৬৪ বছর পূর্তির নানা আয়োজনে উদ্দীপ্ত ছাত্রলীগ

৬৪ বছর পূর্তির নানা আয়োজনে উদ্দীপ্ত ছাত্রলীগ

ছাত্রলীগের ৬৪ বছর পূর্তির নানা আয়োজনে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে ছাত্রলীগ। পুনর্মিলনী, কর্মশালা, বর্ধিত সভাতে বিভিন্ন জ্ঞান ভিত্তিক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে উদ্দীপ্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের প্রবীণতম এই ছাত্রসংগঠটির নেতা-কর্মীরা। সকল সমালোচনা, হতাশা, ব্যর্থতা ও দুর্নাম থেকে বেরিয়ে এসে ইতিবাচক একটি পরিবর্তনের প্রত্যয় ধারণ করেছে তারা।

সংগঠনটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝে এসব শিক্ষামূলক কর্মসূচি প্রাণ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। তারা সংগঠন ও এর কার্যক্রম সম্পর্কে নতুন করে ভাবনার খোরাক পেয়েছেন। অতীতের কার্যক্রম থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন করে শুরু করতে এসব কর্মসূচি সঠিক দিকনির্দেশনা দেবে বলে মনে করেন তারা।

বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এ সংগঠটি তাদের ৬৪ বছর উপলক্ষে ৪ দিনব্যাপী কর্মসূচি হাতে নেয়। কর্মসূচি গুলি হল- ৪ ফেব্রুয়ারি পুনর্মিলনী, ৫ ফেব্রুয়ারি কর্মশালা, ৬ ফেব্রুয়ারি বর্ধিত সভা ও ৭ ফেব্রুয়ারি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

পুনর্মিলনীতে পরীবর্তনের শপথ

গত চার জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয় ছাত্রলীগের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান।

সারা দেশ থেকে আগত হাজার হাজার নেতাকর্মীর পদচারণায় মুখরিত হয়েও উঠে সম্মেলন কেন্দ্র।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি তার বক্তব্যে ছাত্রলীগকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিক নির্দেশনা দেন।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ওমর শরীফ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের লেখাপড়ায় আরো মনযোগী হতে বলেছেন। ইতিবাচক কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশ পরিচালনায় সরকারকে সাহায্য করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।’

পুনর্মিলনীতে নেতা-কর্মীরা বলেন, ‘আমরা বর্তমান অবস্থা থেকে ফিরে আসতে চাই। আমরা চাই ছাত্রলীগ ইতিবাচক কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাক।

কর্মশালায় জ্ঞান ভিত্তিক প্রশিক্ষণ
৫ ফেব্রুয়ারি নেতাকর্মীদের সংগঠনের পরিচিতি, প্রগতিশীল আদর্শ ও এর মূল লক্ষ্য সম্পর্কে জ্ঞান ভিত্তিক ধারণা দিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে আয়োজন করা হয় দিনব্যাপী কর্মশালা। কর্মশালায় নেতাকর্মীরা সংগঠনটির আদর্শিক দিকগুলোর বিষয়ে একটি স্বচ্ছ ধারণা লাভ করেছেন বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

কর্মশালায় সকালের অধিবেশনে ছাত্রলীগের ঘোষণাপত্র ও সাংগঠনিক রীতিনীতি সম্পর্কে ধারণা দেন সংগঠনটির সাবেক সহ-সভাপতি প্রশান্ত ভূষণ বড়ুয়া।

এছাড়া ভিশন ২০২১ সম্পের্কে বিশেষজ্ঞরা বক্তব্য রাখেন।

বিকেলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি ‘যুদ্ধাপরাধীদেও বিচার: জাতির রক্তের ঋণ’ শীর্ষক এক প্রশিক্ষণে বিভিন্ন দেশের যুদ্ধাপরাধ সম্পর্কে ছাত্রলীগকে অবহিত করেন। তিনি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেন।

বিকেলে আরেক অধিবেশনে ‘ছাত্রলীগের অতীত ঐতিহ্য ও ছাত্ররাজীতির ভবিষ্যত’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের যারা অপকর্ম করে তাদের সংগঠন থেকে বের করে দেওয়ার পরামর্শ দেন।

তিনি ছাত্রলীগের অতীত ঐতিহ্য তুলে ধরে বর্তমান অবস্থা কাটিয়ে নতুন অধ্যায় রচনার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।

প্রশিক্ষণের পর নেতা-কর্মীরা বলেন, ‘এতদিন আমরা ছাত্রলীগের বিষয়ে অনেক কিছুই অজ্ঞ ছিলাম। কিন্তু এখন সংগঠনটির কার্যক্রম সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। রাজনীতিতে ছাত্রদের কি ধরণের ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন সেটির বিষয়েও দিক নির্দেশনা পেয়েছি।’

ছাত্রলীগের যুগ্ম-সম্পদক আবদুর রহমান জীবন বলেন, ‘আশা করি এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নেতা-কর্মীরা তাদের কর্যক্রম সম্পর্কে বুঝতে পারবে।’

বর্ধিত সভায় নানা অভিযোগ

৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় বর্ধিত সভা। বর্ধিত সভায় সংগঠনটির সকল কেন্দ্রীয় নেতা ও ৮৪টি সাংগঠনিক জেলার নেতারা বক্তব্য রাখেন। এছাড়া ছাত্রীগের গঠনতন্ত্রও সংশোধন করা হয়।
জেলার নেতারা তাদের বক্তব্যে নানা অভিযোগ তুলে ধরেন কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে। তারা আওয়ামী লীগ নেতাদের অন্যায় হস্তক্ষেপ থেকে মুক্তির জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের সহযোগিতা কামনা করেন।

জেলার নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অনেক উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের কমিটি নেই। ফলে স্থবির হয়ে আছে সেসব এলাকার সাংগঠনিক কার্যক্রম। তারা এসব উপজেলায় সাংগঠনিক গতিশীলতা আনার জন্য ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

৭ ফেব্রুয়ারি বিকেল থেকে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। হাজার হাজার নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বর মুখর হয়ে ওঠে।

অনুষ্ঠানে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীরাসহ দেশের খ্যাতনামা ব্যান্ড তারকারা সংগীত পরিবেশন করেন।

চার দিনের কর্মসূচি সম্পর্কে সংগঠনটির সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামন সোহাগ বলেন, ‘আমরা চারদিনের কর্মসূচিতে জ্ঞানভিত্তিক কর্মসূচি আয়োজনের মাধ্যমে নেতা-কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আশা করি এসব কর্মসূচি তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ছাত্রলীগের ভবিষ্যত রাজনীতিতে একটি সুন্দর দিক নির্দেশনা দেবে।’

ছাত্রলীগের যুগ্ম-সম্পাদক শামসুল কবির রাহাত বলেন, ‘আমরা এসব কর্মসূচির মাধ্যমে ছাত্রলীগে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে চাচ্ছি। আমারা চাই সংগঠনটি অতীতের গৌরবোজ্জ্বল সময়ে ভাল ধারায় ফিরে যাবে।’

ছাত্রলীগের উপ-সম্পদক আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমি ২০০৪ সাল থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত। এত ভাল অনুষ্ঠান কখনো দেখিনি।’

রাজনীতি শীর্ষ খবর