ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঝুঁকিপূর্ণ সেতুগুলো রক্ষার্থে অতিরক্তি পণ্যবাহী যানবাহনের ওজন নিয়ন্ত্রণে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলায় নির্মিত ওভারলোড কন্ট্রোল স্টেশন কোনো কাজে আসছে না।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, ওভারলোড কন্ট্রোল স্টেশন নির্মাণের উদ্দেশ্যকে পাশ কাটিয়ে এটিকে পুঁজি করে ফায়দা লুটছে পুলিশ, ওজন স্টেশন কর্তৃপক্ষ, সরকার দলীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও কথিত স্থানীয় সাংবাদিকরা। এর মাধ্যমে অসদুপায়ে তারা হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
ফলে ঝুঁকিপূর্ণ সেতুগুলোর ঝুঁকি তো কমছেই না বরং সেগুলোর ঝুঁকি আরও বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে ওভারলোড কন্ট্রোল স্টেশন নির্মাণের।
ওভারলোড কন্ট্রোল স্টেশন স্থাপনের পর এক মাসে ২ সহস্রাধিক ওভারলোড গাড়ি সনাক্ত করা হলেও কোনো গাড়িকে ফিরিয়ে দেওয়া কিংবা চালকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় সূত্র বাংলানিউজের কাছে অভিযোগ করে, ওভারলোড কন্ট্রোল মেশিনে প্রতিদিন শতাধিক ওভারলোড গাড়ি ধরা পড়ছে। কিন্তু স্থানীয় দালাল, হাইওয়ে পুলিশ ও কর্তৃপক্ষ চালকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিয়ে অতিরিক্ত পণ্যবাহী যানবাহন মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ সেতুগুলোর ওপর দিয়ে পার হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে।
কর্তৃপক্ষের অর্থলোভে ও দালালদের দৌরাত্ম্যে যে কোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
ওবায়দুল কাদের যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নকল্পে দাউদকান্দি ওভারলোড কন্ট্রোল স্টেশন নির্মাণকে প্রশংসনীয় উদ্যোগ হিসেবেই দেখছেন এ অঞ্চলের জনগণ।
তিনি সরজমিন তদন্ত করে দেড়যুুগ আগে নির্মিত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা-গোমতী, মেঘনা ও কাচপুর এ তিনটি সেতু মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচনা করেন।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৭ ডিসেম্বর সেতুগুলো রক্ষার্থে দাউদকান্দি টোল প্লাজায় ওভারলোড কন্ট্রোল স্টেশন স্থাপন করা হয়। টোল প্লাজায় ওভারলোড কন্ট্রোল স্টেশন উদ্বোধনের প্রথম এক সপ্তাহ সর্তকীকরণ সময় নির্ধারিত করা হয়।
ওই সময়ে অতিরিক্ত পণ্যবাহী যানবাহনকে সতর্ক করে দিয়ে কোনো জরিমানা ছাড়াই ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
সতর্কীকরণ সময়ের পর থেকে নির্দিষ্ট ওজন সীমার অতিরিক্ত ভারি যানবাহনকে জরিমানা ও কারাদ-সহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রয়েছে। কিন্তু তা সত্তেও¡ গত একমাসে অতিরিক্ত পণ্যবোঝাই যানবাহনকে বিকল্প রাস্তায় ফেরত কিংবা তাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
হাইওয়ে পুলিশ, অর্থলোভী কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতা ও কথিত সাংবাদিক পরিচয়ধারী চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্যে প্রতিদিনই এ ওভারলোড কন্ট্রোল স্টেশনের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে।
এদিকে, ঝুকিপূর্ণ সেতুগুলোর ওপর দিয়ে ধারণক্ষমতার অধিক ওজনের মালামাল নিয়ে যানবাহন চলাচল করায় সেতুগুলোরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
জানা গেছে, ৩৬ লাখ টাকা মূল্যের এ ওভারলোড কন্ট্রোল মেশিনের মাধ্যমে অতিরিক্ত পণ্যবাহী যনবাহনগুলোকে সনাক্ত করে প্রথমে রাস্তার পাশে কিছুক্ষণ আটকে রাখা হয়। পরে হাইওয়ে পুলিশ ও কন্ট্রোল স্টেশনের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে চালক ও দালালদের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে মাসোহারা নিয়ে গাড়িগুলোকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।
ওভারলোড কন্ট্রোল স্টেশন সূত্র বাংলানিউজকে জানান, ৬ চাকাবিশিষ্ট গাড়ি সর্বোচ্চ ১৮ টন, ১০ চাকাবিশিষ্ট গাড়ি সর্বোচ্চ ২৫ টন ও ১৪ চাকার লড়ির জন্য সর্বোচ্চ ৩৩ টন ওজন ক্ষমতার সীমা নির্ধারণ করা হয়।
কিন্তু প্রতিদিন গড়ে কমপক্ষে ৭০টি ওভারলোড গাড়ি আটক করা হলেও সেগুলোর বিরুদ্ধে কোনো শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
শনিবার পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ২শ অতিরিক্ত পণ্যবাহী গাড়ি সনাক্ত করা হয়।
প্রাথমিকভাবে তাদের আটক করা হলেও কর্তৃপক্ষকে মাসোহারা দিয়ে তারা বেরিয়ে যাচ্ছে অবলীলায়।
ট্রাক চালক আবুল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি বন্দর থেকে মাল বোঝাই করে ঢাকায় যাচ্ছি। আমার ৬ চাকার গাড়ি। ওভারলোড মেশিনে ২২ টন ধরা পড়েছে। তারা আমাকে ট্রাক সাইড করার কথা বলে। পরে স্থানীয় সাংবাদিক পরিচয়ে এক লোক আমার কাছে এসে ২ হাজার টাকার বিনিময়ে গাড়ি ছাড়িয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন। আমি তাকে ১৫শ টাকা দিলে তিনি ব্যবস্থা করে দেন।’
টাকা নিয়ে ওভারলোড গাড়ি ছাড়া অবস্থায় কথা হয় কথিত এক সাংবাদিকের সঙ্গে।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা যে টাকা-পয়সা নিই তার দায়িত্বরত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ভাগাভাগি করেই নিই।’
এ ব্যাপারে দায়িত্বরত কর্মকর্তা মো. মঈন উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা ওভারলোড গাড়িগুলোকে সনাক্ত করে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু স্থানীয় কিছু আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও কথিত সাংবাদিক এসে আমাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে তারা নিজেরাই টাকা নিয়ে গাড়ি ছেড়ে দেয়।’
এ টাকার অংশ আপনারা পান কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বাংলানিউজকে জানান, ‘সেটা আমার জানা নেই।’