আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসলেই যে আপনাকে (খালেদা জিয়া) কোলে করে নিয়ে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে, এই আশা করবেন না। এমন কিছু চিন্তা করবেন না যাতে গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়ে।
শনিবার ছাত্রলীগের ৬৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের সামনের চত্বরে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, `আপনি (খালেদা জিয়া) আন্দোলন-সংগ্রাম করেন, কিন্তু আন্দোলনের মধ্যে মানুষ হত্যা করবেন কেন? আপনার উপলব্ধি করা উচিৎ, আপনার কারণে পাঁচটি জীবন ঝরে গেল। আপনার আর কত রক্ত দরকার।’
তিনি বলেন, ‘আপনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলছেন, এই সরকার আসলেই যে ভোট চুরি করে আপনাকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে তা আর হবে না।’
যুদ্ধাপরাধীদের প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা চেষ্টা করবেন না। এটা বাংলাদেশের মানুষ গ্রহণ করবে না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাংলার মাটিতে হবেই হবে। যতই চেষ্টা করেন তাদের বাঁচাতে পারবেন না। এই চিন্তা ত্যাগ করে জনগণের কাতারে আসুন, জনগণের জন্য কাজ করুন।’
ছাত্রলীগের পুনর্মিলনি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়ার উদ্দেশে আরও বলেন, `বিধ্বংসী চিন্তা ত্যাগ করে জনগণের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখুন। তাদের জন্য কাজ করুন, তা না হলে জনগণ আপনাকে প্রত্যাখ্যান করবে।’
‘এমন কোনো কাজ করবেন না যেন গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়ে। সেটা আপনার নিজের জন্যও ভালো হবে না।’
‘বিএনপি-জামায়াত সব সময় মনে করে রাজপথে কিছু ঘটালেই দেশে একটা কিছু ঘটে যাবে। তাদের আবার ক্ষমতায় নিয়ে এসে বসাবে। কিন্তু তাদের এই আশা কখনোই পুরণ হবে না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের ঘটনা আর যেন না ঘটে সে ব্যবস্থা নিয়েছি, যারা এতিমের টাকা মেরে খেয়েছে তাদের বিচার হচ্ছে–এটা অনেকের পছন্দ না। তাই তারা ষড়যন্ত্র করছে।’
‘তারা আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার উৎখাত করে কী নিয়ে আসতে চায়? অনেক কষ্টে যে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা হয়েছে তারা সেই গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়।’
তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধী, দুর্নীতিবাজদের রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব না। জনগণ আমাদের যুদ্ধাপরাধী, দুনীতিবাজদের বিচার করার দায়িত্ব দিয়েছে।’
শেখ হাসিনা বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেন, ‘এমন কিছু করতে যাবেন না যার ফল আপনার জন্য ভালো হবে না।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। সার্চ কমিটির সুপারিশে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ হবে। আমরা সরকারে থেকে কোনো হস্তক্ষেপ করিনি। এর আগে কখনো এটা করা হয়নি। নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনে আমরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পেরেছি।’
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্রলীগের গৌরাবোজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে। ছাত্রলীগের সেই গৌরবকে সমুন্নত গণতন্ত্রের স্বার্থে কাজ করে যেতে হবে। গণতন্ত্রকে কেউ যাতে বাধাগ্রস্থ করতে না পারে সে জন্য সবাইকে সজাগ সতর্ক থাকতে হবে।
‘লেখাপড়ার পাশাপাশি ছাত্র রাজনীতি করতে হবে। অনেকেই ছাত্র রাজনীতির বিরোধিতা করে। ছাত্র রাজনীতির পথ ধরেই আমরা আজ এখানে এসেছি। কিন্তু রাজনীতি যদি নিজের আখের গোছানোর নীতি হয় তবে সেই রাজনীতি মানুষকে কিছু দিতে পারবে না।’
‘রাজনীতিও করতে হবে, লেখা পড়াও করতে হবে। রাজনীতির পাশাপাশি লেখা পড়ায় ভালো ফলাফল করতে হবে।’
‘ভালো ফল করতে না পারলে হারিয়ে যাবেন। কিছু লোক থাকেন, যারা মনে করেন ক্ষমতায় থাকলে অন্যায় করলেও কিছু হবে না। কিন্তু আমার কাছে সেটা চলবে না। সুযোগসন্ধানীদের দিয়ে দল ভারি দরকার নেই। মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। সেভাবেই নিজেদের গড়ে তুলতে হবে।’
ছাত্রলীগের সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগের সভাপতি অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি তোফায়েল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক ইসমত কাদির গামা, সভাপতি ওবায়দুল কাদের, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, আব্দুল মান্নান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান প্রমুখ।