওই নির্বাচনে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর নেতৃত্ব দেন সাবেক আইজিপি এ ওয়াই বি সিদ্দিকী। প্রধানমন্ত্রীর দিক থেকে ওই প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া আসেনি। তারানকো প্রেসিডেন্টের কাছে দায়িত্ব দিয়ে তার অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথাও ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলেছেন বলে জানা যায়।
জাতিসংঘ মিশন সফল হবে কিনা তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে সংশয় দেখা দিয়েছে। তারানকো ফিরে যাওয়ার পর বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল নির্বাচন পর্যন্ত প্রত্যেক সপ্তাহে ৪ থেকে ৫ দিন দেশব্যাপী অবরোধ দেয়ার পরিকল্পনা করছে। নির্বাচন প্রতিহত করতে তারা সর্বাত্মক প্রয়াস নেবে। এদিকে এইচ এম এরশাদকে নির্বাচনে রাখার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছে সরকার।
জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিবের মধ্যস্থতায় সরকার ও বিরোধী দলের সমঝোতার লক্ষ্যে আলোচনা চলমান থাকার মধ্যেই ১৪ দলীয় জোট নির্বাচনী প্রক্রিয়া এগিয়ে নিচ্ছে। শরিকদের নিয়ে বসবেন আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। আসন ভাগাভাগি করা হবে। ১৪ দলের ছোট শরিকরা সর্বাধিক সংখ্যক আসনে ছাড় নেয়ার চেষ্টা করছে।
এদিকে তারানকো দু’পক্ষকে সংলাপে বসিয়ে উভয়ের সম্মানজনক সমঝোতার চেষ্টা করছেন। এই প্রক্রিয়ার প্রথম পর্যায়ে ঘোষিত তফসিল পিছানোর বিষয় জরুরি হয়ে এসেছে। মনোনয়নপত্র জমা দেয়া, যাচাই বাছাইয়ের পর তফসিল পিছানোর আইনগত সুযোগ আছে কিনা প্রশ্ন উঠেছে। সরকারের একজন মন্ত্রী, ১৪ দলের শীর্ষ স্থানীয় একজন নেতা বলেন, এখন আর নতুন তফসিল ঘোষণার সুযোগ নেই বলে একটি মত রয়েছে। এর পাল্টা মতও রয়েছে। সংবিধান ও আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছে সরকার ও নির্বাচন কমিশন। ২৪শে জানুয়ারির মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্য নিয়ে সংশোধিত তফসিল ঘোষণার চিন্তা যেমন রাখা হয়েছে, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী নির্বাচন করিয়ে নেয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টি নির্বাচনে থাকলে এরশাদের দাবি অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার তারিখ ৫-৭ দিন পিছানো হবে। এরশাদ নির্বাচনে না এলে ৫ই জানুয়ারিই নির্বাচন করা হবে। বিদেশী প্রভাবশালী মহল ও সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীর অনুরোধ ও জোর তৎপরতার পরও এরশাদ এখন পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ না নেয়ার প্রশ্নে অবিচল রয়েছেন। এরশাদ ঘোষণা করেছেন তফসিল ১০ দিন পিছানো না হলে এবং সব দল না এলে তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন না।
জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং যুক্তরাজ্য, জার্মানিসহ ইউরোপীয় ইউনিয়ন অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক শক্তি বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলকে নিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের গুরুত্ব অব্যাহতভাবে দিচ্ছে। এব্যাপারে সরকারের মধ্যে আগ্রহ এখনও কম। বিএনপিকে বাইরে রেখে অধিক হারে ভোটারের উপস্থিতিতে নির্বাচনকেই তারা অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। ১৪ দলের শরিক দলগুলোর মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টি পনেরটি, জাসদ (ইনু) দশটি, ন্যাপ ও গণআজাদী লীগ দু’টি করে আসনে ছাড় চেয়েছে। সাম্যবাদী দল কোন আসন চায়নি। আজ কালের মধ্যেই ১৪ দলের শরিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতা বৈঠকে বসবে আওয়ামী লীগ। ওয়ার্কার্স পার্টিকে আটটি, জাসদ (ইনু) সাতটি, ন্যাপকে কাঙিত আসনে ছাড় দেয়া হতে পারে। এরশাদের জাতীয় পার্টি নির্বাচনে এলে ১৪ দলের এই শরিকদের আসন ছাড় দেয়ার ব্যাপারে কিছু হেরফের হবে।
দিনভর তারানকোর দৌড়ঝাঁপ: আমাদের কূটনৈতিক রিপোর্টার জানান, একতরফা নির্বাচন ঠেকাতে দৌড়ঝাঁপ করছেন জাতিসংঘের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অস্কার ফার্নানদেজ-তারানকো। দিনভর ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন গতকাল। বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রতিনিধিদের সঙ্গে। কথা বলেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও। ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণের সঙ্গেও বৈঠক হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে তারানকো নির্বাচনের তফসিল পিছানোর বিষয়ে আলোচনা করেছেন। জানতে চেয়েছেন তফসিল পিছিয়ে রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটানোর কোন সুযোগ করা যায় কিনা। জবাবে সিইসি জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনের জন্য সব কিছু এখন কঠিন হয়ে গেছে। তারপরও সমঝোতা হলে অনেক কিছু করা সম্ভব। