পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণে ট্রেড ইউনিয়ন করার অনুমতি দেয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে সরকার ও মালিক পক্ষ। মঙ্গলবার শ্রম আইন সংশোধনে গঠিত কমিটির প্রধান প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে বৈঠকে মালিকরা এ বিষয়ে একমত হন।
মঙ্গলবার দুপুরে প্রবাসীকল্যাণ ভবনে এ বৈঠক হয়। বৈঠকে পোশাক শিল্প মালিকদের সমিতি বিজিএমইএ’র সাবেক ও বর্তমান নেতারা, বিকেএমইএ’র নেতাসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি পোশাক কারখানায় ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা নিয়ে আলোচনা হয়। এসময় মন্ত্রী মালিকদের শ্রমিকদের নিরাপত্তার জোরদারের বিষয়ে আরও গুরুত্ব দিতে মালিকদের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, পোশাক শ্রমিকরা দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তাই অযাচিত দুর্ঘটনায় মুখে পড়ে শ্রমিকদের প্রাণহানি সত্যি দুঃখজনক। এ ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান মন্ত্রী।
এছাড়া শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও অধিকার আদায়ে যেসব পোশাক কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন নেই সেখানে ট্রেড ইউনিয়ন করার অনুমতি দেয়ার জন্য মালিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
মন্ত্রীর আহ্বানের প্রেক্ষিতে মালিকরা জানান, শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণে তারা বদ্ধপরিকর। তাই সরকারের নির্দেশনা মেনে পোশাক কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন করার অনুমতি দেয়া হবে বলেও জানান তারা্।
ব্যবসায়ী নেতারা জানান, শ্রমিকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে তারা সব সময় সজাগ থাকেন। তার পরও সম্প্রতি রানা প্লাজা ও তাজরিন ফ্যাশনসে ঘটে যাওয়া ঘটনার দুঃখজনক। এটি পোশাক শিল্পের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি বলেও মন্তব্য করেন তারা। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে সেজন্য তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলেও আশ্বস্ত করেন।
গত ১ জুলাই মন্ত্রিসভা শ্রমিকদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিদ্যমান শ্রম আইন সংশোধনে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)’তে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে এই কমিটির প্রধান করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- বাণিজ্যমন্ত্রী গোলাম মোহাম্মদ কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, পরারাষ্ট্র সচিব, শ্রম সচিব এবং বাণিজ্য সচিব। সরকার এই কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর কলকারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নের পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।
গত ২৭ জুন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্ক মুক্ত প্রবেশের সুবিধা বা জিএসপি স্থগিত করে মার্কিন সরকার। বাংলাদেশে পোশাক শ্রমিকদের কাজের নিরাপত্তাহীনতার কারণ দেখিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্র জানায়। এর পরই জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালে চেষ্টা চালাতে এ কমিটি করে সরকার।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী সংবাদমাধ্যমকে জানান, জিএসপি সুবিধা পুনরুদ্ধারে আগামী সপ্তাহে তিনি জেনেভা ও ব্রাসেলস যাবেন। সেখানে বাংলাদেশের শ্রমিকদের নিরাপত্তা জোরদারে বর্তমান সরকারের পরিকল্পনা তুলে ধরবেন। এছাড়া জিএসপি স্থগিতাদেশ তুলে নিতে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) যেন যুক্তরাষ্ট্রকে সুপারিশ করে সে চেষ্টা চালাবেন তিনি।