২০০৯ সালে বিডিআর সদর দপ্তর পিলখানায় সংঘটিত বিদ্রোহের ঘটনায় বিচারাধীন হত্যা এবং বিস্ফোরক আইনের মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট করা হয়েছে।
এ ঘটনার বিচারে গঠিত বিডিআর’র বিশেষ আদালতে সাত বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত মো. ফজলুল করিমের ছেলে মো. হুমায়ুন কবির সোমবার এ রিট দায়ের করেন।
আগামীকাল মঙ্গলবার বিচারপতি ফরিদ আহাম্মদ ও বিচারপতি শেখ হাসান আরিফের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এ রিটের প্রাথমিক শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট এম এ মান্নান ভূইয়া।
দায়েরকৃত রিটে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় বাংলাদেশ দণ্ডবিধির অধীনে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের অধীনে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলা দু’টিকে সংবিধান পরিপন্থি দাবি করে তা বাতিলের আবেদন করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র সচিব, প্রতিরক্ষা সচিব, আইন সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), ঢাকা মহানগর দায়রা জজ, ঢাকার ১ নম্বর জ্যেষ্ঠ বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক এবং ঢাকার জেলা প্রশাসককে (ডিসি) বিবাদী করা হয়েছে।
অ্যাডভোকেট এম এ মান্নান ভূইয়া বলেন, পিলখানার অভ্যন্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় অপরাধী বা অপরাধের শিকার যারা হয়েছেন সকলেই বিডিআর বাহিনীর। সাধারণ কোনও নাগরিক ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলো না।
তিনি বলেন, বিডিআর কর্মকর্তা বা সদস্যদের জন্য তাদের নিজস্ব আইন রয়েছে। ফলে তাদের সকল কর্মকাণ্ডের বিচার তাদের আইনেই হতে হবে, অন্য আইনে করা যাবে না। সে অনুযায়ী ১৯৭২ সালের বিডিআর অর্ডারের অধীনে বিডিআরের ৮ নম্বর বিশেষ আদালতে ২০১১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর বিডিআর সদস্য মো. ফজলুল করিমকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। কিন্তু দায়রা জজ আদালত ও বিশেষ ট্রাইবুনালে তার বিরুদ্ধে আরও দু’টি মামলার বিচার চলছে।
এম এ মান্নান ভূইয়া আরও জানান, সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এক অপরাধের জন্য কোনও ব্যক্তিকে দু’বার সাজা বা বিচার করা যাবে না। কিন্তু একবার কারাদণ্ড দেওয়ার পরও দায়রা জজ আদালত ও বিশেষ ট্রাইব্যুনালে তার বিরুদ্ধে আরও দু’টি মামলার বিচার চলছে।
তিনি বলেন, ওই বিদ্রোহের পর ২০০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি দণ্ডবিধির অধীনে পুলিশ কর্মকর্তা নবজ্যেতি খীসা বাদী হয়ে রাজধানীর লালবাগ থানায় মামলা করে।
ওই বছরের ৬ এপ্রিল মামলাটি নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তর করা হয়। ২০১০ সালের ২৮ জুলাই দণ্ডবিধির অধীনে দায়রা জজ আদালতে এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের অধীনে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে দু’টি চার্জশিট দাখিল করা হয়। গত বছরের ২০ জুলাই ও ১০ আগস্ট মামলা দু’টির চার্জ গঠন করা হয়।
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে বিডিআর সদর দপ্তর পিলখানায় বিদ্রোহ হয় এবং ওই বিদ্রোহে ৫৭ সেনা সদস্যসহ অনেকে নিহত হয়।
এছাড়া ওই বিদ্রোহের সময় পিলখানার অভ্যন্তরে অগ্নিসংযোগ, লুট, দাঙ্গা, লাশ গুমসহ বিভিন্ন অপরাধ সংঘঠিত হয়। বিদ্রোহের অপরাধে বিশেষ আদালত গঠন করে বিডিআর’র নিজস্ব আইনে অনেকের বিচার করা হয়।
অন্যদিকে হত্যা, দাঙ্গাসহ অন্যান্য অপরাধে দণ্ডবিধির অধীনে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে অন্য একটি মামলার বিচার চলছে।