‘বর্তমানে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে’ জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জি এম কাদের) বলেছেন, গত অর্থবছরে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৯.০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
সোমবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে গোলাম দস্তগীর গাজীর প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ তথ্য জানান।
মন্ত্রী আরো জানিয়েছেন, এই ঘাটতি রোধ করতে চারটি পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এগুলো হচ্ছে ২০০৯ থেকে ২০১২ মেয়াদী রপ্তানী নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য জোটে বাংলাদেশকে সম্পৃক্ত করা, দেশি পণ্য রপ্তানীর জন্য নতুন নতুন বাজার অনুসন্ধান এবং বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা আদায়ের ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ।
এ. এম মাহবুব উদ্দিন খোকনের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘গত কিছু দিন ধরে ডলারের বিপরীতে টাকার দাম কমে যাওয়া, ব্যাংকের তারল্য সংকট, ব্যাংক ঋণের সুদের হার বৃদ্ধি এবং জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় দিন দিনই দ্রব্যমূল্য কিছুটা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে সরকারের সঠিক পদক্ষেপের কারণে মূল্য বৃদ্ধির প্রবণতা নি¤œমুখী।’
একই প্রশ্নের জবাবে মূল্যবৃদ্ধি রোধে মন্ত্রণালয়, জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তর ও ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ উপস্থাপন করেন।
এসব পদক্ষেপের অংশ হিসেবে প্রণীতব্য ‘বাজারে অসুস্থ প্রতিযোগিতা নিরসনকল্পে প্রতিযোগিতা আইন’ শিগগিরই সংসদে উত্থাপন করা হবে বলেও জানান মন্ত্রী।
একেএম রহমতুল্লাহর প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্বের কূটনীতি রাজনৈতিক কূটনীতি থেকে বাণিজ্যিক কূটনীতিতে ধাবিত হচ্ছে। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই আমাদের বিদেশস্থ মিশনগুলো কাজ করে যাচ্ছে।
তাজুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে জি এম কাদের বলেন, মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এম এল এম) কোম্পানিগুলো কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ‘ডাইরেক্ট সেল আইন-২০১২’ নামে একটি আইনের খসড়া প্রণয়ন করে অর্থ মন্ত্রণালয় এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মতামতের জন্য পাঠানো হয়েছে।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে মতামত পাওয়া গেলে খসড়া আইনটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।
মো. মনিরুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যে মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের সঙ্গে ৪০টি দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।
দ্বিপাক্ষিক দেশসমূহ হচ্ছে, আলজেরিয়া, ভূটান, ব্রাজিল, মিশর, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইরাক, কুয়েত, দক্ষিণ কোরিয়া, লিবিয়া, মালয়েশিয়া, নেপাল, পাকিস্থান, ফিলিপাইন, সেনেগাল, শ্রীলংকা, সুদান, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, উগান্ডা, জাম্বিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জিম্বাবুয়ে, কেনিয়া, চীন, বুলগেরিয়া, মায়ানমার, হাঙ্গেরি, রুমানিয়া, ভিয়েতনাম, রাশিয়া, আলবেনিয়া, উজবেকিস্তান, মালী, জার্মান, ইউক্রেন, বেলারুশ ও কম্বোডিয়া।
এছাড়াও আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে- ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল, ভূটান, মালদ্বীপ, পাকিস্থান ও আফগানিস্থানের সঙ্গে রয়েছে সাফটা চুক্তি। আপটা চুক্তি রয়েছে ভারত, শ্রীলংকা, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও লাওসের সাথে। বিমসটেক চুক্তি রয়েছে থাইল্যান্ড, মায়ানমার, নেপাল ও ভূটান। ডি-৮ চুক্তি রয়েছে পাকিস্থান, তুরস্ক, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া ও নাইজেরিয়ার।
এছাড়াও ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে রয়েছে টিপিএস- ও. আই. সি. নামক বাণিজ্য চুক্তি।
মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ভোজ্যতেলের বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার লক্ষণ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোজ্যতেলের উৎপাদন, পরিশোধক, আমদানীকারক এবং সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সংগঠন ও সমিতির সদস্যদের সঙ্গে বেশ কয়েকটি মতবিনিময় সভা করা হয়।
তিনি বলেন, ‘গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়েও এ বিষয়ে পর্যালোচনা সভা করা হয়। এসব সভায় প্রাপ্ত সুপারিশগুলো বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে ভোজ্যতেলের বাজার বর্তমানে নিম্নমুখী। কোন অসাধু ব্যবসায়ী যাতে বাজারে অস্থিতিশীল করার প্রয়াস না পায় সে ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।
মো. মুজিবুল হকের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি দূর করার জন্য বর্তমান সরকার বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এসব পদক্ষেপ সমূহের মধ্যে রয়েছে, চীন ২০১০-১১ সালে বাংলাদেশকে মোট ৪ হাজার ৭৮৮টি পণ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার প্রদান করেছে।
এর আগে বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে ডেপুটি স্পিকার শওকত আলীর সভাপতিত্বে চলতি অধিবেশনের ৭ম কার্যদিবসের কার্যক্রম শুরু হয়।