এডওয়ার্ড স্নোডেন যেন আমাদের স্মরণ করে দিল মহাভারতের একটি ইতিহাস। যে ইতিহাসে রাম ছিল বনবাসে, আর তাই সিংহাসনে তাঁর পাদুকা রেখে রাজ্যশাসন করেছিলেন তার ছোট ভাই ভরত। বার্লিনের এক নব আয়োজনের মধ্য দিয়ে আবারো সেই কথা মনে করিয়ে দিল আমাদের। এই বার্লিনে খালি চেয়ার রেখে পুরস্কৃত করা হয়েছে এডওয়ার্ড স্নোডেনকে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা (এনএসএ)-র বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট ও ফোনে আড়ি পাতার বিষয়টি ফাঁস করে দিয়ে তোলপাড় তোলা স্নোডেন এখন রাশিয়ায়৷ সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় পেলেও তাঁর অন্য কোথাও যাওয়ার উপায় নেই৷ তাই শুক্রবার জার্মানির ‘হুইসেলব্লোয়ার’ পু্রস্কারটি দেয়া হয় তাঁর অনুপস্থিতিতেই৷ তবে তাঁকে পুরস্কার দেয়ার বিষয়টি জানানো হয়েছে৷ ইন্টারনেট অ্যাক্টিভিস্ট জ্যাকব আপেলবাউম জানান, তাঁর কাছ থেকে টেলিফোনে পুরস্কারের খবরটি জেনে স্নোডেন খুব খুশি হয়েছেন৷
পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে স্নোডেনের একটি চিঠি পড়ে শোনানো হয়৷ চিঠিতে পুরস্কার প্রাপ্তির কৃতিত্ব দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার, মিথ্যার বিরুদ্ধে আপোশহীন এবং গোপণীয়তার গুরুত্ব বুঝতে সক্ষম পৃথিবীর প্রতিটি মানুষকে দিয়েছেন স্নোডেন৷ এনএসএ-র আড়ি পাতার বিষয়টি প্রকাশ করা এবং তা নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখার জন্য সংবাদমাধ্যম এবং রাজনীতিবিদদের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন স্নোডেন।
তবে প্রশংসা বেশি হয়েছে তাঁরই৷ ‘হুইসেলব্লোয়ার’ পুরস্কার বিতরণীর এই অষ্টম আয়োজনে উপস্থিত প্রায় ৩০০ বিজ্ঞানী, বুদ্ধিজীবী এবং রাজনীতিবিদের সঙ্গে এক টেলি-কনফারেন্সে কথা বলেছেন গ্লেন গ্রিনওয়াল্ড৷ ব্রিটেনের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় লেখা তাঁর প্রতিবেদনের মাধ্যমেই প্রথম জানা গিয়েছিল স্নোডেনের এনএসএ বিষয়ক তথ্য ফাঁসের খবর৷ শুক্রবার বার্লিনে যখন পুরস্কার বিতরণের অনুষ্ঠান চলছিল, গ্লেন গ্রিনওয়াল্ড তখন দক্ষিণ আফ্রিকায়৷ সেখান থেকে স্নোডেনের প্রশংসা করতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘এক জন মানুষের যে বিশ্বে বড় পরিবর্তন আনার ক্ষমতা রাখতে পারে সেটাই আমাদের দেখিয়ে দিয়েছেন স্নোডেন।”
হ্যামিলনের বাঁশীওয়ালার কথা মনে করিয়ে দেয়া ‘হুইসেলব্লোয়ার’ পুরস্কারটি দেয়া হয়েছে জার্মান বিজ্ঞানীদের সংস্থা ভিডিডাব্লিউ, আণবিক অস্ত্র বিরোধী আইনজীবীদের সংগঠন, সংক্ষেপে আইএআইএএনএ এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের পক্ষ থেকে৷ স্নোডেনের হয়ে পুরস্কার গ্রহণ করেন জ্যাকব আপেলবাউম৷ আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে সনইয়া সেমুর মিকিচের বক্তব্য খুব মনে রাখার মতো৷ একটু নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য এডওয়ার্ড স্নোডেন যখন দিশেহারা, তখন জার্মানি এবং পশ্চিমা বিশ্বের অনেকগুলো দেশ জানিয়ে দেয় যে, তাদের পক্ষে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়া সম্ভব নয়৷ সে কারণে দেশগুলোর তীব্র সমালোচনা করেছেন সাংবাদিক সনইয়া সেমুর মিকিচ।