পুরান ঢাকার দর্জি দোকানি বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলার রায় ডিসেম্বরে ঘোষণা করা হবে।
মামলাটি বর্তমানে ঢাকার চার নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে বিচারাধীন আছে। আগামী ২৭ নভেম্বর এই মামলায় যুক্তিতর্কের দিন ধার্য আছে। তার পরেই এই মামলায় রায়ের দিন নির্ধারণ করা হবে।
এদিকে গত ১৯ নভেম্বর এই আদালতে অন্যতম আসামি মাহফুজুর রহমান নাহিদ ও তার ভগ্নিপতি সাফাই সাক্ষী দেন। নাহিদ তার সাফাই সাক্ষ্যে আদালতকে বলেন, “আমি নির্দোষ। আমি বিশ্বজিৎ হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। কারণ যে দিন বিশ্বজিৎ হত্যার শিকার হন সে দিন আমি আমার গ্রামের বাড়ি ভোলাতে ছিলাম।”
এছাড়া ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তির বিষয়ে নাহিদ আদালতে জানান, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তাকে (নাহিদ) রিমান্ডে নিয়ে মারধোর করে। পরে স্বীকারোক্তি দেওয়ার জন্যে বিচারকের খাসকামরায় নেওয়া হলে বিচারক নাহিদের কোনো কথা না শুনেই একটি সাদা কাগজে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেন। সে সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওই খাসকামরায় উপস্থিত ছিলেন।
নাহিদের পক্ষে তার ভগ্নিপতি আদালতকে বলেন, “ঘটনার দিন নাহিদ গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। সে সম্পূর্ণ নির্দোষ।”
এদিকে গত ১১ নভেম্বর এ মামলায় জেলে থাকা ৮ আসামি আদালতে বিশ্বজিৎকে হত্যার কথা অস্বীকার করেন।
এর মধ্যে ওইদিন প্রধান অভিযুক্ত ‘চাপাতি শাকিল’কে দোষী না নির্দোষ জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, “ঘটনার দিন সে ঢাকাতেই ছিল না। বাবা অসুস্থ থাকায় সে গ্রামের বাড়িতে ছিল। পরে পুলিশ তাকে ধরে চাপাতি পাওয়া গেছে বলে মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করে।”
এ সম্পর্কে ওই ট্রাইব্যুনালে স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর এসএম রফিকুল ইসলাম পরিবর্তনকে বলেন, “সারা দুনিয়ার মানুষ বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখেছে আসামি রফিকুল ইসলাম শাকিল বিশ্বজিৎকে কোপাচ্ছে। সেখানে সে সম্পূর্ণভাবে তা অস্বীকার কীভাবে করে? এমনকি সে (শাকিল) ওইদিন ঢাকাতে ছিল না বলেও দাবি করছে।”
এ মামলায় এই পর্যন্ত রাষ্ট্রপক্ষ মোট ৩৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছে। তার মধ্যে অভিযোগপত্রে সাক্ষী করা হয়েছিল ৬০ জনকে। গত ২৬ মে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ মো. জহুরুল হকের আদালত এ মামলার ২১ আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় অভিযোগ গঠন করে। এর আগে গত ১৯ মে ডিবি পুলিশের দাখিলকৃত অভিযোগপত্র আমলে নেয় একই আদালত।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলায় ২১ জন আসমিকে অভিযুক্ত করে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক তাজুল ইসলাম। এ মামলায় মোট ৮ জন কারাগারে আছেন। পলাতক আছেন ১৪ জন। এর মধ্যে ছাত্রলীগ ক্যাডার রফিকুল ইসলাম শাকিল (চাপাতি শাকিল), মাহফুজুর রহমান নাহিদ, এমদাদুল হক এমদাদ, জিএম রাশেদুজ্জামান শাওন, এইচ এম কিবরিয়া, কাইউম মিয়া টিপু, সাইফুল ইসলাম ও রাজন তালুকদারসহ ৮ জন কারাগারে আছেন।
অপর ১৩ আসামি খন্দকার মো. ইউনুস আলী, তারিক বিন জোহর তমাল, গোলাম মোস্তফা, আলাউদ্দিন, ওবায়দুর কাদের তাহসিন, ইমরান হোসেন ইমরান, আজিজুর রহমান আজিজ, মীর মো. নূরে আলম লিমন, আল-আমিন শেখ, রফিকুল ইসলাম, মনিরুল হক পাভেল, কামরুল হাসান ও মোশারফ হোসেন মামলার শুরু হতে পলাতক আছেন।
কারাগারে থাকা ৮ জনের মধ্যে শাকিল, নাহিদ, এমদাদ ও শাওন আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর রাজধানীর পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে ১৮ দলীয় জোটের অবরোধ চলাকালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ক্যাডারদের হাতে নির্মমভাবে খুন হন দর্জি দোকানি দোকানি বিশ্বজিৎ দাস।