ঈদ সামনে রেখে রাজধানীতে অবৈধ অস্ত্রের ‘নড়াচড়া’ বেড়েছে। পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন গ্রুপ চাঁদাবাজি, চুরি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধমূলক তৎপরতায় এসব অস্ত্রের ব্যবহার আগের চেয়ে বাড়িয়ে দিয়েছে।
গত কয়েক দিনে বেশ কয়েকটি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। পাশাপাশি নগরীর বাণিজ্যিক ও অভিজাত এলাকার বিভিন্ন থানায় এ ব্যাপারে বেশ কয়েকটি মামলা ও সাধারণ ডায়েরি (জিডি) রুজু হয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও বিভিন্ন থানা থেকে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
গোয়েন্দা সূত্রমতে, বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় কোরবানির ঈদ সামনে রেখে কয়েকদিন ধরে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রমে অধিকমাত্রায় জড়িয়ে পড়ছে। আর কারণ হিসেবে গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, এ ঈদে নগদ টাকার লেনদেন সবচেয়ে বেশি।
অন্যদিকে, এই ঈদে মানুষের খরচও বেশি হয়। সেজন্য সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের বাড়তি খরচ মেটাতে জোরেসোরে মাঠে নেমে পড়েছে।
এসব অপরাধে সন্ত্রাসীরা ব্যবহার করছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। আর এ অস্ত্রের মধ্যে বেশিরভাগই ক্ষুদ্রাস্ত্র। এগুলোর মধ্যে ৭.৬৫ (৭ পয়েন্ট ৬৫) মিলিমিটার পিস্তলই সবচেয়ে বেশি। যার মধ্যে রয়েছে পয়েন্ট ২২, ৩২, ৩৮ ও ওয়ানশুটার। প্রতিবেশি দেশ ভারত থেকে ১২-১৫ হাজার টাকায় এসব অস্ত্র সহজেই পাওয়া যায়।
এসব অস্ত্র সাধারণত ছিনতাই, চুরি ও ছোটখাট চাঁদাবাজিতে ব্যবহার করে সন্ত্রাসীগ্রুপের মাঝারি ও নিচের সারির সদস্যরা।
বড়ধরনের চাঁদাবাজি ও অপহরণের কাজে সন্ত্রসী গ্রুপগুলোর বিশ্বস্ত ও প্রশিক্ষিত সদস্যরা ব্যবহার করে আরও দামি ক্ষুদ্রাস্ত। যেগুলোর মধ্যে আছে পেট্রোভেরেটা, স্পেন ও জার্মানির তৈরি ওয়ালথার পিপিকে, আমেরিকার তৈরি সিজেড, নাইন এমএম, মাউসের, চাওরাসসহ দেড় থেকে দুই লাখ টাকা মুল্যের অত্যাধুনিক সব আগ্নেয়াস্ত্র।
এসব অস্ত্রের ওজন আধা থেকে সবোর্চ্চ দেড়কেজি। বহনে সুবিধার কারণে সন্ত্রাসীরা এসব অস্ত্রেও ব্যবহার বাড়িয়ে দিয়েছে বলে জানান গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
ঈদ উপলক্ষে সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে ডিবির (দক্ষিণ) অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও প্রতিরোধ টিমের সিনিয়র সহকারি কমিশনার ছানোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘ঈদ সামনে রেখে সন্ত্রাসীদের যে অস্ত্রগুলো এতদিন লুকানো অবস্থায় ছিলো সেগুলো এখন নড়াচড়া করছে। নানা ধরনের অপরাধমূলক কাজে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপের অস্ত্র হাতবদলও হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এ ঈদে নগদ টাকার বেশি ব্যবহার ও গ্রুপ সদস্যদের বাড়তি ব্যয় মেটাতে সন্ত্রাসীরা চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক তৎপরতা সম্পর্কে পুলিশের কাছে তথ্য আছে।’
এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান এ গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
সুত্র মতে, গত কয়েকদিনে ডিবি পুরান ঢাকা ও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে অন্তত ১২টি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করেছে। যার সবগুলোই ছোট আকৃতির।
এদিকে, গত কয়েকদিনে রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন, ধানমন্ডি, রমনা, গুলশান, গেন্ডারিয়া, সূত্রাপুরসহ বিভিন্ন থানায় পুলিশের তালিকাভুক্ত কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপের চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলা ও জিডি রুজু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ সূত্র।
পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্র জানায়, তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন, ইমন, মোহাম্মদ, শাহাদাত, ইব্রাহিম, শুটার সুমনসহ প্রায় ১৫ জন সন্ত্রাসীর নামে এসব অপরাধের অভিযোগ সবচেয়ে বেশি।
সার্বিক বিষয়টি নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মুখপাত্র ডিবির উপ-কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘ঈদ সামনে রেখে কেউ কেউ বিভিন্ন অপরাধ সংঘটনের চেষ্টা করছে। এ ধরনের তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ মাঠে কাজ করছে।’
তবে সন্ত্রাসীদের ভয় না পেয়ে তাদের সম্পর্কে পুলিশকে তথ্য দিতে তিনি ব্যবসায়ী ও সাধারণ নগরবাসির প্রতি আহবান জানান।