ছারপোকায় অতিষ্ঠ ওবামা

ছারপোকায় অতিষ্ঠ ওবামা

obamaজার্মানির শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ওয়াশিংটন যাচ্ছেন। দেশটির চ্যান্সেলর এঞ্জেলা মার্কেল-এর পেছনে মার্কিন গোয়েন্দাদের ‘নোংরা’ নাক গলানোর অভিযোগ তদন্ত করবেন তারা।

সরকারি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, জার্মানির বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানরা যাচ্ছেন এ তদন্তে। তারা হোয়াইট হাউস এবং ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি এনএসএ-এর সাথে কথা বলবেন।

ফ্রান্স ও জার্মানি এর আগেই যুক্তরাষ্ট্রকে বলে দিয়েছে, এ বছরের মধ্যেই তারা ‘নো স্পাই’ চুক্তি সই করতে চান। আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেতারা ব্রাসেলস সম্মেলনে এই বলে সতর্ক করেছেন যে, অবিশ্বাসের দোলাচল তাদের সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করবে।

ফ্রান্সের কোটি কোটি মানুষের ফোনে আড়িপাতার অভিযোগ নিয়ে রীতিমতো বেকায়দায় পড়েছে ওবামা প্রশাসন। সাবেক মার্কিন গোয়েন্দা স্লডেন গণমাধ্যমকে জানান, ফ্রান্সের লাখ লাখ সাধারণ নাগরিক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষের ফোনে আড়িপেতেছিল যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি।

খবরটি ছাপা হতে না হতেই প্রচণ্ড রকম খেপে যায় ফরাসি সরকার। ঠিক সেই সময়টিতেই প্যারিসে আরব লিগ নেতাদের বৈঠকে ছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। কোনো রকমে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে কেরি পালিয়ে বাঁচেন। আর তীব্র ক্ষোভ নিয়ে ওবামার কাছে কৈফিয়ত তলব করেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। প্যারিসের মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠায় ফরাসি কর্তৃপক্ষ, খুব জোরালো ভাষায় প্রতিবাদ জানিয়ে অনতিবিলম্বে মার্কিন সরকারের জবাব চাওয়া হয়। সেই সাথে এও বলে দেওয়া হয়, কথার ফুলঝুড়ির বদলে যথার্থ প্রতিকার চাইছে প্যারিস।

ফরাসি তীর সামাল দিতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন বারাক ওবামা নিজেই, ফোনে কথা বলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সাথে। ওবামা যতোই নমনীয় হতে চেয়েছেন, ততোই যেন কঠোর হয়েছেন তার ফরাসি কাউন্টারপার্ট। টানটান এই পরিস্থিতিতে ওবামার মাথায় নতুন বোঝা চাপিয়ে দেন জার্মানির চ্যান্সেলর এঞ্জেলা মার্কেল। এমনকি তার ফোনেও আড়িপাতার কথা জানা যায়। তুমুল তোলপাড় সৃষ্টি হয় বিশ্বজুড়ে, নিন্দায় মুখর হয়ে ওঠে ইউরোপ। ফ্রান্স ও জার্মানির পথ ধরে স্পেনও শুক্রবার তলব করে সেদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে। ক্রোধের ভাষায় প্রতিবাদ জানায়।

এমন পরিস্থিতিতে গোয়েন্দা প্রধানদের ওয়াশিংটন পাঠানোর ঘোষণা দিলো জার্মানি। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র জেন সাকি এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান তুলে ধরেন চাতুর্যপূর্ণ কথামালার অবতারণা ঘটিয়ে। তার ভাবটা এমন, বিশ্বায়নের এই সময়ে তথ্য যখন ক্রমেই পাবলিক প্রপার্টি হয়ে চলছে, তখন কী আর আসে যায়!

মাত্র ক’দিন আগে অর্থনীতির ধসে পড়া অবস্থা সামাল দিতে বেশ নাকাল হয়েছে ওবামা প্রশাসন, তার রেশ কাটতে না কাটতেই গুপ্তচরবৃত্তির স্পর্শকাতর ইস্যুতে জড়িয়ে অনেকটাই টালমাটাল যুক্তরাষ্ট্র। শুরুতে দেশটি বলেছিল, সন্ত্রাসী তৎপরতা ঠেকাতেই ফোনে ‘ছারপোকা’ দেওয়া হয়েছে। পরে সে বক্তব্য থেকে সরে যায় বিশ্বের স্বঘোষিত মোড়ল রাষ্ট্রটি।

কিন্তু কথার ছলচাতুরিতে ‘ভদ্রতাবিবর্জিত’ আড়িপাতার এই অভিযোগ কি সামাল দিতে পারবেন বারাক ওবামা? এই প্রশ্ন এখন আমেরিকা-ইউরোপের আকাশ পার হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বিশ্বে।

আন্তর্জাতিক