পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্কটে পড়ার জন্য সরকারকে দায়ী করেছেন অবরোধ আহ্বানকারী বিএনপির যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
হরতালের পর অবরোধে প্রাথমিক সমাপনীসহ বিভিন্ন পরীক্ষা পেছানোর পর বিরোধী দলের সমালোচনা করে শিক্ষামন্ত্রীসহ সরকারি দলের নেতাদের বক্তব্যের জবাবে তিনি পাল্টা সরকারকে দায়ী করেন।
রিজভী বলেন, “আমরা মনে করি, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলেই চলমান সঙ্কটের অবসান হতো। তা না করে তারা একতরফা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশকে আবার বাকশালের দিকে এগিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে।
“তাই বিরোধী দলের কর্মসূচি নয়, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ করলেই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের এই অসুবিধা হত না।”
শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বিঘ্নিত হওয়ার জন্য রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া ইসির তফসিল ঘোষণাকেও দায়ী করেন বিএনপির যুগ্মমহাসচিব।
“সরকারের মুখাপেক্ষী আজ্ঞাবাহী নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করে দেশকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। এটা বর্তমান অবৈধ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের যৌথ পরিকল্পনার জাতীয় তামাশা।”
বিরোধী দলের হরতাল-অবরোধের কারণে চলমান প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনীর দুটি বিষয়ের পরীক্ষা পিছিয়েছে। হরতালে এর আগে জেএসসি-জেডিসির ১৭টি বিষয়ের পরীক্ষা পিছিয়ে যায়। এছাড়া হরতালের কারণে এবারের এইচএসসির ৪১টি বিষয়ের এবং এসএসসির ৩৭টি বিষয়ের পরীক্ষা পেছাতে হয়।
পরীক্ষার মধ্যে হরতাল-অবরোধে ক্ষোভ জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ একে ‘বিবেকহীন’ কর্মসূচি বলে আসছেন।
নির্বাচন কমিশন ৫ জানুয়ারি ভোটের দিন রেখে দশম সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই তা প্রত্যাখ্যান করে মঙ্গলবার সকাল থেকে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের ডাক দেয় বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দল।
প্রথম দিনের অবরোধ শেষে সন্ধ্যায় নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্যে পরীক্ষা নিয়ে কথা বলেন রিজভী। অবরোধের সারাটা দিনই বিএনপি কার্যালয় ঘিরে ছিল পুলিশ।
রিজভী জানান, অবরোধ কর্মসূচির প্রথম দিনে পুলিশের গুলিতে বিরোধী দলের কর্মী কুমিল্লায় দেলোয়ার হোসেন, কুমিল্লার লাকসামে বাবুল হোসেন, সিরাজগঞ্জে মো. সাকমান, বগুড়ায় ইউসুফ নিহত হন।
এছাড়া ১১০০ জন আহত এবং চার শতাধিক নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার এবং ৪ হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
রিজভী বলেন, দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদুর বাড়িতে পুলিশি তল্লাসি চালিয়ে আসবাবপত্র ভাংচুর করেছে। আমিন বাজারে আমান উল্লাহ আমান সমাবেশে বক্তব্য রাখার সময়ে পুলিশ অতর্কিত গুলিবর্ষণ করে।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “বিরোধী দলের কর্মসূচি দমনের জন্য আপনারা যে ঘাতক বাহিনীর ভূমিকা পালন করছেন, তার জন্য বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন কোন সদস্য কী কী মাত্রাতিরিক্ত আচরণ করছেন, আমাদের কাছে সব প্রমাণ আছে।”
রাজনৈতিক সঙ্কটের অবসান না ঘটার জন্য সরকারকে দায়ী করে বিএনপি নেতা বলেন, “সরকারের তরফ থেকে সমঝোতা কিংবা সংলাপের কোনো আভাসই পাওয়া যাচ্ছে না। তারা ক্ষমতা ও রাজত্বের সুখ নিদ্রায় আছেন।
“রাজনীতিতে বদানুবাদ ও সমঝোতা দুই-ই থাকবে। কিন্তু একগুয়েমি ও একরতফা নীতি কোনোভাবে গণতন্ত্রের সঙ্গে মিল হয় না। আমরা এখনো বলছি, সরকারে ইতিবাচক সিদ্ধান্তে সমঝোতার পথ উন্মুক্ত হতে পারে