সীমান্তহত্যা বন্ধের দাবিতে ৫০ ভারতীয় ওয়েবসাইট হ্যাক্ড!

সীমান্তহত্যা বন্ধের দাবিতে ৫০ ভারতীয় ওয়েবসাইট হ্যাক্ড!

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যা বন্ধের দাবিতে এবার ভারতের প্রায় ৫০টি ওয়েবসাইট হ্যাক করেছে বাংলাদেশের একটি হ্যাকার গ্রুপ।

বারবার বাংলাদেশি সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশি হত্যা বন্ধে ভারত সরকার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরেও সীমান্তে হত্যা বন্ধ না হওয়ার প্রতিবাদ জানাতে ‘বাংলাদেশ ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার’ নামে একটি  হ্যাকার গ্রুপ এ হ্যাকিং করে।

জানা গেছে, কিশোরী ফেলানীসহ বাংলাদেশের সীমান্তে বার বার বাংলাদেশিদের নির্বিচারে ও নৃশংসভাবে হত্যা বন্ধ করতেই বাংলাদেশের এই হ্যাকার গ্রুপটি ভারত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি ওয়েবসাইটসহ ২৫  থেকে ২৮ জানুয়ারি মোট ৪ দিন এ সাইটগুলো হ্যাক করে রাখে।

‘বাংলাদেশ ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার’ গ্রুপের সদস্যরা ওইসব ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে হোমপেজের কনটেন্টও পরিবর্তন করে ফেলেন। অধিকাংশ সাইটের হোমপেজের কনটেন্ট পরিবর্তন করে সেখানে লিখে দেন-‘ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কর্তৃক বাংলাদেশি হত্যার প্রতিবাদে সাইটগুলো হ্যাক করা হলো।’

এরমধ্যে কয়েকটি সাইটে বিএসএফের গুলিতে নিহত কিশোরী ফেলানীর ঝুলন্ত লাশের ছবিও ট্যাগ করে দেওয়া হয়।

ভারত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি সাইট- ‘হাইওয়ে পুলিশ মহারাষ্ট্র স্টেট’-এর ওয়েবসাইটটি হ্যাক করে ফ্রন্টপেজের মাঝখানে কাঁটাতারে ঝুলন্ত ফেলানীর ছবি ট্যাগ করে দেওয়া হয়। তাতে শিরোনাম লিখে দেওয়া হয়- ‘ফিফটিন ইয়ারস ইনোসেন্ট গার্ল ফেলানী কিল্ড বাই ফা… ইন্ডিয়ান বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ)।’

এর আগে ‘অ্যাবাউট আজ’ শিরোনামের নিচে লিখে দেওয়া হয়- ‘হ্যাকড বাই ব্যাক বোন’। তার নিচে লেখা হয়-‘বিডি ব্ল্যাক হ্যাট হ্যার্কাস’। এর নিচের লাইনে হ্যাকাররা লিখে দেন- ‘দিজ সাইট ইজ হ্যাকড’।

এছাড়া হতভাগ্য কিশোরী ফেলানীর ঝুলন্ত লাশের ছবির নিচে ‘বাংলাদেশ ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার’ গ্রুপের সদস্যরা লেখেন- ‘উই নেভার ফরগেট’, ‘উই নেভার ফরগিভ’, ‘উই নেভার গিভ আপ’।

এর নিচে ‘বাংলাদেশ ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার’ গ্রুপের সদস্যরা ইংরেজিতে লিখে দেন- ‘স্টপ হ্যাকিং বাংলাদেশি সাইট অ্যান্ড স্টপ বর্ডার কিলিং এলস উই উইল ডেসট্রয় ইওর সাইবার স্পেস’।

এর পরের লাইনে লেখেন- ‘হোয়্যার ইজ হিউম্যানিটি?’
তারপরের লাইন- ‘…শেম অন বিএসএফ…ফা… বিএসএফ…শেম…’।

এর পরের লাইনে ওয়েব পেজের অ্যাডমিনের উদ্দেশে হ্যাকাররা লেখেন- ‘অ্যাডমিন ইওর সাইট ডোন্ট হ্যাভ অ্যানি সিকিউরিটি, আই ব্রেক ইট ইন এ সিঙ্গেল অ্যাটাক।’

এছাড়া ওয়েব পেজের ওপরের ডানদিকের ‘ট্রাফিক কারেন্ট নিউজ’-ট্যাবের মূল শিরোনামটি লিখে দেওয়া হয়- ‘ট্রাফিক জ্যাম হ্যাকড বাই ব্যাক বোন বাংলাদেশ ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার।’

এই ট্যাবের নিচে আরেকটি ট্যাবের শিরোনাম হচ্ছে- ‘ভেহিকেলস/অ্যাকিউজড ওয়ান্টেড’। এই ট্যাবের নিচে একটি ছবি ট্যাগ করে দেওয়া হয়। তাতে দেখা যায়- কাঁটাতারের বেড়ার পাশে মৃত এক ব্যক্তির পড়ে থাকা লাশ। পাশে দাঁড়িয়ে দুই বিএসএফ সদস্য ওই মৃত ব্যক্তির লাশ দেখছেন।

এই ছবির শিরোনামে লেখা রয়েছে- ‘ভেহিকেল নং. : স্টপ বর্ডার কিলিং’। অর্থাৎ এ বক্সটায় মূলত অভিযুক্ত গাড়ির নম্বর লেখা থাকে। সেখানে হ্যাকাররা- ‘স্টপ বর্ডার কিলিং’ লিখে মূলত ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী -বিএসএফের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন।

এদিকে, এই ছবির নিচে একটি বক্সে একটি কার্টুন আঁকা হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, ভারতের পতাকা দিয়ে বানানো একটি জামা গায়ে এক ব্যক্তির আবক্ষ মূর্তি। তার গালে চড় মারছে বাংলাদেশের পতাকা দিয়ে বানানো একটি হাত। চড় খেয়ে সে ভারতীয়ের মাথা ঘুরে গেছে।

এদিকে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ওয়েবসাইট হ্যাকারদের কবল থেকে উদ্ধার করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে-vivagroupindia.com, koganpage.co.in, dcholidays.in, sviei.com। তবে যেসব ওয়েবসাইট হ্যাকারদের কবল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে, সেগুলোর কয়েকটি হচ্ছে-indiasquash.com, britishschool.co.in, sss-college.com, selviacademy.org, srigangatransport.com।

এদিকে, হ্যাকাররা দাবি করেছেন, ‘ফেলানীকে তারের ওপর গুলি করে সেটি ছবি বানিয়েছে বিএসএফ। সেগুলো আমরা সর্বত্র দেখেছি। সীমান্ত হত্যার প্রতিবাদে তাই সেই একই ছবি আমরা ঝুলিয়ে দিয়েছি ভারতীয় ওয়েবসাইটে। সীমান্ত হত্যাকাণ্ড না থামলে আমাদের হ্যাকিং কর্মকাণ্ড থামবে না।’

বাংলাদেশ রাজনীতি শীর্ষ খবর