মুক্তিযুদ্ধে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের পর গোটা জাতি যখন ‘আমার সোনার বাংলা’ গাইছিলো তখন পাকিস্তানিদের উদ্দেশ্যে খালেদা জিয়া উর্দু গান ‘আকেলে না যানা মুঝে ছোড়কে’ (“আমাকে একা ফেলে যেও না“) গাইছিলেন।
এ দাবি কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর।
মঙ্গলবার বিকেলে ‘ঢাকার এ প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত ১৪ দলের মানববন্ধন চলাকালে যাত্রাবাড়ীতে আয়োজিত সভায় দেওয়া প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ দাবি তোলেন।
শুধু তাই নয়, বক্তব্যে বিভিন্ন প্রসঙ্গে কোরান-হাদিসের উদ্ধৃতি হরহামেশা উল্লেখ করতে থাকেন সুবক্তা হিসেবে নাম কুড়ানো মতিয়া।
‘বিগত নির্বাচনে দেশের জনগণের কাছে ওয়াদা ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার’ –এ মন্তব্য করে মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচনী ইশতেহারে জনগণের কাছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার ওয়াদা ছিল বর্তমান সরকারের। পবিত্র কোরানে বলা হয়েছে- আল্লাহপাক ওয়াদা ভঙ্গকারীকে পছন্দ করেন না। আর তাই শেখ হাসিনাও ওয়াদা ভঙ্গ করেননি। তিনি অত্যন্ত কৌশলের সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছেন।’
জামায়াতের সাবেক আমীর গোলাম আযমকে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী উল্লেখ করে মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘গোলাম আযমকে গ্রেপ্তারের পরে অনেকে বলছেন- তিনি বৃদ্ধ মানুষ, তাকে যেন ক্ষমা করে দেওয়া হয়। যারা এমন কথা বলেন তাদের উদ্দেশ্যে আমি বলতে চাই, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের দাদা-দাদী, নানা-নানী যাদেরকে হত্যা করা হয়েছিল তারা কি বয়োবৃদ্ধ ছিলেন না? তখন তো এই গোলাম আযম গং তাদের ক্ষমা করেনি।’
এ প্রসঙ্গে মতিয়া চৌধুরী হাদীসের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘আমি পবিত্র বুখারী শরিফ থেকে বলতে চাই- আমাদের নবী যখন মক্কা বিজয় করলেন তখন এক কাফের কাবা শরীফের গিলাফ ধরে ঝুলে পড়েছিল। সাহাবিরা নবীকে বললেন- হে নবী ওমুক ব্যক্তি কাবার গিলাফ ধরে ঝুলে রয়েছে। তখন নবীজী বললেন, ওই ব্যক্তিকে ওই স্থানেই ওই অবস্থাতেই হত্যা করা হোক। সুতরাং আমিও বলতে চাই, যুদ্ধাপরাধের বিচার দেশে শুরু হয়েছে। পিতার বদলে পিতা, ভাইয়ের বদলে ভাই, মায়ের বদলে মায়ের এই বিচার সুসম্পন্ন করা হবেই।’
চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষাবলম্বন করে বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়ার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়া যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন মেহমান ছিলেন। যখন দেশে যুদ্ধ শুরু হয় তখন জিয়াউর রহমান সীমান্ত পার হয়ে ভারতে চলে যাওয়ার জন্য খালেদা জিয়াকে চিঠি দিয়েছিলেন। আর খালেদা জিয়া উত্তরে জানিয়েছিলেন, তিনি ক্যান্টনমেন্টেই নিরাপদে আছেন। এছাড়াও তার দল বিএনপির অস্তিত্ব টিকে আছে জামায়াত-শিবিরের ওপর ভর করে। ফলে তিনি পাকিস্তানিদের দোসর গোলাম আযম, নিজামী, মুজাহিদের পক্ষাবলম্বন করবেন এটাই স্বাভাবিক।’
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার মানবতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার, আলবদর, আল শামস, গেলাম আযম গংয়ের ফাঁসির দাবিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের উদ্যোগে রাজধানীজুড়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
এ কর্মসূচিতে যুদ্ধাপরাধীদের দ্রুত বিচার ও ফাঁসির দাবি সম্বলিত ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড নিয়ে ১৪ দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন।