তারেক মাসুদের ‘রানওয়ে’-এর শেষ গন্তব্য ঢাকা

তারেক মাসুদের ‘রানওয়ে’-এর শেষ গন্তব্য ঢাকা

চলচ্চিত্র রূপকথা নয়, চলচ্চিত্র মানে জীবনের অলিগলি। চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ সেই জীবনের প্রতিটা অলিগলি অত্যন্ত নিখুঁতভাবে সোজাসাপ্টা ভঙ্গিমায় তুলে ধরেছেন চলচ্চিত্রে। তিনি তার প্রতিটি কাজের মাধ্যমে একটি করে নতুন ধারার সূচনা করতে চেয়েছিলেন।

অন্য সব চলচ্চিত্র নির্মাতারা যেখানে গতানুগতিক ধারায় চলেছেন, সেখানে তারেক মাসুদ হেঁটেছেন অন্য পথে। তিনি চেয়েছিলেন তার ‘রানওয়ে’ চলচ্চিত্রটিকে বাংলাদেশের প্রতিটি প্রান্তের দর্শকদের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে। জঙ্গীবাদ, মৌলবাদ বিরোধী একটি রাজনৈতিক ছবি ‘রানওয়ে’ নিয়ে ভেবেছিলেন অন্য ভাবনা।

ঢাকা কেন্দ্রীক চিন্তাচেতনাকে অগ্রাহ্য করে আর্থিক ঝুঁকির সম্ভাবনা থাকা পরও অবলীলায় নিজের তৈরি ছবি ‘রানওয়ে’কে বন্দরনগরী চট্ট্রগ্রামে ২০১০ সালের ৪ অক্টোবরে মুক্তি দিয়েছিলেন। তার পরিকল্পনা ছিল, সারা বাংলাদেশ ঘুরে ‘রানওয়ে’ এর গন্তব্য শেষ হবে ঢাকায় এসে। সবই চলছিল ঠিকঠাক । কিন্তু হঠাৎ করে তারেক মাসুদ আকস্মিকভাবে অনন্ত যাত্রায় চলে গেলেন। থমকে গেল সৃষ্টিশীলতা, রানওয়ের যাত্রায় পড়ল লম্বা বিরতি। তারেকের তৈরি ম্যাপ অনুযায়ী গত বছরের অক্টোবরে ঢাকাতে রানওয়ে’র যাত্রা শেষ হওয়ার কথা ছিল। আকস্মিক দুর্ঘটনায় মাঝপথে সেটি বিলম্বিত হয়ে পড়ে। প্রথম মুক্তির এক বছরেরও বেশি সময় পর ঢাকায় প্রদর্শিত হতে যাচ্ছে তারেক মাসুদের প্রাণের প্রজেক্ট ‘রানওয়ে’।

যদিও নির্দিষ্ট সময় থেকে একটু দেরিতে, অনেকটা ভিন্ন আবহে হলেও আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে রাজধানী ঢাকার পাবলিক লাইব্রেরীর শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে প্রদর্শিত হবে তারেক মাসুদ পরিচালিত ক্যাথরিন মাসুদ প্রযোজিত তাদের দুজনের একসঙ্গে সর্বশেষ চলচ্চিত্র ‘রানওয়ে’। ছবিটি চলবে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন তিনটা করে প্রদর্শনী হবে। ৫০ টাকা দর্শনীর বিনিময়ে ছবিটি দর্শকদের দেখানো হবে। এই প্রদর্শনীকে তারেক মাসুদের সহধর্মিনী ক্যাথরিন মাসুদ ‘রানওয়ে’র উৎসব বলে অবিহিত করেছেন। কারণ এই উৎসবে আরও থাকছে তারেক মাসুদ ও তার দীর্ঘদিনের সহযোদ্ধা মিশুক মুনীর এই সৃজনশীল বন্ধু জুটির দুটি নির্মাণ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘নরসুন্দর’ এবং আর্ন্তজাতিক ভাষাদিবস উপলক্ষে নির্মিত ২ মিনিটের বিশেষ দৃশ্য চিত্র ‘একুশ’।

ঢাকায় ‘রানওয়ে’ প্রদর্শন সামনে রেখে ৬ ফেব্রুয়ারি সোমবার বিকেলে ঢাকার রিপোর্টার্স ইউনিটি অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় এক সংবাদ সম্মেলন। এতে বক্তব্য রাখেন নাট্যব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ ও ক্যাথরিন মাসুদ।

সংবাদ সম্মেলনে ক্যাথরিন মাসুদ জানালেন, খুব শীঘ্রই তিনি তারেক মাসুদের নামে একটি মেমোরিয়াল ট্রাস্ট গঠন করতে যাচ্ছেন। এই ট্রাস্টির মাধ্যমেই তারেক মাসুদের অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করা হবে। তারেকের কবরের পাশে স্মৃতি ফলক নির্মাণের পাশাপাশি তার গ্রামে একটি লাইব্রেরি ও অডিটরিয়াম গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছেন।

ক্যাথরিন মাসুদ আরো জানান, তারেক মাসুদের অপ্রকাশিত একটি পান্ডুলিপি আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি বইমেলায় প্রকাশিত হচ্ছে প্রথমা প্রকাশনী থেকে। এছাড়াও তারেক মাসুদের কাজ ও চিন্তাচেতনা নিয়ে আরও দুটি বই প্রকাশিত হবে। তিনি জানালেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তারেকের অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করার উদ্যেগ নিচ্ছেন। এর মধ্যে `কাগজের ফুল` চলচ্চিত্রটিও থাকছে। ক্যাথরিন মাসুদ সংবাদ সম্মেলনে চলচ্চিত্র শিল্পের নানারকম অসংগতির কথা তুলে ধরেন। কারিগরী অদক্ষতা, যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতা এবং সিনেমা হলের অবকাঠামোজনিত সমস্যার নানাদিক চমৎকার বাংলায় বর্ণনা করেন তিনি। সরকারী পৃষ্ষ্ঠপোষকতা বাড়ানো বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন করেন।

বিশ্ব মাতৃভাষা দিবসের এই মাসে রানওয়ে`কে ঢাকায় মুক্তি দেওয়াকে অনেকটাই প্রাসঙ্গিক মনে করেছেন ক্যাথরিন মাসুদ। এই আয়োজনের মাধ্যমে তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের সাথে অকালে প্রাণ হারানো ৩ সহকর্মী মুস্তাফিজ,ওয়াসিম ও জামালের আত্মার শান্তি কামনা করেন।

বিনোদন শীর্ষ খবর