‘মুসলমানের কথা’ বন্ধ কলকাতায়!

‘মুসলমানের কথা’ বন্ধ কলকাতায়!

kalkata muslim‘মুসলমানদের কথা’ আটকে দিয়েছে কলকাতার পুলিশ। সরকারি চলচ্চিত্র কেন্দ্র নন্দনে ওই ছবিটি দেখানোর কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে পুলিশের আপত্তিতে তথ্যচিত্রটি দেখানো হচ্ছে না।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মুসলমানদের পিছিয়ে থাকার ছবি তুলে ধরে তার কারণ খোঁজার চেষ্টা হয়েছিল – এরকম একটি তথ্যচিত্রের প্রদর্শনী বন্ধ হওয়ার কারণে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

ছবিটির পরিচালক সৌমিত্র দস্তিদার সাথে কথা বলে বিবিসি’র সাংবাদিক অমিতাভ ভট্টশালী লিখেছেন, ‘মুসলমানের কথা’ নামে তথ্যচিত্রটি তৈরি হয়েছে স্বাধীনতার দীর্ঘ ছয় দশক পরেও পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানরা কেমন আছেন – তারই খোঁজ করতে। ছবিটিতে যেমন গ্রামের সাধারণ মুসলমানদের কথা ও তাদের জীবনচর্চ্চার ছবি রয়েছে, তেমনই আছে মুসলমান বুদ্ধিজীবী, অধ্যাপক ও বিশ্লেষকদের কথাও।

তার তথ্যচিত্রে পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের একটা অত্যন্ত করুণ অবস্থা উঠে এসেছে উল্লেখ করে মি. দস্তিদার আরও বলছিলেন,  “যে গ্রামেই গেছি, সেখানেই খোঁজ পেয়েছি অনেক ১৩-১৪ বছরের কিশোরের – যারা বড় বড় শহরে নির্মাণ শিল্পে কাজ করতে গেছে। যদি এখানে অর্থনৈতিক অবস্থাটা ভালই হবে, তাহলে ওইটুকু বাচ্চা ছেলেদের গ্রাম-পরিবার ছেড়ে কেন কাজ করতে যেতে হবে বাইরে?” প্রশ্ন সৌমিত্র দস্তিদারের।

কর্মসংস্থানের ব্যাপারেও যে পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানরা অনেকটাই পিছিয়ে, সেই তথ্য আবারও উঠে এসেছে ‘মুসলমানের কথা’ ছবিটিতে।

বিবিসিকে পরিচালক আরো বলছিলেন, “রাজ্যে যে প্রায় ২৫% বাঙালি মুসলমান আছেন, তাঁদের মাত্র দুই শতাংশ সরকারি চাকরিতে রয়েছেন। বেসরকারি ক্ষেত্রের অবস্থাটাতো আরও খারাপ। যদি শিক্ষক-অধ্যাপকদের মধ্যে মুসলমান খুঁজতে যান – খুব কষ্ট করে খুঁজে বার করতে হবে। এমনকি মূলধারার সংবাদমাধ্যমেও মাত্র জনাকুড়ি মুসলমান সাংবাদিক খুঁজে পেয়েছি এই তথ্যচিত্র তৈরি করতে গিয়ে।”

ছবিটি কলকাতার সাংস্কৃতিক প্রাণকেন্দ্র ও সরকারি চলচ্চিত্র কেন্দ্র নন্দনে দেখানোর আয়োজন করেছিল কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের অধীন ফিল্মস ডিভিশন ও সিনে সেন্ট্রাল সংগঠন।

পরিচালক সৌমিত্র দস্তিদার বলছেন, শেষ মুহূর্তে তাঁকে জানানো হয়েছে যে তথ্যচিত্রটি দেখানো যাচ্ছে না।

এদিকে প্রদর্শনীর অন্যতম আয়োজক, কেন্দ্রীয় সরকারের ফিল্মস ডিভিশনের পূর্বাঞ্চলীয় কর্তা সুময় মুখার্জী বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, “ছবিটির প্রদর্শনী আমরা বন্ধ করি নি। সেন্সর সার্টিফিকেট না থাকার কারণে পুলিশের পক্ষ থেকে আপত্তি করা হয়েছে। সেজন্যই দেখাতে পারছি না।”

সেন্সর সার্টিফিকেট ছাড়া তথ্যচিত্র দেখানো যাবে না – পুলিশের এই আদেশকে নিছকই একটা অজুহাত বলে মনে করছেন পরিচালক সৌমিত্র দস্তিদার।

তার কথায়, “নন্দন-৩ হলে তথ্যচিত্রের ক্ষেত্রে সেন্সর সার্টিফিকেট লাগে না। আর যদি সেন্সর সার্টিফিকেট ছাড়াই দেখানো না যায়, সেটা ফিল্মস ডিভিশন আগে বলল না কেন? সেন্সর সার্টিফিকেট যে কেন্দ্রীয় সংস্থা দেয়, ফিল্মস ডিভিশনও তো কেন্দ্রের সেই একই মন্ত্রণালয়ের অধীন। সিনে সেন্ট্রালও তো দীর্ঘ দিন ধরে চলচ্চিত্র উৎসব করছে – তারাও তো আগে সেন্সর সার্টিফিকেটের কথা বলে নি। শেষ মুহূর্তে এই প্রসঙ্গ তোলায় স্বাভাবিকভাবেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে।”

পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের শিক্ষা-কর্মসংস্থান প্রভৃতি ক্ষেত্রে যে খুবই করুণ অবস্থা, সেই তথ্য প্রথম উঠে এসেছিল কেন্দ্রীয় সরকারের তৈরি সাচার কমিশনের প্রতিবেদনে। তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার সেই তথ্য অস্বীকার করেছিল।

২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী মুসলমানদের জন্য অনেক ধরণের প্রকল্প – ভাতা প্রভৃতি চালু করেছেন।

কিন্তু মুসলমানদের ধর্মীয় আর রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে বুদ্ধিজীবী – অনেকেই সমালোচনা করছেন যে ওইসব প্রকল্প বা ভাতায় আপামর মুসলমান মানুষের খুব কিছু উপকার হচ্ছে না।

এই সমালোচকদের মধ্যে রয়েছেন রাজ্য পুলিশের এক খুবই সিনিয়র অফিসার নজরুল ইসলাম – যাঁকে মুসলমানদের বিষয়ে সরকারের প্রকাশ্য সমালোচনার জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে আর ক্ষমতাসীন দলের কোপে পড়তে হয়েছে।

ঘটনাচক্রে, মি. ইসলামের সাক্ষাৎকারও রয়েছে সৌমিত্র দস্তিদারের তৈরি তথ্যচিত্রটিতে।

 

বিনোদন