স্রোতের বিপরীতে ন্যান্সি

স্রোতের বিপরীতে ন্যান্সি

এই সময়ের গানে এক বিস্ময় ন্যান্সি। এতো অল্প সময়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে পৌঁছানোর দৃষ্টান্ত খুব বেশি নেই। অন্য অনেকের সঙ্গে কাজ করলেও হাবিবের হাত ধরেই তিনি পেয়েছেন চটজলদি সাফল্য। অডিও, প্লেব্যাক আর স্টেজ নিয়ে এখন ভীষণ সময় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। আসুন শুনি, ন্যান্সির সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে ওঠার গল্প।

জন্মসূত্রে যশোরের মেয়ে হলেও ন্যান্সি বেড়ে উঠেছেন সোমেশ্বরী নদীর পাড়ের নেত্রকোনায়। তার পুরো নাম নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি। মা জোৎস্না হক ছিলেন শখের শিল্পী। ছোট্ট ফুটফুটে মেয়েটির খেলার সঙ্গী ছিল তার মায়ের হারমোনিয়াম। মায়ের কণ্ঠের গানই ছিল তার ঘুমানোর মহৌষধ। গানের প্রতি এমন আগ্রহ দেখে বাবা-মা তিন বছর বয়সেই আদরের দুলালীকে ওস্তাদ তারাপদ দাসের কাছে তালিম নেয়ার জন্য দিলেন। এরপর পাঁচ বছর বয়সে নজরুলসঙ্গীত ও ক্লাসিক্যাল শেখার জন্য শিশু একাডেমিতে ভর্তি করানো হলো। পাশাপাশি নাচের উপরও তালিম নেন এসএসসি পর্যন্ত। ছোট সেই মেয়েটিই আজ দেশের অন্যতম জনপ্রিয় গায়িকা ন্যান্সি।

গানের ভুবনে পথচলা শুরুর কথা জানিয়ে ন্যান্সি বললেন, আসলে মায়ের প্রবল ইচ্ছাতেই আজকের এই অবস্থানে এসে পৌছেছি। মা গান গাইতেন। তার গানের মায়াজালেই আমার আজকের ন্যান্সি হয়ে ওঠা।
তবে আজকের ন্যান্সি হয়ে ওঠার পেছনে চমৎকার একটা গল্প আছে। নেত্রকোনায় থাকাকালীন ন্যান্সির বাসায় এক সন্ধ্যায় ঘরোয়া গানের আসরে তার মামা নজরুল ইসলামের সঙ্গে আসেন বিখ্যাত শিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদ। সেদিন ন্যান্সির গান শুনে তিনি বেশ খুশি হয়েছিলেন এবং ন্যান্সির মাথা ছুঁয়ে আশীর্বাদ করেছিলেন। ফেরদৌস ওয়াহিদ তখন ঢাকায় এসে ছেলে হাবিবের কাছে ন্যান্সির কন্ঠের স্বকীয়তা ও মাধুর্যের প্রশংসা করেন।

হাবিব ‘ভালবাসবো বাসবোরে …’ গানটির কোরাসের জন্য সে সময নতুন মেয়ে খুঁজছিলেন। তাই ন্যান্সিকে তিনি তার স্টুডিওতে ডেকে পাঠান। সেবার ঢাকায় এসে ন্যান্সিকে গানটির কোরাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হয়েছিল। কিন্তু সেদিন হাবিব ঠিকই ন্যান্সির জাতটা চিনেছিলেন। তাই তিনি আবারও ন্যান্সিকে ডেকে পাঠান। এবার হাবিব ন্যান্সিকে দিয়ে করিয়ে ফেলেন ফ্রেশ সয়াবিন তেলের চমৎকার একটা জিঙ্গেল। পুরো মিডিয়া জগতে ব্যাপক সাড়া পড়ে যায় নবীন এই শিল্পীর গায়কী নিয়ে। এরপর আর ন্যান্সিকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। জনপ্রিয় অনেক বিজ্ঞাপন, টিভিনাটক আর চলচ্চিত্রে প্লে-ব্যাক করে ন্যান্সি শ্রোতাদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন।

