তিন বছর ধরে পাল্টাপাল্টি রাজনীতির পর প্রথমবারের মত ঐক্যের মনোভাব নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের বিবদমান দু’গ্রুপের নেতারা।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে গত দু’দিনে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী ডা. আফছারুল আমিনের অনুসারী প্রায় ৪শ’ নেতা চট্টগ্রাম ছেড়ে ঢাকায় গেছেন। চট্টগ্রামে বিভক্তি থাকলেও, এমনকি আলাদাভাবে চট্টগ্রাম ছাড়লেও ঢাকায় গিয়ে দু’গ্রুপের নেতারা থাকছেন একই হোটেলে।
বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
মহিউদ্দিন অনুসারী নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খোরেশদ আলম সুজন বলেন, ‘আর বিভক্তি চাই না। এবার ঐক্য চাই। আশা করছি, সভানেত্রী বিচক্ষণ এবং গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত দিয়ে সবাইকে এক করে দেবেন।’
আফছারুল আমিনের অনুসারী নগর আওয়ামী লীগের আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল বলেন, ‘আশা করছি সভানেত্রী স্বচ্ছ ভাবমূর্তির লোকজন দিয়ে নগর আওয়ামী লীগকে নতুনভাবে সাজিয়ে দেবেন। সবাই মিলে আমরা সবাই আবার একসঙ্গে রাজনীতি করবো।’
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বুধবার বিকেল ৪টায় বিমানযোগে চট্টগ্রাম ছাড়েন।
মহিউদ্দিন অনুসারী নগর আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী জানান, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইনামুল হক দানুর নেতৃত্বে দুশ’ জনের একটি টিম ট্রেনযোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। রাতে ৮০ জনের আরও একটি টিম চট্টগ্রাম ছাড়বে। তাদের মধ্যে চট্টগ্রামের ৩০ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর আছেন।
আফসারুল আমিনের অনুসারী ইব্রাহিম হোসেন বাবুল জানান, নগরীর কোতোয়ালি এলাকার সংসদ সদস্য নূরুল ইসলাম বিএসসির নেতৃত্বে ৯০ জনের একটি টিম মঙ্গলবার চট্টগ্রাম ছেড়ে গেছে। ইব্রাহিম হোসেন বাবুলের নেতৃত্বে এছাড়া ৩০ জনের একটি টিম বুধবার রাতে চট্টগ্রাম ছাড়বে।
নগর আওয়ামী লীগের সদস্য ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী জানান, মহিউদ্দিনের অনুসারীরা ঢাকার কমলাপুরে আল ফারুক ও শাহ পরাণ হোটেলে উঠেছেন। আফছারুলের অনুসারীরাও উঠেছেন আল ফারুক হোটেলে।
সূত্র জানায়, বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী ডা. আফছারুল আমিন আল ফারুক হোটেলে গিয়ে তার অনুসারী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
উল্লেখ্য, বিগত সংসদ নির্বাচনের পর থেকে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। প্রথম দিকে নগর আওয়ামী লীগ তৎকালীন মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও সাংসদ নূরুল ইসলাম বিএসসি এ দু’শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
বিগত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মহিউদ্দিনের পরাজয়ের পর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী ডা. আফছারুল আমিন ও সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম মিলে আরেকটি গ্রুপ গড়ে তোলেন। পরে ওই গ্রুপে যোগ দেন নূরুল ইসলাম বিএসসিও।
বর্তমানে মহিউদ্দিন ও আফছারুল আমিন এ দু’শিবিরে বিভক্ত হয়ে নেতা-কর্মীরা চট্টগ্রাম নগরীতে দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। তবে সম্প্রতি সভানেত্রীর বৈঠকে যোগ দেওয়া নিয়ে দু’পক্ষ বর্ধিত সভা করে ঐক্যের আহ্বান জানান।