অবরোধ ও হরতালে অর্থনীতির ক্ষতির জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করে ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআই বলেছে, জ্বালাও-পোড়াও বা গ্রেপ্তার কোনটাই সমাধান নয়।
শনিবার রাতে এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, “অতিমাত্রায় রাজনৈতিক কর্মসূচির আড়ালে ধ্বংসাত্মক হরতাল, অবরোধ কর্মসূচিতে সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতি প্রায় ধ্বংসের সম্মুখীন।”
বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা মানুষ জ্বালাও পোড়াও কর্মকাণ্ড সমর্থন করতে পারি না। অন্যদিকে এটাও বিশ্বাস করি জ্বালাও পোড়াও ও গ্রেপ্তার কোনটাই এই চলমান সমস্যার সমাধান নয়।
“এফবিসিসিআই দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে গতিশীলতা অব্যাহত রাখা এবং জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে হরতাল ও অবরোধের মত কর্মসূচি প্রত্যাহারের জন্য আবারও আহ্বান জানাচ্ছে।”
বিবৃতিতে বলা হয়, গত সপ্তাহে প্রথম পর্যায়ে টানা ৪৮ ঘণ্টা অবরোধের পর, পরবর্তীতে ১২ ঘণ্টা বাড়িয়ে তা শুক্রবার ভোর ৫টা পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। শনিবার থেকে আবারও টানা ৭২ ঘণ্টা অবরোধের ডাক দেয়া হয়েছে।
“এরূপ তাৎক্ষণিক অবরোধ কর্মসূচির ফলে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন কাজের পাশপাশি পূর্বনির্ধারিত কর্মকাণ্ড মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যার ফলে ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।
“বিগত কয়েকদিন যাবৎ অব্যাহত সহিংসতায় সাধারণ জনজীবনে নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে। চলমান অবরোধ কর্মসূচির কারণে যাত্রী ও পণ্য সরবরাহ চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
“যানবাহন বন্ধ থাকায় সময়মতো কাঁচামালসহ অন্যান্য পণ্যসামগ্রী পরিবহন না হওয়ায় উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। ফলে সাধারণ জনগণ দুর্ভোগের স্বীকার হচ্ছেন।”
বেড়ে যাচ্ছে। ফলে সাধারণ জনগণ দুর্ভোগের স্বীকার হচ্ছেন।”
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, “হরতাল ও অবরোধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্যবসায়ী সমাজ। বিশেষ করে পচনশীল পণ্যের বিক্রেতা, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, পরিবহন ব্যবসায়ী ও হকার ও শ্রমিক শ্রেনীর সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।
“আমরা আরো উৎকন্ঠার সাথে লক্ষ্য করছি যে, চলমান অবরোধ কর্মসূচিতে চরম সংঘাতের সৃষ্টি হয়েছে। গত কয়েকদিনে ২০ জন মৃত্যুবরণ করেছে। যাদের বেশির ভাগই পেট্রোল বোমার শিকার। সহাস্রাধিক ব্যক্তি এ ধরনের নৈরাজ্যে আহত হয়েছে।
“রেল ব্যবস্থার উপর বেশি আক্রমণ করা হচ্ছে। রেলওয়ের ফিশপ্লেট তুলে ও ট্রেনের বগিতে অগ্নিসংযোগ করে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হচ্ছে। যত্রতত্র বোমা বিস্ফোরণে শিশু বাচ্চাসহ অগ্নিদগ্ধ হচ্ছে নিরীহ যাত্রী সাধারণ।
“বিশেষকরে সম্প্রতি চলন্ত যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ন্যাক্কারজনক। এই ধরনের অমানবিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চরমভাবে নিন্দনীয়। এ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে দগ্ধ মানুষ মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে এবং ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন মৃত্যুবরণ করেছে। এ ক্ষতি কোনভাবেই পূরণযোগ্য নয়।”
বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি গাজীপুর কোনাবাড়ীতে স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের একটি পোশাক কারখানায় দুষ্কৃতকারীদের দ্বারা অগ্নিসংযোগের যে ঘটনা ঘটেছে তা দেশ ও জাতির জন্য এক বিশাল ক্ষতি ও নিন্দনীয়।
“এ ঘটনার ফলে এখানে কর্মরত প্রায় ১২ হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে। দুর্বৃত্তদের দ্বারা সংগঠিত এ জাতীয় কর্মকাণ্ডের ভার বহন করা ব্যবসায়ীদের পক্ষে কোনভাবে সম্ভব নয়।
আমরা অতীতেও বলেছি এবং এখনো বলছি ব্যবসায়ী সমাজ সবসময়ই হরতাল ও অবরোধ বিশেষ করে এ ধরনের সহিংস কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে। দেশের উন্নয়নকে যেসব রাজনৈতিক কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত করে সেগুলো পরিহার করা অত্যন্ত জরুরি।
“সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অর্জনের গতিশীলতা অব্যাহত রাখার স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা ও সমাধানের পথ বের করা হোক-এটাই ব্যবসায়ী সমাজ একান্তভাবে কামনা করছে।”
“রাজনীতি যেহেতু দেশের জনগণের কল্যাণের জন্য সেহেতু দেশের জনগণের জানমাল ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের নিরাপত্তা ও দেশের অর্থনীতি রক্ষা করাই রাজনীতিবীদদের অন্যতম পবিত্র দায়িত্ব বলে আমরা মনে করি।”
“ব্যবসায়ী সমাজ মনে করে দুই নেত্রী আলাপ-আলোচনায় আসলে তা দেশবাসীর জন্য শান্তির পথ সুগম করবে এবং সকল দলের অংশগ্রহণে সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব হবে।”