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বৈঠকে তারানকোকে একতরফা নির্বাচনের ট্রেন থামাতে উদ্যোগ নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। জবাবে তারানকো জানিয়েছেন, তিনি কোন ফর্মুলা নিয়ে আসেননি। সমাধান বের করতে হবে দুই পক্ষকেই। এক্ষেত্রে জাতিসংঘ শুধু চেষ্টা ও সহযোগিতা করবে। বৈঠকে নির্বাচন ও চলমান অচলাবস্থা কাটাতে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের অবস্থান ও বক্তব্য জানতে চেয়েছেন। সরকারি ও বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকেও তারানকো তফসিল পরিবর্তন করে সব দলকে নিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে কথা বলেছেন। সকালে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে দিন শুরু হয় তারানকোর। এরপরই যান নির্বাচন কমিশনে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে একান্তে বৈঠকের পর যান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভীর সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর ফিরে যান হোটেল স্যুটে। সেখানে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর যান ভারতীয় হাইকমিশনে। সেখানে বৈঠক করেন পঙ্কজ শরণের সঙ্গে। এরপর রাতে প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা বৈঠক করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরীর সঙ্গে।
বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে বৈঠক: রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে যোগ দেন আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, ড. শাহদীন মালিক, সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। বৈঠক শেষে ড. কামাল হোসেন বলেন, সংঘাত সহিংসতা আমরা কেউই চাই না। একতরফা নির্বাচনের ট্রেন থামা প্রয়োজন। এতদিন আমরা যা বলে আসছিলাম আজও তাই বলছি। তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিজেই বলেছেন, সমঝোতা হলে তফসিল পিছানো সম্ভব। এক্ষেত্রে আমাকে আর আইনের ব্যাখ্যা করতে হচ্ছে না। জাতিসংঘের উদ্যোগের সফলতা-ব্যর্থতা সম্পর্কে মন্তব্য করার সময় এখনও আসেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, অপারেশন চলছে। এ অবস্থায় কত দূর এগিয়েছে তা বলা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, উনারা যে ল্যে এসেছেন আমরাও সেই ল্যে কাজ করে যাচ্ছি এবং করে যাবো। শাহদীন মালিক বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৮৭ শতাংশ ভোট পড়েছিল। দেশের মানুষ চায় ওই রকম একটি নির্বাচন, যাতে সবার অংশগ্রহণ থাকবে। জাতিসংঘ দূতের সঙ্গে কি কথা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উনারা নিউ ইয়র্ক থেকে কোন ফর্মুলা নিয়ে আসেননি। তারা সবার সঙ্গে কথা বলবেন। সবাই যেটা চায়, তেমন একটি নির্বাচনই তারা চান।
সব দল ছাড়া নির্বাচনে যাবো না- তারানকোকে এরশাদ: সব দল ছাড়া জাতীয় পার্টি নির্বাচনে যাবে না বলে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নানদেজ-তারানকোকে জানিয়ে দিয়েছেন পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সকালে তারানকোর সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের একথা বলেন পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার ও প্রেসিডিয়াম সদস্য জিএম কাদের। সকাল সাড়ে নয়টা থেকে সাড়ে দশটা পর্যন্ত এরশাদের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক করেন জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নানদেজ-তারানকোর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল। বৈঠক শেষে বেলা পৌনে ১১টায় এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের আলোচনা হয়েছে। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনে কি কি পদক্ষেপ নেয়া যায়, এসব বিষয়ে তারা জানতে চেয়েছেন। আমাদের চেয়ারম্যান সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা তুলে ধরেছেন।’ তিনি বলেন, ‘মানুষের জীবনের নিরাপত্তা ফিরিয়ে দেয়া এবং আস্থা অর্জনে সব দলের বসে আলোচনা করতে হবে। আমরা বলেছি, বর্তমানে যে অবস্থা চলছে এটি নিরসন করতে হবে। কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করার সময়ও আমরা বলেছি নির্বাচন পেছাতে হবে এবং সব দলের নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আমরা প্রয়োজনে আবারও বসব। সময় দিতে হবে, যেন সব দল নির্বাচনে আসতে পারে। সরকারি দল, বিরোধী দল এবং দেশের বিশিষ্টজন এক টেবিলে বসে আলোচনা করতে হবে।’ জিএম কাদের বলেন, তারা (জাতিসংঘের প্রতিনিধি দল) আমাদের অবস্থান ও মতামত জানতে চেয়েছেন। আমরা তাদের বলেছি, এই মুহূর্তে নির্বাচন হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। এই মুহূর্তে নির্বাচন হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। নির্বাচনের সময় পিছিয়ে সবার সঙ্গে বসে একটি পদ্ধতি বের করতে হবে, যে পদ্ধতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে। সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া আমরা নির্বাচনে অংশ নেবো না।
