প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার কেরানীগঞ্জে মিনিবন্দর পানগাঁও ইনল্যান্ড কন্টেইনার টার্মিনাল উদ্বোধন করবেন। দীর্ঘপ্রতীক্ষিত এই কন্টেইনার টার্মিনাল চালুর মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম থেকে নদীপথে ঢাকায় কন্টেইনার পরিবহন শুরু হবে। ভাড়া নির্ধারনসহ এখনো কিছু বিষয় অমিমাংসিত থাকলেও ব্যবসায়ীরা বলছেন এতে সময় এবং খরচ দুটোরই সাশ্রয় হবে।
নৌপরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম বন্দরে বিদেশ থেকে বড় জাহাজে আসা কন্টেইনার ফিডার জাহাজে করে পৌছে দেয়া হবে পানগাও আইসিটিতে। এজন্য চট্টগ্রাম বন্দর কন্টেইনার বহনযোগ্য তিনটি জাহাজ সংগ্রহ করেছে। আপাতত এই জাহাজে কন্টেইনার পরিবহন হলেও বেসরকারি খাতের আরো বেশ কিছু কন্টেইনারবাহি জাহাজ এই রুটে যুক্ত হবে। এরজন্য ৩২টি জাহাজের অনুমোদন দেয়া হয়েছে, জানান নৌপরিবহন মন্ত্রী।
শাহজাহান খান আরো জানান, “নানা জটিলতা কাটিয়ে পানগাও আইসিটি চালু হয়েছে, এটি পরিচালনার জন্য পর্যায়ক্রমে সব পক্ষের সম্মতিতে একটি গ্রহনযোগ্য নীতিমালা প্রনয়ন করা হবে।
২০০৫ সালে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থানার বুড়িগঙ্গার তীরে পানগাঁও মৌজায় ইনল্যান্ড কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ শুরু করে অভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহন সংস্থা বিআইডাব্লিউটিসি। এরজন্য চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বিনা সুদে ১৭৭ কোটি টাকা ধার নেয়া হয়। বৎসরে সোয়া লাখ ইউনিট কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং এ সক্ষম এই টার্মিনালে এক সাথে দুটি জাহাজ পণ্য উঠানামা করতে পারবে।
পানগাও আইসিটির প্রকল্প পরিচালক মুজিবুর রহমান সরকার জানিয়েছেন ‘চট্টগ্রাম বন্দর ও বিআইডাব্লিউটিএ যৌথভাবে এই আইসিটি পরিচালনা করবে। প্রাইভেট অপারেটর নিয়োগের মাধ্যমে এই টার্মিনাল পরিচালনার কথা থাকলেও আপাতত বন্দর কর্তৃপক্ষর নিজস্ব যন্ত্রপাতি এবং লোকবল দিয়ে এটি পরিচালনা হবে।
“এরজন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিয়েছে, বিআইডাব্লিউটিএ ও লোকবল নিয়োগ দেয়া শুরু করেছে, কাষ্টমস কর্তৃপক্ষ ও তাদের লোকবল নিয়োগ দিয়েছে, জানান তিনি।
চট্টগ্রাম বন্দরের অমদানী রপ্তানী পণ্যের ৬৫ শতাংশই হয় কন্টেইনারে। কিন্তু বন্দর থেকে নদী পথে কন্টেইনার পরিবহনের কোন ব্যবস্থা ছিলোনা। অথচ সাশ্রয়ী হওয়ার কারনে এমনিতে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানী রপ্তানী হওয়া বাল্ক কার্গোর( খোলা পন্য ও তেলজাতীয় পদার্থ) ৮০ শতাংশের বেশি নদী পথে পরিবহন হয় দেশের বিভিন্ন অংশে।
সড়ক পথে কন্টেইনার পরিবহনে অতিরিক্ত খরচ ও ঢাকা- চট্টগ্রাম মহাসড়কের দূরাবস্থার কারনে ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিনের ধরে পানগাও আইসিটি স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছিলো।
এখন রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের ব্যবসায়ীরা তাদের আমদানী পণ্য চট্টগ্রামের পরিবর্তে পানগাও থেকে ডেলিভারী নিতে পারবে। একইভাবে রপ্তানীকারকরা সড়ক পথে পানগাও টার্মিনালে তাদের পণ্য পৌছালে সেই পন্য চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে বিদেশে চলে যাবে।
পানগাঁও আইসিটি চালু হওয়াকে যুগান্তকারী পদক্ষেপ উল্লেখ করে ফেডারেশন অব চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক (বন্দর) এম এ ছালাম বলেছেন, “এতে সড়ক ও রেলপথের তুলনায় নদীপথে চট্টগ্রাম থেকে রাজধানী ঢাকায় পণ্য পরিবহনে খরচ কমে যাবে অর্ধেকের মত।”
“নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদী পথের পরিমান দিন দিন কমলেও এখনো পরিবহনের জন্য এই রুটে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, পানগাঁও আইসিটি চালু হওয়ার পর এর সুবিধা অসুবিধা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে, উল্লেখ করেন তিনি।
পানগাঁও আইসিটির পাশাপাশি নদী পথে ঢাকার আশে পাশে বেসরকারি খাতে আরো তিনটি টার্মিনাল নির্মানের প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেরাণীগঞ্জে বেশ কিছু বাস্তবায়িত প্রকল্প উদ্বোধন করবেন, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন কয়েকটি নতুন প্রকল্পের। একটি জনসভায় অংশ নেবেন তিনি