দেশে বর্তমানে জনপ্রতি বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ১১ হাজার ৮৪০ টাকা বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে গোলাম দস্তগীর গাজীর (নারায়নগঞ্জ-১) প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান।
একই প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর বরাত দিয়ে মন্ত্রী আরও জানান, দেশের জনসংখ্যা ১৪ কোটি ৭৯ লাখ সেই হিসেবে জনপ্রতি ঋণের পরিমাণ ১৬০ মার্কিন ডলার যা ১১ হাজার ৮৪০ টাকার সমপরিমাণ।
মন্ত্রী আরও জানান, ১৯৭২ সাল থেকে ২০১১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫৫ দশমিক ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক সাহায্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৩১ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ ও ২৩ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার অনুদান।
মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে বৈদেশিক সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে। তবে জাতীয় আয়ের হিস্যা হিসাবে সাহায্যের পরিমাণ অনবরত কমছে। ১৯৭৫-৭৬ অর্থবছরে প্রাপ্ত সাহায্য ছিল জাতীয় আয়ের ১১ দশকি ১৭ ভাগ, ১৯৭৯-৮০ অর্থবছরে ছিল ৯ দশমিক ৫৭ ভাগ যা কমে ২০১০-১১ অর্থ-বছরে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৬৭ ভাগ।’
সাংসদ জাহিদ মালেকের (মানিকগঞ্জ-৩) প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘রপ্তানি ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রাপ্তি আমদানি দায় মোটানোর জন্য পর্যাপ্ত হলেও এ বছর বাজেট ঘাটতির বৈদেশিক অর্থায়ন খাতে প্রাপ্তি বেশ কম।’
একই প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে মার্কিন ডলারের নিট প্রাপ্তি ৬৮ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলার। যা আগের বছরে ছিলো ৩২২ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার।
বিএনপির অনুপস্থিত সদস্য রেহানা আক্তার রানুর (মহিলা আসন-৪০) প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, ২০১১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে অনাদায়ী কৃষি ঋণের পরিমাণ ২৫ হাজার ৮৯২ কোটি ১৩ লাখ টাকা। অন্যদিকে, শিল্প ঋণের পরিমাণ এক লাখ ২৬ হাজার ৩০৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।
মো. শফিকুল ইসলামের (সিরাজগঞ্জ-৪) প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, চলতি ২০১১-১২ অর্থ-বছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিবি) খাতে বরাদ্দ ৪৬ হাজার কোটি টাকা। প্রথম ছয় মাসে ব্যয় হয়েছে ১২ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা। যা মোট এডিবির ২৮ শতাংশ।
তিনি আরও জানান, চলতি অর্থবছরে এডিবি বহির্ভূত কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি খাতে বরাদ্দ এক হাজার ২৭৬ কোটি টাকা। যার মধ্যে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ছাড় হয়েছে ৯৮৬ কোটি টাকা।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মো. ফজলুল আজিমের প্রশ্নের জবাবে মুহিত বলেন, কর্মসংস্থান ব্যাংক প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত এক হাজার ৩১২ কোটি ৮৬ লাখ ৮১ হাজার টাকা ঋণ দিয়েছে।
নুরুন্নবী চৌধুরীর প্রশ্নের (ভোলা-৩) জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১৬ সালের মধ্যে আয়কর বিভাগ, মূল্য সংযোজন কর বিভাগ ও শুল্ক বিভাগের মধ্যে সমন্বিত ও সম্ভাব্য সব স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সংযুক্ত আধুনিক বিশ্বমানের ডিজিটাল পরিবেশ তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে।
নূর আফরোজ আলীর (মহিলা আসন-১৪) প্রশ্নের জবাবে আব্দুল মুহিত বলেন, ভ্যাট ফাঁকির প্রবণতা রয়েছে। তবে ভ্যাট রাজস্ব আদায় উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় এ প্রবণতা মারাত্মক নয়।
একই প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী আরও জানান, আধুনিক ও বিশ্বমানের মূল্যমানের মূল্য সংযোজন কর আইনের খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। আগমী ২০১২-১৩ অর্থ-বছরের বাজেট অধিবেশনে জাতীয় সংসদে উত্থাপন করার পরিকল্পনা আছে।
এবিএম গোলাম মোস্তফার (কুমিল্লা-৪) প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, বর্তমানে বাংলাদেশে তফসিলি ব্যাংকের সংখ্যা ৪৭টি। এর মধ্যে সরকারি মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক চারটি। বিশেষায়িত ব্যাংক চারটি। বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ৩০টি ও বিদেশি ব্যাংক ৯টি। এছাড়া ৬০টি বীমা কোম্পানি রয়েছে।
বিএনপির অনুপস্থিত সংসদ সদস্য জাফুরুল ইসলাম চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১৫) মন্ত্রীর কাছে জানতে চান, ‘সেবা দেওয়ার বিনিময়ে দেশি-বিদেশি বেসরকারি ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত সার্ভিস চাজ কমানোর বিষয়ে সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে?’
উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ‘বিভিন্ন ব্যাংক কর্তৃক আরোপিত অতিরিক্ত, অত্যধিক, অযৌক্তিক, অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন চার্জগুলো যৌক্তিককরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক পদক্ষেপ নিয়েছে। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত গত তিন বছর তিনটি সার্কুলার জারি করা হয়েছে।’
তারানা হালিমের (মহিলা আসন-৮) প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার পুনর্নির্ধারণে একজন অতিরিক্ত সচিবকে সভাপতি করে আট সদস্য বিশিষ্ট উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পরে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার বৃদ্ধির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
নূর-ই-হাসনা লিলি চৌধুরীর (মহিলা আসন ৪৩) প্রশ্নের জবাবে মুহিত বলেন, ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী দেশের সীমান্ত এলাকায় ১৮১টি স্থল শুল্ক স্টেশন রয়েছে। এসব স্টেশনের মধ্যে প্রায় ৪০টি ছাড়া অবশিষ্ট স্টেশনগুলির মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে বাণিজ্য না থাকায় অকার্যকর রাখা হইয়াছে।’
ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির (মহিলা আসন-৪৭) প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে ১৯ হাজার ৩৩৩ দশমিক ৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। যেখানে বর্তমান সরকারের তিন বছরে ৩৩ হাজার ৮৯০ দশমিক ৫৪ মিলিয়ন ডলার এসেছে ।
নাজিম উদ্দিন আহমেদের (লক্ষীপুর-১) প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, দেশের রিজার্ভকে ডাইভার্সিফাই করতে ২০১০ সালের ৯ নভেম্বর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ১০ মে. টন সোনা কেনা হয়েছে, প্রতি আউন্স ১ হাজার ২৫১ ডলার দরে।
নুরুন্নবী চৌধুরীর (ভোলা-৩) প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান সরকারে মেয়াদে ১৯ হাজার ৬৭২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ হাজার ৩৭০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা আসল ও ৪ হাজার ৩০১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা সুদ।’
নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত মুহিবুর রহমান মানিকের (সুনামগঞ্জ-৫) প্রশ্নের জবাবে মুহিত বলেন, ‘বেসরকারি খাতে নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক আগ্রহী উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে আবেদনপত্র নেওয়া হয়েছে। এসব আবেদনপত্রের মূল্যায়ন প্রক্রিয়া শেষ হলে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।’