গওহর রিজভী ও শমসের মবিনের সঙ্গে বৈঠক: দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ড. গওহর রিজভীর সঙ্গে বৈঠক করেন তারানকো। ওই বৈঠক চলাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তার কার্যালয়ে ছিলেন। আগের দিন নির্বাচনের তফসিল পিছানোর বিষয়ে তারানকো প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে ছিলেন এটি নির্বাচন কমিশনের বিষয়। দুপুরে নির্বাচন কমিশনের বৈঠকের পরই তারানকো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যান। এদিকে রাতে তারানকো যান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরীর ডিওএইচএস-এর বাসায়। সেখানে প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে শমসের মবিন সাংবাদিকদের বলেন, স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে বিধায় এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়। কাল (আজ) বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে জাতিসংঘ প্রতিনিধি দলের বৈঠক হবে। এক প্রশ্নের জবাবে শমসের মবিন বলেন, আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে কি হয়নি তা এখনও বলার   সময় আসেনি। আলোচনা চলছে। আরও আলোচনা হবে।
সমঝোতা হলে অনেক কিছুই সম্ভব- সিইসি: জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ-তারানকো চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধনে নির্বাচন পেছানোর তাগিদ দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনকে। এ ছাড়াও সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা জানিয়েছেন তিনি। বৈঠকে নির্বাচন প্রস্তুতি, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি ও সব দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ আগ্রহ ব্যক্ত করেছে। এ ক্ষেত্রে কমিশনের অবস্থানও জানতে চান তারানকো। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ তাকে জানিয়েছেন, রাজনৈতিক সমঝোতা হলে নির্বাচন পেছানো সম্ভব। তবে দিনে দিনে পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। ইসির জন্য সব কিছু কঠিন হয়ে গেছে। সংবিধানের মধ্য থেকে যতদূর করা সম্ভব আমরা তাই করবো। গতকাল বেলা ১১টায় সিইসির সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টা বৈঠক করেছেন জাতিসংঘ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ-তারানকো। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কোন প্রশ্নের উত্তর দেননি তিনি। বিকালে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ত্যাগ করার সময় লিখিত বক্তব্যে সিইসি বলেন, রাজনৈতিক সমঝোতার কোন অগ্রগতি নেই। দিনে দিনে প্রক্রিয়া জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। ইসির জন্য সব কিছু কঠিন হয়ে গেছে। জাতিসংঘ দূত জানতে চেয়েছিলেন তফসিল পেছানোর সুযোগ রয়েছে কিনা- জবাবে আমি বলেছি সমঝোতার জন্য আমরা অনেক দিন অপেক্ষা করেছি। তফসিল ঘোষণার দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। তবে সব কিছু আইনি কাঠামোর মধ্য থেকে হতে হবে। তার পরও যেহেতু তারা সমঝোতার চেষ্টা করছে সে ক্ষেত্রে আমাদের কিছু না বলাই সমীচীন হবে। শনিবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে জাতিসংঘের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ফার্নান্দেজ-তারানকো জানতে চেয়েছিলেন, দশম সংসদ নির্বাচনের যে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে, তা পেছানো সম্ভব কিনা- জবাবে প্রধানমন্ত্রী তাকে জানিয়েছিলেন, তফসিল পরিবর্তনের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার এ ক্ষেত্রে সরকারের করার কিছু নেই। তাদের সঙ্গেই এ বিষয়ে কথা বলতে হবে।
রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আজও বৈঠক: এদিকে সফরের চতুর্থ দিনে আজও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নেতৃত্বে দলটির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দুপুরে বৈঠক করবেন তিনি। হোটেল সোনারগাঁওয়ে বৈঠকটি হবে। এর আগে সকালে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। সন্ধ্যায় যাবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবনে। সেখানে তার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করবেন অসকার ফারনানদেজ-তারানকো। বিএনপি নেত্রীর সঙ্গে বৈঠকের আগে দলটির মহাসচিব (ভারপ্রাপ্ত) মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে তার বৈঠকের কথা রয়েছে।

অন্যান্য আন্তর্জাতিক বাংলাদেশ রাজনীতি শীর্ষ খবর