ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুন্ড উপজেলায় গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়ের হওয়া একটি মামলায় জামিন পেয়েছেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী। একইসঙ্গে আদালত এ মামলার আরও ৮ আসামিকে জামিন দিয়েছেন। এছাড়া আদালত এ মামলায় আগামী ৭ মার্চ অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন নির্ধারণ করেছেন। সোমবার চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আব্দুল কুদ্দুস মিয়া সাকা চৌধুরীসহ ৯ আসামির জামিন মঞ্জুর করে অভিযোগ গঠনের সময় নির্ধারণ করেন। রাষ্টপক্ষের কৌসুলী ও জেলা পিপি অ্যাডভোকেট আবুল হাশেম বলেন, ‘এ মামলায় সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী হাইকোর্টের জামিনে আছেন। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বিচারক ৫০ হাজার টাকার মুচলেকায় তার জামিন বহাল রেখেছেন। একই সঙ্গে আরও ৮ জন আসামির জামিনও বহাল রেখেছেন। এ মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানি হবে ৭ মার্চ।’ আসামীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আহসানুল হক হেনা বলেন, ‘সালাহউদ্দিন কাদেরের নাম মামলার এজাহারে ছিলনা। পরবর্তীতে চার্জশিটে একজন আসামির স্বীকারোক্তির কথা উল্লেখ করে তার নাম যুক্ত করা হয়েছে। এটি হয়রানির উদ্দেশে করা হয়েছে বিধায় আমরা তার জামিন চেয়েছি। বিচারক আমাদের বক্তব্যে সন্তুষ্ট হয়ে জামিন দিয়েছেন।’ এর আগে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে সোমবার সকাল সোয়া ১১টায় সাকা চৌধুরীকে চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আব্দুল কুদ্দুস মিয়ার আদালতে হাজির করা হয়। এসময় আদালত প্রাঙ্গণে বিএনপি’র বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য সাকা চৌধুরীকে গ্রেপ্তারের পাঁয়তারার গুজব তুলে ২০১০ সালের ৭ নভেম্বর ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুন্ডের পাক্কা রাস্তার মাথা এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের দেয়া একটি ব্যারিকেড থেকে গণহারে গাড়ি-ভাংচুর করা হয়। এসময় বেশ কয়েকটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। এ ঘটনায় ২০১০ সালের ৮ নভেম্বর সীতাকুন্ড থানার এস আই গোলাম ফারুক ভুঁইয়া বাদী হয়ে অন্তর্ঘাতমূলক কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫ (৩)/২৫-ঘ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ২০১১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর পুলিশ সাকা চৌধুরীসহ ৯ জনকে আসামি করে চট্টগ্রামের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে একটি চার্জশিট দাখিল করে। গত ২৩ জানুয়ারি মামলাটি চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারের জন্য পাঠানো হয়। এ মামলায় সোমবার সাকা চৌধুরী প্রথম হাজিরা সময় নির্ধারিত ছিল। মামলার বাকি আট আসামী হলেন, মোহাম্মদ হোসেন, হাজী সালাহউদ্দিন, মো.মনজু, মোরসালিন, এরশাদ, মনজুর, ফয়সাল এবং খোরশেদ। মামলার শুনানিতে অংশ নিয়ে জেলা পিপি বলেন, ‘সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ছিলেন গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী এবং নির্দেশদাতা। আসামির তার সঙ্গে বৈঠক করেই জনমনে আতংক সৃষ্টি করে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলার জন্য এ ঘটনা ঘটিয়েছিল।’ অন্যদিকে সাকা চৌধুরীর পক্ষের আইনজীবীরা পিপি’র এ বক্তব্যের বিরোধিতা করেন। সাকা চৌধুরীর পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাডভোকেট আহসানুল হক হেনা, ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন, অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সাজ্জাদ। এদিকে একই দিন সীতাকুন্ডের বাঁশবাড়িয়া এলাকায় গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের আরেকটি ঘটনায় সীতাকুন্ড থানায় আরও একটি মামলা দায়ের হয়েছিল। এ মামলায়ও সাকা চৌধুরীসহ ৮ জন চার্জশিটভুক্ত আসামি। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এ মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন নির্ধারিত আছে। এর আগে গত শনিবার বিকেলে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়। উল্লেখ্য ২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রমনা থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলায় বিএনপির আলোচিত-সমালোচিত নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী গ্রেপ্তার হন। এরপর আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়ের হওয়া যুদ্ধাপরাধ মামলায়ও তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গ্রেপ্তারের পর থেকে কারাগারেই আছেন সাকা চৌধুরী।