এইডস বা এইচআইভি আক্রান্তদের জীবনে নতুন আশার সঞ্চার করেছেন রাশিয়ার একদল বিজ্ঞানী। সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এইচআইভি প্রতিরোধের জন্য একটি নতুন উদ্ভাবিত টিকার ওপর পরীক্ষা চালিয়ে আশা জাগানিয়া ফল পেয়েছেন রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা।
রাশিয়ার ‘স্টেট রিসার্চ সেন্টার ফর ভাইরোলজি অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি’ সংক্ষেপিতভাবে ভেকটর, এইচআইভি ভাইরাস প্রতিরোধকারী এই নতুন প্রতিষেধকের ওপর পরীক্ষা চালায় ।
সংবাদমাধ্যম জানায়, ভেকটরের বিজ্ঞানীরা এই প্রতিষেধকটির ওপর প্রথম দফার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সাফল্যজনকভাবে সম্পন্ন করেছেন।
গবেষণা কেন্দ্রটির পরিচালক আলেক্সান্দার সেরগেইয়েভ সোমবার জানান, পরীক্ষার সময় শক্তিশালী রোগপ্রতিরোধক বা অ্যান্টিজেন সঞ্চারিত করা এই প্রতিষেধকটির কোষীয় সাড়া আশানুরূপ ছিল।
সাফল্যের সঙ্গে প্রথম দফা পরীক্ষা শেষ করার পর ভেকটরের গবেষকরা এখন এই প্রতিষেধকটির ওপর দ্বিতীয় দফা পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানোর প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন।
উল্লেখ্য, ভেকটর থেকে এর আগে ঘোষণা দিয়েছিলো তাদের গবেষকরা পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী এবং উন্নতমানের প্রতিষেধক তৈরির পথে এগিয়ে চলেছেন।
১৯৮৭ থেকে ২০১১’র নভেম্বরের ১ তারিখ পযর্ন্ত রাশিয়ায় এইচআইভি আক্রান্ত হওয়ার ৬ লাখ ৩৬ হাজার ৯৭৯টি ঘটনা রেকর্ড করা হয় বলে সম্প্রতি প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে দেখানো হয়। ২০০৬-এর পর থেকে এই প্রাণঘাতী ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা আগের থেকে দ্বিগুণ বলেও জানানো হয় পরিসংখ্যানে। আক্রান্তদের মধ্যে ১ লাখ ৪ হাজার ২৫৭ জন এর মধ্যেই মারা গেছেন।
এইচআইভি বা ‘হিউমান ইমিউনডিফিসিয়েন্সি’ ভাইরাস শরীরের রোগ প্রতিরোধকারী কোষগুলোকে ধ্বংস করে ফেলার মাধ্যমে আক্রান্তের শরীরের রোগ প্রতিরোধ কার্যক্রমকে সম্পূর্ণভাবে পঙ্গু করে ফেলে। এর ফলাফল হিসেবে আক্রান্ত ব্যক্তি যে কোনো সাধারণ রোগের বিরুদ্ধেও লড়াই করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং শেষ পযর্ন্ত মৃত্যুমুখে পতিত হয়।
এইচআইভির সবচেয়ে মারাত্মক ধাপকে এইডস বা ‘অ্যাকুয়ার্ড ইমিউন ডিফিয়েন্সি সিনড্রম’ হিসেবে অভিহিত করা হয়।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী বিশ্বে এইচআইভিতে আক্রান্ত হওয়ার হার দিন দিন বেড়েই চলেছে। ২০০৯ সালে প্রকাশিত সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী পৃথিবীতে এইচআইভি আক্রান্ত লোকের সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ৩৩ লাখ।
এইচআইভি বা এইডসকে বতর্মানে পৃথিবীর জনস্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক হুমকির অন্যতম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বের নিম্ন এবং মধ্য আয়ের দেশগুলোতেই এর হুমকি সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে আফ্রিকার দেশগুলোতে।
এইচআইভি চিকিৎসার জন্য বিশ্বের প্রায় ১ কোটি লোকের এই মুহূর্তে অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপির প্রয়োজন হলেও অধিকাংশ আক্রান্তেরই এই চিকিৎসা নেওয়ার আর্থিক সক্ষমতা নেই।