প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “সকল শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে আলোচনা করে আমারা সংবিধান সংশোধন করেছি।”
তিনি বলেন, সংশোধনের মাধ্যমে আমরা জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে চেয়েছি। জনগণের ভোটাধিকার সুনিশ্চিত করে গণতন্ত্রের যাত্রাকে অব্যাহত রাখতে চেয়েছি। জনগণের ক্ষমতায়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে এই সংশোধন করা হয়েছে।”
সোমবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে ঢাকা আইনজীবী সমিতির বহুতল ভবন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “স্বাধীন বাংলাদেশের সপ্তম অনুচ্ছেদে স্পষ্ট রয়েছে যে সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান, আইনের আশ্রয় পাবার সবার সমান অধিকার। এই নির্দেশনা মেনে আমাদের সবার মেনে চলতে হবে।”
আইনজীবীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমি আমার বাবা-মা হারিয়ে ছিলাম, কিন্তু আইনের আশ্রয় পাইনি। কারণ তখন সামরিক আইন জারি করা ছিল। তাই সুষ্ঠু বিচার পাইনি। আমি চাই দেশের সকল নাগরিক যেনো সমান অধিকার পায়। সে জন্য আপনারা নিজ নিজ দায়িত্ব সততার সাথে পালন করবেন।”
বিডিয়ার বিদ্রোহের বিচারের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা এই বার সরকারে আসার পর বিডিয়ার বিদ্রোহ করে, বিদ্রোহীরা সাধারণ মানুষ ও সামরিক সদস্যসহ ৭৪ জনকে হত্যা করে। পৃথিবীর ইতিহাসে এতো বড়ো মামলা আছে কিনা আমার জানা নেই। এই খুনের মামলায় ৮৫০ জন আসামি নিয়ে মাত্র চার বছরের মধ্যে বিচার সমাপ্ত করা হয়েছে। যা পৃথিবীর বুকে ইতিহাস হয়ে থাকবে। আমি এই জন্য আপনাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।”
তিনি বলেন, এর আগে অনেক বিদ্রোহ হয়েছে কিন্তু কোনো বিচার হয়নি, বিচারের নামের প্রহসন হয়েছে। তাই এই বিচার বাংলাদেশর ইতিহাসে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “মানুষ আদালতে সুষ্ঠু বিচারের জন্য শরাণাপন্ন হয়। আমরাও চাই মানুষ যেন সুষ্ঠু বিচার পায়। দেশে আইনের শাসন ও নাগরিক অধিকার যেন সুনির্দিষ্টভাবে রক্ষা হয় সে জন্য আমরা কাজ করেছি।”
এসময় তিনি উদ্বোধন করা দশ তলা ভবনের সমালোচনা করে বলেন, “এতো বড়ো বিল্ডিংয়ে একটি মাত্র সিড়ি এবং একটি মাত্র লিফট, এটা আমার বোধগম্য হচ্ছে না। কোন আর্কিটেক্ট এই কাজ করেছেন। কাজ করার আগে কোন উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে তার ডিজাইন। কিন্তু আমি অবাক হলাম যে এই ভবনের ডিজাইন কীভাবে করা হলো।”
এদিকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে চেয়েছি। তাদের বিচার না করেলে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে দায়ী থাকবো।”
তিনি আরো বলেন, “পরাজিত শক্তির দোসররা ক্ষমতায় এলে তারা দেশের উন্নয়ন করে না। লাখো শহীদের আত্মার শান্তির জন্য এই বিচার করা। আমরা আশা করি এই বিচার সমাপ্ত করতে পারবো।”
শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা ২০ লক্ষ অভিবাসীকে বৈধভাবে বিদেশে থাকা নিশ্চিত করেছি। আমরা বিশাল সমুদ্র এলাকা নিজেদের করে নিয়েছি।”
গত ৩৮ বছরে যখনই বাংলাদেশে নির্বাচনের সময় এসেছে, তখনই দেশে কোনো না কোনো ঝামেলা হয়েছে। ফলে প্রতিবারই বিশেষ ব্যবস্থায় নির্বাচন করতে হয়েছে। আমরা এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। পরিস্থিতি শান্ত করেছি। দেশের মানুষই সিদ্ধান্ত নিবে- তারা কাদেরকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। আমরা জনগণের অধিকারকে নিশ্চিত করতে চেয়েছি। আমাদের পবিত্র সংবিধান অনুযায়ী জনগণ যাকে খুশি তাকে ভোট দিবে।” বলেন প্রধানমন্ত্রী
তিনি আরো বলেন, “এই সরকারের আমলে ৫ হাজার ৮’শ ৩ টি নির্বাচন হয়েছে। এতে ৬৪ হাজার ২৩ জন প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছে। এতে কিন্তু কোনো মানুষ কোনো অভিযোগ করেনি। এতোগুলো সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আমরা হেরে গেছি। এর মানে নির্বাচনে জয়-পরাজায় সম্পূর্ণ জনগণের হাতে। আমরা এই দেশে গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে চেয়েছি। আমরা বিরোধী দলকেও আহ্বান করেছি স্বচ্ছ পথ বেছে নিতে। যাতে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের হাতে পরিচ্ছন্ন একটি পথ দেখিয়ে যেতে পারি।”
শেখ হাসিনা আরো বলেন, “সংসদের ৯০ ভাগ আসন আমাদের; তারপরও আমরা বিরোধী দলকে আহ্বান করেছি। যাতে নির্বাচনে কোনো সন্দেহ না থাকে। যাতে প্রজন্ম স্বচ্ছ পরিচ্ছন্ন একটি নির্বাচন দেখতে পারে। কিন্তু আমার আহ্বানে তারা এখনো সাড়া দেয়নি।”
বার ভবনের লাইব্রেরির উল্লেখ করে তিনি বলেন, “লাইব্রেরির দিকে আমার আগ্রহ বেশি। সভাপতি ৫০ লাখ টাকা চেয়েছেন, আমি জানি না- এ টাকায় কতোগুলো বই হবে! লাইব্রেরির জন্য আমি ৫০ লাখ নয়; আমি এক কোটি টাকা বরাদ্দ করলাম। এ ছাড়া উন্নত বিশ্বের কোনো বড় লাইব্রেরি থেকে যেন প্রযুক্তিগত সহায়তা নেওয়া যায়, তারও ব্যবস্থা আমি করবো।”
এর আগে সকালে তিনি আইনজীবী সমিতির নবনির্মিত বহুতল ভবন ও ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী ২০ কোটি টাকার অনুদান ঘোষণা করেন