সংসদীয় রাজনীতির খোলনলচে পাল্টে দেবে আওয়ামী লীগ! প্রবীণ নেতাদের নিয়ে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা নির্বাচন করবেন ১শ’ ৫০ আসনে। মহিলা প্রার্থীদের জন্য এবার ৫০ আসন দেয়া হবে। আর ১০০ আসনে একদম নতুন মুখ, মেধা আর প্রত্যয়ে শাণিত এই তারুণ্যই আগামীর পার্লামেন্টারিয়ান। আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা এমন একটি গাণিতিক সমীকরণ থেকে বহুমুখী লাভালাভ নিশ্চিত করতে চাইছেন। আর এটি হলে পরে এত বছরের রাজনীতিতে এক যুগান্তকারি অধ্যায় রচিত হবে।
চমকের একটা সিরিয়াল নিয়ে যেন বসে আছেন আওয়ামী লীগের পলিসি মেকাররা! জানাশোনা আছে যাদের, তারা এমন সব ‘ডায়নামিক’ পথ দেখাচ্ছেন, সংসদে ‘কাউল’ কোট করে কথা বলতে পারার মত প্রতিনিধিরাই আবার বসবেন। ১০০ আসনে নতুন মুখ দেখাদেখি করেছেন দায়িত্বে থাকা কয়েক স্তরের নেতারা। তৃণমূলের কথাও শুনেছেন সভাপতি নিজেই। শিক্ষা আর যোগ্যতার পারদে সাবেক ছাত্রলীগের অনেকের নাম খাতায় উঠেছে। যুবলীগ, মহিলা লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং আর সব সহযোগী ফ্রন্টের মহানগর ও জেলা শাখার শীর্ষনেতাদের নাম আছে নমিনেশনের খেরো খাতায়। আইনজীবী, শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলীসহ ‘নলেজ বেজড’ পেশাজীবীদের নাম আছে।
‘চারিত্রিক এবং আরও পাঁচ রকম মানদণ্ড পার করিয়ে ১০০ চৌকস জনপ্রতিনিধি দেশের মানুষের সামনে উপহার হিসেবেই দিতে চায় আওয়ামী লীগ।’ কথা বলছিলেন দলের প্রবীণ এক নেতা।
মহিলাদের জন্যে গত নির্বাচনে ১৯ আসন দিয়েছিল দল, জয় ১৭ আসনেই। এবার ৫০ নেত্রী অংশ নেবেন সরাসরি ভোটের যুদ্ধে।
দেড়শ’ আসনে পুরানো মুখ যারা, তাদের নমিনেশন নির্ভর করবে শেখ হাসিনার বেঁধে দেওয়া ছাঁকনির ওপর। ৫ বছরের প্রতিটি ভালো কাজ পয়েন্ট পেয়েছে, কমেছে অদক্ষতা, দুর্নীতির মত কালো দাগের কারণে। ক্লিন ইমেজ যারা ক্লিন রেখেছেন, তারা সহজেই পার হবেন নির্বাচনী বোর্ডের পরীক্ষা। সংসদ সদস্য হয়ে দলের জন্য কাজ করা না করার হিসেব নিকেশ দলের তথ্য-ভাণ্ডারে আপডেট হয়ে আছে। মাঠের কর্মীরা কী চান, সে বিষয়ে খুব প্রাধান্য দেয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে। আর এই ছাঁকনিতে এরই মধ্যে নাম বাদ গেছে অনেক মন্ত্রী-নেতা-ধনকুবেরের। নমিনেশন পাবেন না, এমন অন্তত একশ’ সংসদ সদস্য বাছাই তালিকায় স্থান পাননি।
সারাদেশে ৩০০ আসনে কয়েক দফা জরিপ সেরে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। প্রাথমিক তালিকা তৈরি। আগামী ২৪ নভেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাথে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিনই বার্তা পেয়ে যাবেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তাদের মধ্য থেকেই চূড়ান্ত করে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হবে এ মাসেই। হয়তো দু’চারদিন গড়াবে ডিসেম্বরে।
মনোনয়ন বোর্ডের এক নেতা পরিবর্তনকে বলেন, “সারাদেশে দলের প্রার্থী প্রায় চুড়ান্ত। নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করলেই দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করবে আওয়ামী লীগ।”
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ পরিবর্তনকে বলেন, “দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের অনেক প্রার্থী পরিবর্তন হবে। বির্তকিতরা দলের মনোনয়ন পাবেন না।”
