মে ধা বী মু খ দেশসেরা – ডাক্তার মেহজাবীন ইসলাম

‘ছোটবেলায় নানু যখন ডাক্তার মাহজাবীন ইসলাম নামে ডাকত আমাকে, তখন থেকেই ছোট্ট স্বপ্নটা আমার ভেতরে একটু একটু করে বাসা বেঁধে ফেলেছিল।’—কথাটা ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করা ডা. মাহজাবীন ইসলামের। মাহজাবীনের আরেকটি বড় কৃতিত্ব, ৩২তম বিসিএসে স্পেশাল ক্যাডারে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন। কিন্তু মাহজাবীনের মতে, প্রথম, দ্বিতীয় হওয়ার ইঁদুরদৌড় কখনোই পছন্দ ছিল না তাঁর। বরং কুইজ করা, বিতর্ক আর আবৃত্তি নিয়ে সময় কাটাতেই বেশি ভালো লাগত তাঁর। তবে বরাবরই স্কুল-কলেজে শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছিলেন তিনি। কারণ, ওই যে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন। চট্টগ্রামে জন্ম নেওয়া এই মেধাবীর জীবনের প্রায় সবটাই কেটেছে রাজধানী ঢাকায়। ২০০৩ সালে মণিপুর হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক আর ২০০৫ সালে হলিক্রস কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোন মাহজাবীন। অষ্টম শ্রেণী, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক—সব পরীক্ষায়ই বোর্ডের ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিপ্রাপ্তদের তালিকায় নাম লিখিয়েছেন এই মেধাবী। তবে স্কুল-কলেজের ওই দুরন্ত সময়টা মাহজাবীনের সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে তাঁর বহুমুখী কাজকর্মগুলোর জন্য। বিশেষ করে হলিক্রস কলেজে এসে যেন মেলে দিয়েছিলেন নিজের সবটুকু ঢেলে। কলেজে থাকতে কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে নিয়ে নিজের জ্ঞানের জগৎকে বেশ সমৃদ্ধ করেছিলেন। জিতেছিলেন বেশ কয়েকটি জাতীয় পর্যায়ের পুরস্কার। ছিলেন বিতর্ক ক্লাবের প্রেসিডেন্ট। বিতর্কে যে প্রতিযোগিতাতেই অংশ নিয়েছেন, দলকে জিতিয়ে নিয়ে এসেছেন। শুধু বিতর্ক আর কুইজ প্রতিযোগিতায়ই নয়, হলিক্রস বিজ্ঞান ক্লাবের হয়ে পাবলিকেশন সেক্রেটারি, দ্বিতীয় বর্ষে থাকাকালীন হলিক্রস ছাত্রী পরিষদের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন মাহজাবীন। এত কিছু করেও স্বপ্ন পূরণ থেকে কখনোই পিছপা হননি মাহজাবীন। স্বপ্নের ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হয়ে ডাক্তার হওয়ার এই প্রাপ্তিই তাই মাহজাবীনের জীবনে শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি। মেডিকেলের গৎ বাঁধা পড়াশোনা, শত শত পরীক্ষাও অবশ্য এই মেধাবীর সৃজনশীল মনোভাবকে বদলাতে পারেনি। ঢাকা মেডিকেলে আয়োজিত সব অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া ছিল মাহজাবীনের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।

ইন্টার্নশিপের সীমাহীন চাপ সামলেও যখন ৩২তম প্রিলিমিনারিটা হুট করে দেওয়া হয়ে গেল, সেই কলেজ পর্যায়ে শিখে আসা কুইজ আর বিতর্কের জ্ঞানগুলো এত দিন পরে এসেও খুব ভালোভাবে কাজে দিল মাহজাবীনের। তাই তো সবাইকে পেছনে ফেলে ৩২তম বিসিএসে দেশসেরার খেতাব উঠল মাথায়। প্রকৌশলী বাবা নজরুল ইসলাম আর শিক্ষক মা সেলিনা আক্তারের ছোট্ট সংসারে শিখে আসা মর্মবাণীগুলোই মাহজাবীনের জীবনের পাথেয়। দুই ভাইবোনের মধ্যে ছোট মাহজাবীন, বড় ভাই নওরোজ ইসলাম প্রকৌশলী। ডাক্তারি পেশাকে ঘিরেই মাহজাবীনের সব পরিকল্পনা। দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার করুণ দশা তাঁকে ব্যথিত করে। মাহজাবীনের মতে, দেশের চিকিৎসকের কোনো অংশেই বাইরের চিকিৎসকদের চেয়ে কম নন। তাঁর স্বপ্ন হূদরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিজেকে তৈরি করা, সেই সঙ্গে এই খাতে অনন্য সাধারণ কিছু করে নিজেকে তথা দেশকে সবার সামনে পরিচিত করা।

অন্যান্য বাংলাদেশ বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিনোদন