‘সর্বদলীয়’ সরকারে থাকা জাতীয় পার্টির মন্ত্রীদের মধ্যে একমাত্র বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদের আগামী মন্ত্রিসভা বৈঠকের ব্রিফকেস বা ফোল্ডার ফেরত পাঠিয়েছেন। অন্য পাঁচ মন্ত্রী এ বিষয়ে কিছুই জানাননি। অর্থাৎ তাঁরা মন্ত্রিসভা বৈঠকে যোগ দেবেন কি না, তা পরিষ্কার করেননি।
আগামীকাল সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠক ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে যেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, সে-সংক্রান্ত কাগজপত্রের ফোল্ডার বা ব্রিফকেস গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রীদের কাছে পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ দায়িত্ব পালন করে। এবারের মন্ত্রিসভা বৈঠকের এজেন্ডায় গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় নেই বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিসভার এক সদস্য। তবে মন্ত্রীদের অবহিতকরণের কয়েকটি বিষয় রয়েছে।
আগামীকাল মন্ত্রিসভা বৈঠক ডাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা।
নির্বাচনকালীন ‘সর্বদলীয়’ সরকারে যোগ দিয়েছেন জাতীয় পার্টির ছয় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী। এ ছাড়া সরকারে একজন উপদেষ্টাও রয়েছেন দলটির। এসব মন্ত্রী ও উপদেষ্টাকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন দলের প্রধান এইচ এম এরশাদ। তাঁদের মধ্যে এরশাদের স্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী রওশন এরশাদ, এরশাদের ভাই ও বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদের, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সালমা ইসলাম এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মজিবুল হক চুন্নু তাঁদের পদত্যাগপত্র দলের প্রধান এরশাদের হাতে তুলে দিয়েছেন। কিন্তু এরশাদের আহ্বান উপেক্ষা করে পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা জিয়াউদ্দিন বাবলু পদত্যাগপত্র জমা দেননি। এ নিয়ে দলটির মধ্যে টানাপড়েন চলছে।
গত বৃহস্পতিবার জাতীয় পার্টির মন্ত্রী ও উপদেষ্টারা সরকার থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলেও এখনো পর্যন্ত এসব পদত্যাগপত্র প্রধানমন্ত্রীর কাছে পেঁৗছানো হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, এ পদত্যাগ নিয়ে জাতীয় পার্টি সরকারের সঙ্গে দরকষাকষি করছে। জাতীয় পার্টির মন্ত্রীরাও এ কথা স্বীকার করেছেন যে কিছু বিষয় নিয়ে সরকারের সঙ্গে টানাপড়েন চলছে। সহসাই তা মিটে যেতে পারে।
গত বৃহস্পতিবার জাতীয় পার্টির তিন মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে দরকষাকষি করতে গেলেও জি এম কাদের সচিবালয়ে তাঁর কার্যালয়ে উপস্থিত হন। সেখানে থাকার সময় মন্ত্রিসভা বৈঠকের ফোল্ডার নিয়ে গেলে, তা ফিরিয়ে দেন জি এম কাদের। রওশন এরশাদকে তাঁর দপ্তরে ফোল্ডার পেঁৗছানোর তথ্য জানিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। একইভাবে বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে রুহুল আমিন হাওলাদারকে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে। তাঁদের মধ্যে একজন মন্ত্রী তাঁর মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বলেছেন, ‘ফোল্ডার ফেরত দেওয়ার দরকার নেই। দেখা যাক কী হয়।’
গত ১৮ নভেম্বর ‘সর্বদলীয়’ সরকারের শপথ নেওয়ার পর একটি মাত্র মন্ত্রিসভা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত সপ্তাহে মন্ত্রীরা নির্বাচনী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার কাজে ব্যস্ত থাকায় মন্ত্রিসভা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি। মন্ত্রীরা তাঁদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য যাঁর যাঁর নির্বাচনী এলাকায় গিয়েছিলেন।
গত সপ্তাহে মন্ত্রিসভা বৈঠক না হওয়ার কোনো কারণ সরকারের তরফ থেকে ব্যাখ্যা করা না হলেও জাতীয় পার্টির একজন মন্ত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকার সর্বদলীয় সরকারের মন্ত্রীদের সঙ্গে সব বিষয়ে আলোচনায় আন্তরিক নয়। কারণ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের সঙ্গে উপদেষ্টারাও গত পাঁচ বছর মন্ত্রিসভা বৈঠকে অংশ নিয়েছেন। কিন্তু সর্বদলীয় সরকারের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর মন্ত্রিসভা বৈঠক থেকে উপদেষ্টাদের বাদ দেওয়া হয়েছে।