ন্যান্সির গাওয়া গানগুলো গত কয়েকবছরের সবচেয়ে সফল ও জনপ্রিয় গানের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। ‘বাহির বলে দূরে থাকুক’, ‘হৃদয়ের কথা’, ‘পৃথিবীর যত সুখ’, ‘এতদিন কোথায় ছিলে’, ‘দুই দিকেই বসবাস’, ‘চাঁদকে যেমন ঘোমটা দিয়ে’, ‘ভালবাসা অধরা’, গানগুলো বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এত জনপ্রিয় গান করেও ন্যান্সি চলছেন স্রোতের বিপরীতে । বেশি বেশি গান করা থেকে নিজেকে বিরত রেখেছেন। তাই এখন পর্যন্ত তার একক অ্যালবামের সংখ্যা মাত্র একটি। অডিওতে নিয়মিত হওয়ার ধারাবাহিকতায় বর্তমানে হাবিব ওয়াহিদের সংগীতায়োজনে নিজের দ্বিতীয় একক অ্যালবামের কাজ করছেন এ শিল্পী। এর মাধ্যমে তার স্বপ্নও পূরণ হতে চলেছে। কারণ সব সময়ই ন্যান্সির ইচ্ছা ছিল হাবিব ওয়াহিদের সংগীতায়োজনে নিজের অ্যালবামটি করার। অ্যালবামটি আসছে ভালবাসা দিবস উপলক্ষে প্রকাশের ঘোষণা দিয়েছেন হাবিব ও ন্যান্সি।

নিজের দ্বিতীয় একক অ্যালবাম প্রসঙ্গে ন্যান্সি বলেন, আমার এই অ্যালবামটি গত রোজার ঈদেই প্রকাশ করার কথা ছিল। কিন্তু হাবিব ভাই যখন আমার অ্যালবামটি করতে সময় দিতে রাজি হলেন, তখন তারিখ পরিবর্তন করলাম। যত দেরিই হোক, হাবিব ভাইয়ের কম্পোজিশনেই অ্যালবামটি আমি করতে চাই। কারণ হাবিব ভাই আমার কণ্ঠটাকে সবচেয়ে ভালো ব্যবহার করতে পারেন। এ পর্যন্ত ৪টি গান তৈরি হয়েছে। এখন সবকিছু নির্ভর করছে হাবিব ভাইয়ের উপর। বাকি গানগুলোর জন্য তিনি সময় দিতে পারলেই হয়। ভালবাসা দিবসেই আসলে অ্যালবামটি প্রকাশ করতে চাই আমি। রোমান্টিক গান দিয়ে পুরো অ্যালবামটি সাজানো হচ্ছে, তাই ভালোবাসা দিবসে রিলিজ পেলে বেশি ভালো হয়।

বাস্তবজীবনে ন্যান্সি বেশ গোছালো ও ধৈর্য্যশীল স্বভাবের মেয়ে। তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও পরম মমতায় আগলে রেখেছেন নিজের ঘর সংসার। স্বামী সৌরভ আর তিন বছরের একমাত্র কন্যা রোদেলাকে নিয়ে ন্যান্সির টোনাটুনির সংসার। সাংসরিক জীবনের কথা জানিয়ে ন্যান্সি বলেন, একটা সংসারে অনেক রকম কাজ থাকে। আমি আর সৌরভ কাজগুলো নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছি। আমি যখন সকালে উঠে গানের অনুশীলনে বসি সৌরভ তখন সব দেখাশোনা করে কিংবা বাহিরে যখন বের হই তখন সে আমার সঙ্গী হয়। আবার দূরে যখন থাকি তখন ঠিকই খানিকক্ষণ পর পরই ফোনে একে অন্যের খোঁজ-খবর নিই। আসলে সংসার জীবনে পারস্পারিক সহযোগিতা অনেক বড় একটা বিষয়।

ন্যান্সি আধুনিক গান করলেও মনের মধ্যে লালন করেন একটি স্বপ্ন। নজরুল সঙ্গীতের প্রতি তার রয়েছে অসম্ভব দূর্বলতা। স্বপ্ন দেখছেন একটা পূর্ণাঙ্গ নজরুল সঙ্গীতের অ্যালবাম বের করার। তবে ন্যান্সি বর্তমান সময়ে দাড়িয়ে সবচেয়ে বড় যে স্বপ্নটা দেখছেন সেটি হল একটি হাসপাতাল নির্মাণের। দুস্থ, অসহায়, অভাবী মানুষেরা সেখানে বিনা অর্থে চিকিৎসা গ্রহণ করবেন।

এক নজরে ন্যান্সি

ডাক নাম : ন্যান্সি
আদুরে নাম : মণি (দাদু ডাকতেন)
পুরো নাম : নাজমুন মুনিরা
জন্ম : ১৩ ডিসেম্বর লোহাগড়া, নড়াইল
বড় হয়ে ওঠা : নেত্রকোনা
রাশি : ধনু
বাবা : নাইমুল হক
মা : জোছনা হক
স্বামী : আবু সাঈদ সৌরভ
পড়াশোনা : এইচএসসি
গানে হাতেখড়ি : তিন বছর বয়সে প্রথমে মা এবং পরে ওস্তাদ তারাপদ দাস
প্রিয় শিল্পী : সৈয়দ আবদুল হাদী
নিজের গাওয়া প্রিয় পাঁচ গান:
বাহির বলে দূরে থাকুক
আমি তোমার মনের ভিতর
পৃথিবীর যত সুখ
হাওয়ায় হাওয়ায়
এত দিন কোথায় ছিলে

বিনোদন