চট্টগ্রাম নগরীর আসকার দিঘীরপাড় এলাকায় দিলদার আহমেদ (৫৬) নামে শেয়ারবাজারের এক বিনিয়োগকারী গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে পুলিশ তার বাসা থেকে লাশ উদ্ধার করেছে।
নিহতের স্বজনদের দাবি, শেয়ারবাজারে লোকসানের কারণে মানসিক অস্থিরতা এবং হতাশা থেকে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। শেয়ারবাজারে প্রায় দু’কোটি টাকা বিনিয়োগ করে প্রায় সব টাকাই তিনি হারিয়েছেন বলেও দাবি করেছেন নিহতের এক নিকটাত্মীয়।
চট্টগ্রাম নগরীর কোতয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাকির হোসেন বাংলানিউজকে বিনিয়োগকারী দিলদারের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তবে তিনি দাবি করেছেন, শুধু শেয়ারবাজার নয়, ব্যক্তিগত বিভিন্ন ব্যবসায়ও লোকসান এবং পারিবারিক অশান্তির কারণে দিলদার আত্মহত্যা করেছেন।
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ প্রসঙ্গে নিহতের ভাই, ছেলে কিংবা নিকটাত্মীয়রা তেমন কোনো তথ্য সাংবাদিকদের দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দিলদার আহমেদ নগরীর আগ্রাবাদের লংকা-বাংলা সিকিউরিটিজ লিমিটেডে বিও অ্যাকাউন্ট খুলে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছিলেন। নগরীর নাসিরাবাদে লংকা-বাংলার অফিস থেকে বিনিয়োগ সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করতেন।
দিলদার আহমেদ শুরুতে এক কোটি ৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। গত বছর তিনি এ বিনিয়োগের বিপরীতে এক কোটি ৫০ লাখ টাকা লাভ পান। এতে তার বাজার মূলধন দু’ কোটি ৮০ লাখ টাকায় দাঁড়ায়। এর বিপরীতে তিনি ১৮ টাকা ৭৫ পয়সা সুদে আরও প্রায় দেড় কোটি টাকা লংকা-বাংলা সিকিউরিটিজ হাউজ থেকে ঋণ গ্রহণ করেন।
শেয়ারবাজারে অব্যাহত দরপতনের কারণে ঋণসহ বাজার মূলধন হারিয়ে ফেলেন দিলদার আহমেদ। এতে লংকা-বাংলা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের কাছে তিনি মূলধনসহ আরও আট লাখ টাকা সুদবিহীন ঋণগ্রস্ত বিনিয়োগকারীতে পরিণত হন।
দিলদার আহমেদের বাড়ি কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায়। নগরীর আসকার দিঘীর পশ্চিম পাড়ে তিনি জনৈক রেজ্জাকুল হায়দারের বিল্ডিংয়ের চারতলায় ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকতেন।
নিহতের নিকটাত্মীয় ফখরুল আলম চৌধুরী জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে ঘুম থেকে উঠে নামাজ আদায় শেষে দিলদার আহমেদ নিজের কক্ষে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন। এরপর দুপুর ১২টা পর্যন্ত তিনি কক্ষ থেকে বের না হলে পরিবারের লোকজনের সন্দেহ হয়।
তারা দরজা ভেঙ্গে ওই কক্ষে ঢুকে ফ্যানের সঙ্গে মেরুন কালারের একটি ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় দিলদার আহমদকে দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ এসে নিহতের লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠিয়েছে।
দিলদার আহমেদ এক ছেলে ও এক মেয়ে। দু’জনই বেসরকারি ইউআইটিএস বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ’র শিক্ষার্থী।
ফখরুল আলম জানান, দিলদার আহমেদের এমব্রয়ডারি পণ্যেরও ব্যবসা ছিল। কিন্তু তিন-চার বছর আগে এ ব্যবসায় লোকসানের শিকার হলে তিনি অংশীদারদের কাছে শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে ব্যবসা গুটিয়ে নেন। এরপর তিনি শেয়ারবাজারে টাকা বিনিয়োগ করেন।
তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন আগে দিলদার আহমেদের ছোট ভাই আমেরিকা থেকে দেশে এসেছেন। তিনি ছোট ভাইকে তার অবর্তমানে ছেলেমেয়েদের দেখাশোনা করার কথা বলেন। আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বললেই তিনি বলতেন, ‘শেয়ারবাজারে আমার সব টাকা শেষ হয়ে গেছে। আমাকে আত্মহত্যা করতে হবে।’
নিহতের স্ত্রী ও ছেলের বরাত দিয়ে এসআই জাকির হোসেন জানান, শেয়ারবাজার এবং ব্যক্তিগত ব্যবসায় আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়ে বেশকিছুদিন ধরে দিলদার আহমেদ অশান্তিতে ভুগছিলেন।
বাসা ভাড়া, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া, সংসার খরচসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি সবসময় টেনশন করতেন। এজন্য তিনি বাসায় বিষন্ন থাকতেন। পরিবারের লোকজনের সঙ্গে তার প্রায়ই ঝগড়া হত। এ হতাশা থেকেই দিলদার আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় বলে দাবি এস আই জাকির হোসেনের।