মানুষ খুব কষ্ট পেলে কাঁদে,আবার কখনও খুব সুখের অনুভূতিতে কাঁদে। কিন্তু হাসতে পারে শুধু আনন্দ পেলেই। কাউকে হাসতে দেখলেও মন ভরে ওঠে ভালো লাগার অনুভূতিতে। সবার মাঝে রাশি রাশি হাসি ছড়িয়ে দিতে কলকাতার জি-বাংলা চ্যানেলের আয়োজন ‘মীরাক্কেল’। অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশেও তুমুল জনপ্রিয়। এতে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের প্রতিযোগিরাও। এবার অনুষ্ঠানটিতে বাংলাদেশের প্রতিযোগীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো ‘মীরাক্কেল’ এর অডিশন।
৩ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার এফডিসি’র ৪নং ফ্লোরে ‘ মিরাক্কেল ৬’-এর ঢাকা ডিভিশনের অডিশন পর্ব অনুষ্ঠিত হল। এই অডিশন আয়োজনটি ছিল ‘ মিরাক্কেল ৬’-এরই একটি বর্ধিত কার্যক্রম। অডিশনটি মিরাক্কেলের ৭ম পার্ট ভেবে অনেকেই দ্বিধান্বিত হয়েছেন। আসলে এটি ‘ মিরাক্কেল ৭’ নয়, এটি হল পার্ট ৬-এর এক্সটেনসন। এখানে টিকে যাওয়া নতুন প্রতিযোগীরা ফাইনালিস্টদের সাথে টক্কর দেবে। পরিচালক বর্ধিত এই পর্বের নামকরণ করেছেন ‘ থ্রি এক্স হেল’। এইদিন ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অংশগ্রহণকারীরা মাতিয়ে রেখেছে এফডিসি’র ৪নং ফ্লোর। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শত শত অংশগ্রহণকারী লাইন ধরে ধৈয্যের পরীক্ষা তবেই অডিশন দেওয়ার সুযোগ পায়।
অডিশন পর্ব পরিচালনা করতে ঢাকায় বিচারক হিসেবে আসেন জিটিভি বাংলার পরিচালক সুদীপ্ত ভৌমিক,ি মরাক্কেল আক্কেল চ্যালেঞ্জার-এর পরিচালক শুভঙ্কর চট্টোপাধ্যায় এবং প্রযোজক নবনীতা চক্রবর্তী। তারা সবাই এই নিয়ে তৃতীয়বারের মত বাংলাদেশে এসেছেন। সবাই ভীষণ উচ্ছ্বসিত পুরো এই আয়োজনকে ঘিরে। তবে মিরাক্কেলের প্রাণ উপস্থাপক মীর বাংলাদেশে আসতে পারেননি।
বাংলাদেশে আসার বিষয়ে ল পরিচালক শুভঙ্কর বললেন, ‘ বাংলাদেশে মিরাক্কেলের বিশাল জনপ্রিয়তার জন্য এদেশের মানুষের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। নিজের অনুষ্ঠানকে আমি নিজে মূল্যায়ন করতে চাইনা, আপনারা সবাই মিরাক্কেল দেখতে থাকুন। ২৬ জানুয়ারিতে কলকাতার অডিশন শেষ করেছি,অ ামি ঢাকার অডিশনে কলকাতার উচ্ছ্বলতার কোন কমতি দেখতে পাইনি। এই বিষয়টি আমাকে ভীষনভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। পুরো অনুষ্ঠানের সাফল্য আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব হত না।’
কেমন করছে এবারের অংশগ্রহণকারীরা? উত্তরে তিনি বললেন,‘অনেক মেধাদীপ্ত পারফর্ম করছেন তারা। বোঝা যাচ্ছে মিরাক্কেলকে সামনে রেখে তারা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন’। এ পর্যন্ত কতগুলো অসাম শালা পেলেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রথম রাউন্ডের লিস্ট বেশ লম্বা হয়েছে। সেখান থেকে দ্বিতীয় রাউন্ডের জন্যএকটা শর্ট লিস্ট করব। তারপর ফাইনালি সিলেক্ট করব।’ শুভঙ্কর জানালেন, বাংলাদেশ থেকে ৩০ জন পারফর্মার নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। তবে ভালো পারফর্মার পেলে এই সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে।
