বিএনপির গণমিছিলকে কেন্দ্র করে সোমবার রাজশাহীতে পুলিশের সঙ্গে জামায়াতের সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের গুলিতে এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন পুলিশের দুই ওসি ও দুই কনস্টেবলসহ অর্ধ শতাধিক।
জামায়াতকর্মী নিহত ও পুলিশের হামলার প্রতিবাদে মহানগরীতে মঙ্গলবার অর্ধদিবস হরতালের ডাক দিয়েছে চারদলীয় জোট। সন্ধ্যায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে জোটের নেতারা এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
পুলিশের গুলিতে নিহত যুবকের নাম শফিকুল ইসলাম। তিনি ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল লক্ষ্মীপুর শাখার ওয়ার্ডবয় ছিলেন। তার বাড়ি মহানগরীর বহরমপুরের অচিনতলা এলাকায়। পিতার নাম আবদুর রহিম শেখ।
শফিকুলের দূর সম্পর্কের আত্মীয় আন্টু তার পরিচয় নিশ্চিত করেন। জামায়াতের দাবি শফিকুল তাদের দলীয় কর্মী ছিল। সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত শফিকুলের লাশ বর্তমানে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ছিল।
তবে পুলিশের গুলিতে কেউ নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করেনি প্রশাসন।
সংঘর্ষে পুলিশের দুই ওসি ও দুই কনস্টেবলসহ অর্ধ শতাধিক আহত হয়েছেন। আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন- মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওসি তোফাজ্জল হোসেন খান, বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি শাহরিয়ার, কনস্টেবল মিজানুর রহমান ও কনস্টেবল সাজ্জাদুর রহমান।
মিছিলকারীদের ছোড়া ইটের আঘাতে ওসি তোফাজ্জল হোসেনের নাক ফেটে গেছে এবং হাত ভেঙে গেছে ওসি শাহরিয়ারের। তাদের রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে তারা চিকিৎসাধীন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, জামায়াত সোমবার বিকেল পৌনে ৪টায় রাজশাহী লোকনাথ স্কুল থেকে কলেজিয়েট স্কুল অভিমুখে গণমিছিল বের করলে পুলিশ বাধা দেয়।
এ সময় হেতেমখাঁ এলাকার দিক থেকে জামায়াতের আরও একটি মিছিল লোকনাথ স্কুলের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে সেখানেও পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। এনিয়ে জাময়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। ঘণ্টাব্যাপী দফায় দফায় সংঘর্ষে পুলিশ শতাধিক টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট এবং একপর্যায়ে গুলি ছোড়ে।
লোকনাথ স্কুলের কাছে গুলিতে মহানগরীর বহরমপুরের অচিনতলার শফিকুল ইসলাম নামে এক জামায়াতকর্মী নিহত হন। উভয়পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপেরে ঘটনায় হেতেমখাঁ এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। মুহূর্তের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায় নগরীর সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
বিকেল পৌনে ৫টার দিকে জামায়াতকর্মীরা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। পুলিশ বাধা দিতে গেলে জামায়াত কর্মীরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে পুলিশের ওপর চড়াও হয়।
সংঘর্ষে মহানগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি শাহরিয়ার এবং ডিবির ওসি তোফাজ্জেল হোসেন খানসহ অর্ধশতাধিক আহত হন। সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ অ্যাম্বিশন কোচিং সেন্টার থেকে অন্তত: ১৫ জনকে আটক করে পুলিশ। পরে র্যাব সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
অপরদিকে, মহনগরীর ভুবনমোহন পার্ক এলাকা থেকে বিএনপির যুগ্মমহাসচিব সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনুর নেতৃত্বে বিএনপির নেতাকর্মীরা একটি গণমিছিল নিয়ে জিরো পয়েন্টের দিকে যেতে থাকলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়।
কিন্তু পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে মিছিলটি জিরো পয়েন্টে যায়। এখানে পুলিশের সঙ্গে বাকবিত-া শেষে এক পর্যায়ে মিছিলটি বাধা অতিক্রম করে বড় মসজিদ সড়ক ও মনিচত্বর হয়ে পুনরায় ভুবনমোহন পার্কে গিয়ে শেষ হয়। পরে নেতাকর্মীরা মহানগর বিএনপি কার্যালয়ে জড়ো হন।
দলীয় কার্যালয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সাংবাদিক সম্মেলন করে জোটের পক্ষ থেকে জামায়াত কর্মী নিহত ও পুলিশের হামলার প্রতিবাদে মহানগরীতে মঙ্গলবার অর্ধদিবস হরতালের ডাক দেওয়া হয়।
বিএনপির যুগ্মমহাসচিব ও মহানগর সভাপতি মিজানুর রহমান মিনু এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত রাজশাহী মহানগর এলাকায় অর্ধদিবস হরতাল। মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কালোব্যাজ ধারণ ও বুধবার দোয়া দিবস পালন।
সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে বিএনপির বিশেষ সম্পাদক ও জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট নাদিম মোস্তফার নেতৃত্বে রাজশাহী কলেজ থেকে পৃথক একটি গণমিছিল বের করা হয়।
এদিকে, রাজশাহী মহানগর পুলিশ (আরএমপি) কমিশনার এম ওবাইদুল্লাহ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, পুলিশের গুলিতে কেউ মারা যায়নি। ঘটনার পর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ছুড়েছে, লাঠি চার্জ করেছে। তবে গুলি ছোড়েনি।
এটি ‘সেইমসাইড’ হতে পারে উল্লেখ করে আরএমপি কমিশনার বলেন, এ ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হবে।
এম. ওবাইদুল্লাহ আরও বলেন, বিএনপির আড়ালে সোমবার বিকেলে জামায়াত-শিবির পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।