আবার বির্তকিত না হয়েও কয়েকটি আসনে পারিবারিক কারণে ছাড় দিতে হচ্ছে কয়েকজন সংসদ সদস্যকে। এদের মধ্যে সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার তানভীর শাকিল জয় এবার দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেননি। জয় তার বাবা আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের জন্য দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। বাবার আসন বাবাকেই ফিরিয়ে দিয়েছেন তানভির শাকিল জয়।
ফরিদপুর-৪ আসন থেকে বিগত নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি কাজী জাফর উল্লাহ। তার স্ত্রী বেগম নিলুফার জাফর উল্লাহ দলীয় মনোনয়ন নিয়ে এমপি নির্বাচিত হন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বামী-স্ত্রী দু’জনই দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তবে কাজী জাফর উল্লাহ’ই প্রার্থী হবেন, এটা নিশ্চিত।
খুলনা মেয়র হওয়ার কারণে বিগত নির্বাচনে বাগেরহাট-৩ থেকে নির্বাচনে অংশ নেননি তালুকদার আব্দুল খালেক। এ আসন থেকে দলীয় টিকিট নিয়ে তার স্ত্রী হাবিবুন নাহার এমপি হন। সিটি নির্বাচনে পরাজয়ের কারণে আগামীতে এ আসন থেকে ভোট অংশ নেবেন তালুকদার আব্দুল খালেক।
আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি সূত্রে কিছু নতুন প্রার্থীর নাম জানা গেছে সম্ভাব্য হিসেবে। সিরাজগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না, সিরাজগঞ্জ-৪ আসনে প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসন উপদেষ্টা এইচটি ইমামের ছেলে তানভীর ইমাম, পাবনা-৪ স্বেছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা রফিকুল ইসলাম লিটন, পটুয়াখালি-৩ কেন্দ্রীয় যুবলীগের স্বাস্থ্য ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মো. কামরান সাঈদ প্রিন্স মহব্বত, সিলেট-১ বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান, নেত্রকোনা-৪ আসনে সাবেক ছাত্রনেতা শফী আহমেদ, বরিশাল-১ আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ, চাঁদপুর-২ মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, পিরোজপুর-১ অ্যাডভোকেট শ. ম. রেজাউল করীম, হবিগঞ্জ-৩ ড. রেজা কিবরিয়া, রাজশাহী-১ মতিউর রহমান, গাইবান্ধা-৫ আসনে মাহমুদ হাসান রিপন, খুলনা-৫ প্রফেসর ড. মো. মাহাবুব উল ইসলাম, ঢাকা-৪ ড. আওলাদ হোসেন, যশোর-৩ শাহীন চাকলাদার এবং বগুড়া-৫ মজিবুর রহমান মজনু। এসব আসনসহ প্রায় শতাধিক আসনে এবার নুতন মুখ দেখা যাবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত পরিবর্তনকে বলেন, “দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল হচ্ছে আওয়ামী লীগ। এ দলের প্রধান যিনি রয়েছেন তিনি ভালো করেই জানেন, কাকে মনোনয়ন দিলে জয় নিশ্চিত হবে আর কাকে দিলে পরাজয় বরণ করতে হবে।”
চমকের এই হিসেব-নিকেশও যে কোন সময় ম্লান হয়ে যাবে, এখনও হেভিওয়েট হিসেবে বিখ্যাত অনেক বড় মাপের নেতাকেও নমিনেশন তালিকা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারেন নীতি-নির্ধারক মহল! সেই ঘটনা ঘটলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কারণ জয়ের লক্ষ্যেই মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগের ‘জয়’।