মিরাক্কেলের প্রযোজক নবনীতা চক্রবর্তীর কাছে প্রশ্ন ছিল, এবারের অডিশনে অন্যবারের চেয়ে কোন পার্থক্য টের পেয়েছেন কিনা? উত্তরে তিনি বললেন,‘আমি আগেও দুইবার বাংলাদেশে এসেছি।কিন্তু এবারে সর্বোচ্চ সংখ্যক অংশগ্রহণকারী প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন। মিরাক্কেল তাদের কাছে আগের চেয়েও অনেক বেশি পরিচিত হয়ে উঠেছে। মিরাক্কেল নিয়ে তাদের মধ্যে যে ভালবাসা ,যে উচ্ছ্বাস দেখেছি তার কোন তুলনা হয়না। এরকম চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আমরা আরও বৃহত্তর চিন্তা ভাবনা করতে পারব আশা করছি।’
অডিশন রুমে চোখে পড়ল ‘মিরাক্কেল ৫’ এবং প্রচার চলতি ‘মিরাক্কেল ৬’ থেকে ছিটকে পড়া পরিচিত মুখের প্রতিযোগীদের। এদের মধ্যে আছেন শশী, রুমী, ইয়াফী, রাজু, শাকিলা, বাবু, ইমন, কায়েস, উজ্জ্বলসহ আরও অনেকে। তারা সার্বিক সহযোগিতা করছেন এবারে অডিশনের জন্য আসা পুরো টিমকে। তাদের ভেতরেও আনন্দ উচ্ছ্বলতা প্রকাশের কোন ঘাটতি নেই। অডিশনের ফাঁকে ফাঁকে তাদের ছোট ছোট পরিবেশনা, একে অন্যের সাথে হাসিঠাট্টা মুখোরিত করে রেখেছে পুরো টিমকে। বোধ হয় একেই বলে জীবনাশক্তি।
সাবেক প্রতিযোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেল তাদেরকে নিজ দায়িত্বে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হয়েছিল। তাদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া ছাত্র কিংবা চাকরিজীবি। নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ তাদের কোন সহযোগিতা করেনি, যার কারণে মনের মধ্যে একটা দুঃচিন্তা নিয়ে মিরাক্কেলে পারফর্মেন্স করতে হয়েছে। ক্ষণে ক্ষণে মনোযোগ ব্যাহত হয়েছে। প্রতিযোগীদের অনেকেরই চাকুরী চলে গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিস্টার নষ্ট হয়েছে, আবার কেউবা চাকরি বাঁচাতে প্রতিযোগিতার মাঝখানে স্ব-ইচ্ছায় চলে এসেছেন।
সাবেক মিরাক্কেল সদস্য ইয়াফীর কাছে জানতে চাইলাম, আপনারা যারা ‘মিরাক্কেল’-এ সফল হয়েছেন তারা এদেশে কমেডি অনুষ্ঠানের কি কোন উদ্যেগ নিয়েছেন ? ইয়াফী জানালেন,তারা বেশ কয়েকজন মিলে ‘নাভিদস্ কমেডি ক্লাব’ এ নিয়মিত অনুশীলন এবং কমেডি পরিবেশন করে থাকেন।গত বছর এনটিভি তে ২৮ পর্বের ‘হা- শো’ নামের একটি প্রতিযোগীতামূলক অনুষ্ঠান করেছিলেন সেই প্রতিযোগীতায় সেরাদের ৩ জন ‘মিরাক্কেলের পার্ট ৬’ এ পারফর্ম করার সুযোগ পেয়েছে। তিনি একটু হতাশ হয়ে বললেন, ‘আমাদের সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের কারণে জোকস্ গুলোকে মেলে ধরতে পারি না। মিরাক্কেলে পরিবেশিত কোন অ্যাডাল্ট জোকস্ আমরা এখানে বসে খুব এনজয় করি। কিন্তু আমাদের দেশে ওই একই জোকস্ বলার কারণে আপনি প্যাদানি খাবেন। জোকস্ সিলেকশনে অনেক সমস্যার সম্মুখিন হতে হয় আমাদের।’
আগামী ৬ ফেব্রয়ারি বরিশালে এবং ৮ ফেব্রুয়ারি খুলনায় মিরাক্কেলের অডিশন রাউন্ড অনুষ্ঠিত হবে।