আলাদা আলাদা নয় বরং একটি প্রজাতির প্রাচীন মানব বা হোমিনিড থেকেই আধুনিক মানব বা হোমো সাপিয়েন্সের উদ্ভব। সম্প্রতি এক দল বৈজ্ঞানিক দাবি করছেন, আফ্রিকা এবং ইউরেশিয়াতে পাওয়া প্রাচীন মানুষের ফসিলের বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনা তাদের ধারণা হয়েছে একক পূর্ব পুরুষ থেকেই আধুনিক মানুষের উদ্ভব হয়েছে। সায়েন্স সাময়িকীতে লেখা এক নিবন্ধে তারা মত জানান।
মানুষের উদ্ভব সম্পর্কে প্রচলিত নানা তত্ত্বের সবচেয়ে জনপ্রিয়টি হলো – আধুনিক মানব প্রজাতি অর্থাৎ হোমো সাপিয়েন্সের কোনো একক পূর্বপুরুষ নেই। ২০ লাখ বছর আগে পৃথিবীতে একাধিক প্রজাতির দু-পেয়ে প্রজাতির অস্তিত্ব ছিল। তাদের সমন্বয়েই আধুনিক মানুষের উদ্ভব হয়েছে।
নৃবিজ্ঞানীরা মনে করতেন, এরকম প্রজাতির সংখ্যা ছিল কমপক্ষে তিনটি। এদের নাম হচ্ছে যথাক্রমে হোমো হ্যাবিলিস, হোমো রুডলফেনসিস, আর হোমো ইরেকটাস ।
ওই নিবন্ধে তারা বলছেন, আফ্রিকা এবং ইউরেশিয়াতে পাওয়া প্রাচীন মানুষের ফসিলের বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনা তাদের ধারণা হয়েছে যে এগুলো একই প্রজাতির একাধিক বংশধারা। ঐ প্রজাতিটিই বিবর্তিত হয়ে আধুনিক মানবপ্রজাতির সৃষ্টি হয়েছে।
হোমিনিড
ডমানিসির এই সংগ্রহকে বলা হচ্ছে আফ্রিকার বাইরে পাওয়া প্রাচীন মানব ফসিলের এ যাবৎকালের সবচেয়ে ভালোভাবে সংরক্ষিত নমুনা। এগুলো পাওয়া গেছে আট বছর আগে, আর তার পর থেকে চলেছে পরীক্ষা নিরীক্ষা। বিজ্ঞানীরা এই ফসিলগুলোকে আফ্রিকা থেকে পাওয়া হোমিনিড ফসিলের সাথে তুলনা করে দেখেছেন।
বিজ্ঞানীদের এই দলটি জর্জিয়ার ডমানিসি-তে পাওয়া একটি হোমিনিড খুলি পরীক্ষা করেছেন। ১৮ লাখ বছরের পুরোনো এই মাথার খুলিটির মস্তিষ্কের গর্তটা ছোট, দাঁতগুলো বড়, মুখমন্ডল লম্বা। এসব বৈশিষ্ট হোমো হ্যাবিলিস এবং হোমো ইরেকটাস উভয়েই পাওয়া যায়।
জর্জিয়ার জাতীয় জাদুঘরের ডেভিড লর্ডকিপানিৎজ বলছেন, “প্রথম দিককার হোমো প্রজাতির যেসব ফসিল আমরা পেয়েছি তার মধ্যে এটি সবচেয়ে সম্পূর্ণ। এত ভালো নমুনা আগে আমরা কখনো পাইনি। এই মাথার খুলিটাতে এমন সব অংশ রয়েছে যা আমরা আগে পাইনি।”
“এটা হচ্ছে সেই সময়কার কথা যখন মানবজাতির পূর্বপুরুষরা আফ্রিকা থেকে বেরিয়ে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ছিল। ডমানিসিতে যা পাওয়া গেছে , তা হলো এর সবচাইতে বড় সংগ্রহ। এখানে যা পেয়েছি, তার মধ্যে চেহারার পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও এমন সব মিল আছে – যাতে মনে হয় এগুলো একটাই জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন লোকের ফসিল।”, যুক্ত করেন লর্ডকিপানিৎজ।
তিনটি পৃথক মূল প্রজাতি থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে আধুনিক মানুষের সৃষ্টি – এই তত্ত্বের প্রেক্ষিতে লর্ডকিপানিৎজ বলেন, “এমন হতে পারে যে আসলে মূল প্রজাতি একটিই, তিনটি নয়। এখানে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি হলো যে আমরা একটি প্রাচীন জনগোষ্ঠীর ফসিল পরীক্ষা করার সুযোগ পেয়েছি। এটা বিজ্ঞানের জন্য একটি নতুন পর্যায়। আমরা টুকরো টুকরো বা বিচ্ছিন্ন নমুনা নয়, বরং একটি প্রাচীন মানুষের একটি পুরো দলকে জরিপ করতে পারছি।
তাদের গবেষণা এখনো অসম্পূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমি জোর দিয়ে বলতে চাই যে এটা একটা সূচনা মাত্র, কারণ আমাদের আরো ৫০ হাজার বর্গ মিটার খনন কাজ চালাতে হবে।”