সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন ভারতের বিহার রাজ্যের মুসলিমরা। রাজ্যের গয়া জেলায় হিন্দু ধর্মের দেবী দূর্গাকে উৎসর্গ করে নিজেদের দায়িত্বে একটি মন্দির নির্মাণ করে দিয়েছে তারা।
মুসলিমরা শুধু এর নির্মাণে অর্থায়নই করেনি তারা পুরো মন্দিরের নির্মাণকাজ দেখাশুনার দায়িত্বও নিয়েছে।
গয়া শহরে রেলস্টেশনের অদূরে লোকো কলোনিতে নির্মিত ওই মন্দিরের ব্যাপারে স্থানীয় সুরেশ প্রসাদ একটি ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘মুসলিমরা শুধু এই মন্দির নির্মাণের ব্যয়ভারই বহন করেনি তারা আমাদের মতোই এর নির্মাণকাজেও অংশ নিয়েছে।’
এই দূর্গা মন্দিরটি গত সপ্তাহেই পুজা অর্চনার জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা অশোক কুমার জানান, মুসলমানরা সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে। তারা সবাই রেলওয়েতে কাজ করে। এই মন্দিরটি হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির একটি প্রতীক হয়ে থাকবে। এর নির্মাণকাজে দুই ধর্মের মানুষেরই হাতের স্পর্শ রয়েছে।
মন্দিরটির নির্মাণকাজে অংশ নেওয়া তওহিদ আলম বলেন, ‘আমরা এখানে বহুদিন ধরে বসবাস করছি। আমরা সবাই সবার প্রতি যত্ম নিই। এটা হলো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিরই একটি নমুনা।’
এই মন্দিরটির ভিত্তিস্থাপন করা হয় ২০১০ সালে। সেই থেকে এর নির্মাণে হিন্দু-মুসলিম একসাথে কাজ করেছে।
স্থানীয় মুসলিম অধিবাসী মোহাম্মদ রফিক বলেন, ‘মন্দির নির্মাণের অর্থ সংগ্রহের জন্য আমরা হিন্দুরে সঙ্গে যোগ দিই এবং নির্মাণকাজ দেখাশুনার কাজও করি আমরা।’
মুসলিমরা ব্যক্তিগতভাবে অর্থ দিয়ে সহায়তা করেছে। তাদের কাছ থেকে প্রায় ৫ লাখ রুপি সংগৃহিত হয়েছে। মোহাম্মদ শাহাব জানান, অনেকেই অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছেন আবার কেউ শ্রম দিয়েও সাহায্য করেছেন।
বিহারের ১০ কোটি ৫০ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে মুসলিম রয়েছে ১৬ শতাংশ। শুধু গয়াতে রয়েছে প্রায় ডজনখানেক মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা।
গয়া সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে খুবই স্পর্শকাতর। বিশেষ করে হিন্দু মৌলবাদী ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) অবস্থান খুব শক্ত এখানে। গত দুই দশক ধরে তারা এই আসনে নির্বাচনে জিতে আসছে। তা সত্ত্বেও এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিঃসেন্দহে সেই সব রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি একটি বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে যারা সাম্প্রদায়িকতাকে পুঁজি করে ভোটের রাজনীতি করে।
বিহারে মন্দির নির্মাণে মুসলিমদের অংশগ্রহণের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এর আগে বেগুসারাই জেলায় একটি শিবমন্দির নির্মাণের জন্য অর্থ সহায়তা দিয়েছিলেন একজন মুসলিম। বাচুয়ারা একটি মুসলিম অধ্যুষিত গ্রাম। এখানে মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম মন্দির নির্মাণের জন্য জায়গা দিয়েছেন।
এর তিন দশক আগে এই গ্রামের হিন্দুরা একটি মাজার নির্মাণের জন্য মুসলিমদের জন্য একখণ্ড জমি দিয়েছিল।