সকাল বেলায় হকারদের ক্রিং ক্রিং শব্দ কানে আসতেই বিরক্তিভরে আড়মোচা ভেঙে ঘুম থেকে ওঠা। মানে হচ্ছে, খবরের কাগজ এসে গেছে। তারপর চায়ের কাপটি হাতে নিয়ে ঝঁটিকা হেডলাইন পড়ে ফেলা৷ দিনশুরুটা এভাবেই হয়ে এসেছে এতদিন৷ কিন্ত্ত হঠাত্ যদি সেই রুটিনটা পরিবর্তন হয়৷ অর্থ্যাৎ যদি খবরকাগজ না আসে আর? ‘ভেবেই অস্বস্থি হচ্ছে’ মন্তব্য এক কেরানির৷ আমেরিকার সর্বাধিক প্রচারিত এক সংবাদপত্রের চোখ বুলিয়ে দিন শুরু করেছেন এতকাল৷ এতকাল বলতে? জানালেন ‘প্রায় চল্লিশ বছর৷
কিন্তু হঠাৎ পরিবর্তন!! মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সাম্প্রতিক এক সাক্ষাত্কারের মন্তব্য৷ সাক্ষাত্কারে ওবমা বলেন,’খবরকাগজের দিন শেষ৷’
বুধবারের এই সাক্ষাত্কারে ওবামা বলেন, ‘কাগজ বিক্রির হিসেব কমছে৷ হালফিলের কাগজগুলো টিমটিম করে টিকে আছে৷ কিন্তু পড়তি কারখানার মতো এই টিকে থাকার সঙ্গে কখনই স্বর্ণযুগের সংবাদপত্রের দাপটকে গুলিয়ে ফেললে চলবে না৷’
ওবামার ভবিষ্যত্বাণীটি নিয়ে শোরগোল গোটা দুনিয়ায়৷
উল্লেখ্য, সাক্ষাত্কারটি প্রকাশিত হয় নামকরা একটি সাইটে৷ আর সংবাদপত্রে মৃত্যুর মূল কারণ হিসেবে অন্তর্জাল ব্যবস্থার রমরমাকেই দায়ী করেছেন ওবামা৷কিন্তু সিনেমার জন্মের পরও তো সমানভাবেই ছিল বইয়ের আকর্ষণ? মানুষতো ভুলে যায় নি বই পড়তে? তবে কেন অন্তর্জাল ব্যবস্থা কেড়ে নেবে সংবাদ পত্রেরগুরুত্ব? ওবামার ছোটো-হাসি জবাব, ‘কারণটা সহজ৷ ব্যবসা৷ ………’তারপর ছোটো বিরতি নিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘দেখুন, মধ্য বিত্তের সুখের দিন গিয়েছে৷ রোদে পিঠ দিয়ে বসে খবর কাগজ পড়াটা এখন বিলাসিতা৷’তাঁর মন্তব্য অপ্রাসঙ্গিক নয়৷ হিসেবে বলছে, আমেরিকায় হাতে গোনা কয়েক টি কাগজের ভালো বিক্রি আছে৷কিন্তু সেটুকু দিয়ে কী ঠোকনো যাবে খবর কাগজের আয়ু? ফলে ওবামার দাবি’মৃত্যু ঘণ্টা বেজে গিয়েছে৷’
এদিকে, আমেরিকার একের পর এক সংবাদপত্র দপ্তর গুলির দরজায় তালা ঝুলছে৷বেকার হচ্ছেন শয়ে শয়ে সাংবাদিক৷ কাজ হারিয়ে পথে বসছেন অসংখ্য ছাপাখানার কর্মী৷বিজ্ঞাপনদাতারাও অধিক ভরসাযোগ্য মনে করছেন সাইটগুলিকেই৷নিয়মিত সেখানেই বিজ্ঞাপন দিচ্ছেনতাঁরা৷ ফলে, শুকিয়ে যাচ্ছে খবর কাগজ৷শুকিয়ে যাচ্ছে, সাদাপাতার ওপর কালো কালো অক্ষরের বর্ণময় জাদু৷ ছাপার কালিরগন্ধ৷
বিশেষজ্ঞরা যদিও গোটা বিষয়টিকে নতুন প্রজন্মের পড়ার অভ্যাস কমে যাওয়ার সঙ্গে তুলনা করছেন৷ তাঁদের মতে, আই-প্যাড স্ক্রিনের পর্দায় ভেসে ওঠা নিউজ আপডেটে অভ্যস্থ জেন-ওয়াইয়ের কাছে কাগজের পাতা ওল্টানো টা সত্যিই’ বিলাসিতা’৷পাশপাশি তাঁদের মন্তব্য, এই প্রজন্ম সচেতন থাকতে চায় না৷ চায় হাত গরমগল্প৷খবর কাগজ পড়লে সচেতনতা বাড়েতো ঠিকই, সেই সঙ্গে বাড়ে সাক্ষরতাও৷ ফলে, সহজেই বোঝা যায়, কেন কাগজের পাতা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে এই প্রজন্ম৷
কিন্তু নিয়মিত কাগজ-পড়ুয়া মার্কিনদের মুখ বেশ ফ্যাকাশে হয়েছে ওবামার মন্তব্যে৷ কিছুতেই তাঁরা বুঝতে পারছেন না, কীভাবে মুছে দেবেন এতকালের অভ্যাস৷ এক পোশাক বিক্রেতার মন্তব্য, ‘নিয়মিত ওষুধ খাওয়ার মতোই রক্তে-মজ্জায় মিশে আছে এই অভ্যাস৷ কীভাবে উপড়ে ফেলব সেটা?’ সেই সঙ্গে খবর কাগজবন্ধ হলে কাজ হারাবেন অসংখ্য কাগজ বিক্রেতারা৷
তাই ওবামা যতোই বলুন, ‘খুচরো বিক্রির কোনও দ্রব্য আর খবর কাগজে মধ্যে বিশেষ ফারাক নেই’৷পাঠকের কাছে ‘প্রাণবায়ু’ হয়ে ওঠা খবর কাগজের ভবিষ্যত্হীনতা নিয়ে তাঁর মন্তব্য হতাশ করেছে দেশ বাসীকে।