বিএনপির শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার আর অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযানের পর জনমনে এখন একটাই প্রশ্ন দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াও কি গ্রেপ্তার হতে যাচ্ছেন?
শুক্রবার রাত থেকে বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবনের সামনে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। যদিও কারণ হিসেবে ‘নিরাপত্তা’র কথা বলছে পুলিশ। শনিবার বিকেলের দিকে বেগম জিয়ার বাসভবনের চারপাশে নারী পুলিশের সংখ্যা আরো বাড়ানো হয়েছে।
এর আগে শুক্রবার রাতজুড়ে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের গ্রেপ্তারের পর খালেদা জিয়াও গ্রেপ্তার হতে পারেন বলে গুঞ্জন ছিল রাজনৈতিক অঙ্গনে। এ গুঞ্জন এখন ছড়িয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের মনেও। এছাড়া বিএনপির পক্ষ থেকেও আশঙ্কা, যেকোনো সময় গ্রেপ্তার হতে পারেন খালেদা জিয়া।
এদিকে শনিবার বেলা ১২টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘এ ঘটনা অসম্ভব নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, “এই সরকারকে দিয়ে সবকিছুই সম্ভব।”
দলীয় সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক মাস ধরে দেশব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের এভাবে গ্রেপ্তারের ঘটনায় অনেকটাই স্তম্ভিত হয়ে পড়েছে দলটির নেতা-কর্মীরা। তারা অভিযোগ করছেন, স্বাধীনতার পর এমনভাবে গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেনি।
শুক্রবার শুধুমাত্র ঢাকাতেই বিএনপির তিনজন শীর্ষনেতাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য শীর্ষ নেতাদের ধরতে চলেছে অভিযান। এমন অভিযানের পর বেগম খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হচ্ছেন কি না তা নিয়ে নানা ধরনের হিসেব নিকেষ করছেন সাধারণ মানুষ। এই হিসেবে নিকেশকে অনেকটাই উসকে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ কয়েকজন নেতার বক্তব্য।
বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেছেন, “হরতাল করে মানুষকে খুন ও খুনের পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বিএনপির এসব নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
অন্যদিকে হরতালে নৈরাজ্য করার জন্যই বিএনপির তিন শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে চাঁদপুরে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মণি।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের এক বিশেষ বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, “যারা সহিংসতা করবে তারা যতো বড় নেতাই হোক না কেন, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।”
শুক্রবার সন্ধ্যায় সোনারগাঁও হোটেলের সামনে থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির তিন সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, রফিকুল ইসলাম মিয়া এবং এম কে আনোয়ারকে হঠাৎ করেই গ্রেপ্তার করা হয়। সারারাত বিএনপি চেয়ারপার্সনের বাসভবন ঘিরে রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেসময় গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসভবন থেকে বের হওয়ার পর রাত সোয়া ১টার দিকে গ্রেপ্তার করা হয় বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু ও বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাসকে।
একই সাথে শুক্রবার রাতভর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, উপদেষ্টা আলতাফ হোসেন চৌধুরী, এম এ মান্নান, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, ঢাকা মহানগর সদস্য সচিব আবদুস সালাম, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাসিরউদ্দিন অসীম, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদউদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের বাসায় তল্লাশি করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। একইসাথে দলটির নয়াপল্টনের অফিসও ঘিরে রাখে পুলিশ ও ডিবি।
এদিকে শুক্রবার রাত ১০টার পর থেকে খালেদা জিয়ার বাসভবনে কাউকে ঢুকতে দেয়নি পুলিশ। শনিবার সকাল থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য সংখ্যা আরো বাড়ানো হয়েছে।