রাজনৈতিক চরম অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে ১৯তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ডিআইটিএফ)। প্রতি বছরের মতো এবারও ১লা জানুয়ারি থেকে ৩১শে জানুয়ারি পর্যন্ত মাসব্যাপী এ মেলা আয়োজন করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। স্থায়ী প্রদর্শনীর জায়গা বরাদ্দ পেলেও অবকাঠামো নির্মাণ না হওয়ায় মেলাটি এবারও আগের ভেন্যু শেরেবাংলা নগরেই বসছে। ইপিবি সূত্রে জানা গেছে, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইপিবি সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৫ সাল থেকেই শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পশ্চিম পাশের খালি জায়গায় ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার আয়োজন করা হয়। বারবার স্টল নির্মাণে প্রতিবছর অর্থের অপচয় হওয়ায় দীর্ঘদিন থেকে স্থায়ী ভেন্যুর দাবি জানিয়ে আসছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু মেলার জন্য একটি স্থায়ী জায়গা বরাদ্দ হলেও চীনের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা না হওয়ায় নির্মাণ কাজ করা যায়নি। রপ্তানিমুখী পণ্যের গুণগত মান ক্রেতাদের সামনে তুলে ধরা এবং এর প্রসার বাড়ানোর লক্ষ্যে বছরের শুরুতে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এখন চলছে মেলার সার্বিক প্রস্তুতি। সূত্র জানায়, ডিজিটাল বাংলাদেশের অঙ্গীকার ও লক্ষ্য পূরণে অনলাইনে আবেদন নেয়া হয়। মেলায় থাকছে শিশুদের জন্য ডিজিটাল পার্ক, ই-শপ ও রেডি ফুড জোন। আর গতবারের মতো সুন্দরবনকে উপস্থাপনের জন্য ইকোপার্ক, বঙ্গবন্ধুর কর্মময় জীবনী তুলে ধরার জন্য বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন। মেলা কর্তৃপক্ষ জানায়, এবারের মেলায় তিনটি মহাদেশের ১২টি দেশের ৩৭টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করছে। এগুলো হলো পাকিস্তান, ভারত, চীন, ইরান, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র্র, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কোরিয়া। মেলায় প্রদর্শন করা হবে তৈরী পোশাক শিল্পের বিভিন্ন ধরনের পণ্য। থাকছে কাঠজাতীয় পণ্য, পাটজাতীয় পণ্য, বৈদ্যুতিক ও চামড়াজাতীয় পণ্যসহ মোট ২০ ধরনের পণ্য। এবারও স্টল বরাদ্দ নিয়ে দেশী-বিদেশী উদ্যোক্তাদের মধ্যে চলছে প্রতিযোগিতা। দরপত্রের মাধ্যমে প্যাভিলিয়ন ও স্টল বরাদ্দের কাজ চলছে। এবার ৪৭০টি স্টলের বরাদ্দ পেতে আবেদন পড়েছে ছয় শতাধিক। গত মেলায় বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল ৫০৩টি স্টল। মেলা কমিটির সদস্যসচিব ইপিবির উপপরিচালক ড. বিকর্ণ কুমার ঘোষ জানান, ডিজিটাল বাংলাদেশের অঙ্গীকার ও লক্ষ্য পূরণে অনলাইনে আবেদন নেয়া হয়েছে। দেশের মানুষকে প্রযুক্তিনির্ভর করার চেষ্টা করছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে পরীক্ষামূলকভাবে অনলাইনে স্টল বরাদ্দের আবেদন নেয়া হয়। ফলে স্টল বরাদ্দের কাজ স্বচ্ছ ও নির্ভুলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। মেলার সদস্যসচিব জানান, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় দেশী-বিদেশী পর্যটক আকর্ষণে সুন্দরবনের আদলে নির্মাণ করা হবে নান্দনিক ইকোপার্ক। মেলার নিরাপত্তা সম্পর্কে সদস্যসচিব আরও জানান, বাণিজ্য মেলায় বিভিন্ন স্টল, প্যাভিলিয়ন ও গাড়ি পার্কিং এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য মেলা প্রাঙ্গণে পর্যাপ্ত সংখ্যক আনসার, পুলিশ ও র্যাব নিয়োজিত থাকবে। আগত দর্শনার্থীদের কাছ থেকে কোন অভিযোগ থাকলে অভিযোগের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান করা হবে। মেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থাপন করা হবে সিসিটিভি ক্যামেরা। তিনি বলেন, মেলায় দৈনিক প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার দর্শক সমাগম হবে। মেলা কর্তৃপক্ষ প্যাভিলিয়ন ও স্টল নির্মাণ করে সদস্যদের (অংশগ্রহণকারী সংশ্লিষ্ট কোম্পানি) কাছে হস্তান্তর করবে। মেলায় থাকছে ৫৪টি প্রিমিয়াম প্যাভিলিয়ন, প্রিমিয়াম মিনি প্যাভিলিয়ন ৪৪, সাধারণ প্যাভিলিয়ন ১৩, সাধারণ সংরক্ষিত প্যাভিলিয়ন ৯টি, সাধারণ সংরক্ষিত মিনি প্যাভিলিয়ন পাঁচটি, বিদেশী প্যাভিলিয়ন ১৩টি, বিদেশী প্রিমিয়ার স্টল ১৯টি, রেস্তরাঁ ১০টি, সাধারণ স্টল ২১৩টি, রেডি ফুড স্টল (তৈরি খাবারের স্টল) ৪২টি থাকবে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা। মেলায় প্রবেশ মূল্য গতবার বড়দের জন্য ২০ টাকা ও শিশুদের জন্য ১০ টাকা থাকলেও এবার প্রতিটি টিকিটে ১০ টাকা করে বাড়িয়ে ৩০ টাকা ও ২০ টাকা করা হয়েছে। গেট ইজারাদারের ঠিকাদারির কাজটি এবারও পেয়েছে মীর ব্রাদার্স।