নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, নারায়ণগঞ্জের বর্বর খুনি গডফাদাররা কিভাবে মনোনয়ন পেল সেটা বুঝতে পারছি না। তবে দল তাদের মনোনয়ন দেওয়ায় দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যেতে না পারলেও নারায়ণগঞ্জবাসীকে সঙ্গে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবো। তিনি বলেন, যারা আমাদের সন্তানদের রক্তে হাত রঞ্জিত করেছে ওইসব গডফাদাররা মনোনয়ন পেয়েই হুমকি ধমকি দেওয়া শুরু করেছে। এসব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সংসদ সদস্য কবরী পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বললেও প্রশাসন রহস্যজনক কারণে নীরব রয়েছে।
আইভী ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জবাসীকে রুখে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়ে বলেন, হয়তো শামীম ওসমান ও নাসিম ওসমানরা এমপি হবেন। কিন্তু তাতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। নারায়ণগঞ্জবাসী তাদের সকল অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে। তখন কেউ যদি হাত তুলতে চায় তখন সে সকল কালো হাত ভেঙে দেয়া হবে। নারায়ণগঞ্জবাসীকে অভয় দিয়ে আইভী আরও বলেন, আপনারা ভয় পাবেন না। কেউ যদি না থাকে আমি আইভী আপনাদের পাশে থাকবো।
স্বৈরাচার এরশাদকে নিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে দুই নেত্রীর টানাটানিকে দুঃখজনক বলেও আইভী মন্তব্য করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গণআন্দোলনে স্বৈরাচারের পতন হলেও এখন তাকে নিয়েই টানাটানি হচ্ছে। আইভী বলেন, নারায়ণগঞ্জে আমাদের আর কোন ভাই বা সন্তানকে হত্যার চেষ্টা করা হলে নগরবাসীকে সঙ্গে নিয়ে সন্ত্রাসীদের হাত ভেঙে দেব। একই সঙ্গে আমার (আইভীর), ত্বকী মঞ্চের কারও বিরুদ্ধে অথবা তাদের হাতে নিহত ছাত্রলীগ নেতা মিঠু ও চঞ্চলের পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের বিরুদ্ধে কোন থানায় হয়রানিমূলক মামলা করা হলে তারও জবাব দেবার ঘোষণা দেন মেয়র। সেই সঙ্গে নাসিম ও শামীম ওসমান এমপি হয়ে গেলেও তাতে ভীত না হতে নগরবাসীকে আহবান জানান তিনি। নগরবাসীর উদ্দেশে আশ্বাস দিয়ে মেয়র বলেন, আমি আপনাদের পাশে থাকবো। গতকাল বিকালে শহরের চাষাঢ়া শহীদ মিনারে মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার নয় মাস পূর্তি উপলক্ষে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র আইভী এসব কথা বলেন। এদিকে মেয়রের বক্তব্যের শেষ সময় শামীম ওসমানের অনুসারীরা শহীদ মিনারের পাশ দিয়ে একটি মিছিল নিয়ে গেলে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শামীম ওসমানের অনুসারীদের মিছিল থেকে শহীদ মিনারের সমাবেশকে উল্লেখ করে নানা উস্কানিমূলক স্লোগান দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে অবস্থান নিয়ে পুলিশ পরিস্থিতি মোকাবিলা করে। তবে শামীম ওসমান ৪ আসনের মনোনয়ন পেলেও রহস্যজনক কারণে তার অনুসারীরা বিকালে ৫ আসনের এলাকায় মিছিল বের করে। আইভীর তার বক্তব্যে ত্বকী হত্যাকা সম্পর্কে বলেন, নাসিম ওসমানের ছেলে আজমিরী ওসমানের সহযোগী ভ্রমর আদালতে তার স্বীকারোক্তিতে বলেছে, কিভাবে আজমিরী ওসমান তার টর্চার সেলে ত্বকীকে হত্যা করেছে। এর আগে আজমিরী বাহিনীর হাতে চাষাঢ়ার রাজা মিয়া, আশিক, চঞ্চল, মিঠু খুন হয়েছে। এরপরও আজমিরী ওসমানকে গ্রেপ্তার করছে না প্রশাসন। তিনি আজমিরী ওসমানের গ্রেপ্তার দাবি করেন। পাশাপাশি ত্বকী হত্যার সন্দিগ্ধ শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমান গত ২রা ডিসেম্বর ডিসি অফিসে তার বাবার সঙ্গে গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। বিষয়গুলো প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করে।
দেশ এখন ক্রান্তিকাল পার করছে উল্লেখ করে আইভী বলেন, আমরা নারায়ণগঞ্জে শান্তি চাই। কিন্তু যারা নারায়ণগঞ্জকে অশান্ত করতে চায় তাদের সঙ্গে কোন আপস নেই। সভাপতির বক্তব্যে রফিউর রাব্বি বলেন, আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে খুনি গডফাদারদের মনোনয়ন না দেবার আহ্বান জানিয়েছিলাম। হত্যা, চাঁদাবাজি এবং দখলদারিত্বের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে ওসমান পরিবারের এমপি পদটি প্রয়োজন। তাদের উদ্দেশে রাব্বি বলেন, একতরফা নির্বাচনে আপনারা এমপি হলেও নারায়ণগঞ্জের প্রতিটি খুনের হিসাব আমরা আপনাদের কাছ থেকে নেবই। রফিউর রাব্বির সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, নিহত ছাত্রলীগ নেতা মিঠুর বাবা খুরশিদ আলম, ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচিব কবি হালিম আজাদ, এডভোকেট মাহাবুবুর রহমান মাসুম, নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, খেলা ঘর জেলা কমিটির সভাপতি রথীন চক্রবর্তী, সিপিবি জেলা কমিটির সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, জেলা বাসদের সমন্বয়ক নিখিল দাস, সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি এডভোকেট প্রদীপ ঘোষ বাবু, শহর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আহাম্মদ আলী রেজা উজ্জ্বল, কেলা ঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রমুখ। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।