প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলা প্রশাসকদের প্রতি ভবিষ্যতে আর কোনো অসাংবিধানিক সরকার যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে সে লক্ষে মনোযোগ দিয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০১৩ উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন। তার বক্তব্যের বরাত দিয়ে একথা জানায় সরকারি সংবাদ সংস্থা বাসস।
তিনি বলেন, অতীতে দেশের জনগণ সামরিক সরকার তথা সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দমন-পীড়নের শিকার হয়েছে। কাজেই ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের সরকার ক্ষমতা দখল করতে না পারে সে ব্যাপারে আপনাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব মুশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বক্তব্য রাখেন।
এতে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের পক্ষে ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার এ এন শামসুদ্দিন আজাদ চৌধুরী, কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. তোফাজ্জল হোসেন, যশোরের জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও ভোলার জেলা প্রশাসক খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান বক্তব্য রাখেন।
মন্ত্রি, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংশ্লিষ্ট সচিব, বিভাগীয় কমিশনার ও সরকারের পদস্থ কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতোই আগামী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, আগামী সাধারণ নির্বাচন অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে, যাতে দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে।
গণতন্ত্রকে রক্ষার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভোট দেয়ার সময় জনগণ ভুলও করতে পারে অথবা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতে পারে।
আগামী সাধারণ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি আপনাদের শক্তিশালী ভূমিকা, কর্মদক্ষতা এবং সদিচ্ছার ফলে গণতন্ত্রের সুস্থধারা অব্যাহত থাকবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী দেশে গণতন্ত্রকে সমৃদ্ধশালী করার পথ সুগম করে দিয়েছে। দেশে প্রথমবারের মতো আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনসহ প্রায় ৬ হাজার নির্বাচন বর্তমান সরকারের মেয়াদে অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিটি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ায় কেউ কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারেনি।
ইসলামের নামে কেউ যাতে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্ঠি কিংবা শিশুদের এ ধরনের কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত করতে না পারে সেব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য তিনি জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আপনাদেরকে আহ্বান জানাবো আপনারা দুষ্টকাজে মাদ্রাসার শিশুদের যাতে ব্যবহার করতে না পারে, সে ব্যাপারে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করবেন।’
প্রধানমন্ত্রী জেলা প্রশাসকদের সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে ১৭-দফা নির্দেশনা দেন।
শেখ হাসিনা তাদের প্রতি রমজান মাসে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে নিত্যপণ্যের মূল্য যাতে বৃদ্ধির যে কোনো ধরনের অপতৎপরতা প্রতিহত করার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী দেশের জনগণ যাতে সরকারি সেবা পেতে হয়রানি ও বঞ্চিত না হয়, সেজন্য জেলা প্রশাসকদের বিশেষ মনোযোগী হওয়ার উপদেশ দেন।
তিনি সকল পর্যায়ে নারী শিক্ষা হার বৃদ্ধি, ঝরে পড়া রোধ, ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মূল ধারায় ফিরিয়ে আনা এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে গুণগত শিক্ষা বিস্তার ও মানোন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য ডিসিদের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী ডিসিদের প্রতি ভূমি প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধিসহ সরকারি জমি রক্ষায় তীক্ষ্ণ নজরদারি এবং কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে সার, বীজ, বিদ্যুৎ ও তেলের সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা খাদ্যশস্য দূষণমুক্ত রাখতে উৎপাদকদের উৎসাহিত করা এবং ভেজাল খাদ্যদ্রব্য বাজারজাতকরণ প্রতিরোধে ব্যাপক গণজাগরণ সৃষ্টির জন্য ডিসিদের পরামর্শ দেন।
পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায় জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং এ সম্পর্কিত আইন ও বিধি-বিধানের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিতের ওপর জোর দেন।
প্রধানমন্ত্রী জেলা প্রশাসকদের স্থানীয় সম্পদ এবং সম্ভাবনার আলোকে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সমবায়ভিত্তিক কার্যক্রমে উৎসাহিত ও সংগঠিত করতে যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণে পরামর্শ দেন।
তিনি তাদেরকে দুর্যোগ ও বিপর্যয় প্রশমনে দুর্যোগ সংক্রান্ত স্থায়ী নির্দেশাবলী ‘স্ট্যান্ডিং অর্ডারস অন ডিজাস্টার-২০১০’ অনুসারে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নেয়া এবং সাধারণ মানুষকে সহজে সুবিচার প্রদান ও আদালতে মামলার জট কমাতে গ্রাম আদালতকে কার্যকর করারও পরামর্শ দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকারের মেয়াদে এটি পঞ্চম জেলা প্রশাসক সম্মেলন। এ সম্মেলনে প্রতি বছর কেন্দ্রের সঙ্গে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সরাসরি মতবিনিময়ের যে সুযোগ সৃষ্টি হয় তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তৃণমূল পর্যায়ে সরকারি নীতি ও কর্মসূচি বাস্তবায়নে সমস্যাসমূহ এবং সেগুলো উত্তরণের পন্থা ও কৌশল নির্ধারণে এ সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সরকার নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে- এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত সাড়ে চার বছরে অনেক ক্ষেত্রেই তার সরকার অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে।
আগামী নির্বাচনের আগেই তার সরকারের অবশিষ্ট অঙ্গীকারসমূহও বাস্তবায়ন সম্ভব হবে বলে তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।