১২ মার্চ নজিরবিহীন সহিংসতার আশঙ্কা!

১২ মার্চ নজিরবিহীন সহিংসতার আশঙ্কা!

পল্টন ময়দানে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পাল্টাপাল্টি সমাবেশকে কেন্দ্র করে নজিরবিহীন সহিংসতার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা।

শনিবার পুলিশি হস্তক্ষেপে বিএনপির রোববারের গণমিছিল ও মহানগর আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ সমাবেশ বাতিল হওয়ার পর ১২ মার্চও এমন কিছুর আশঙ্কা করছেন তারা।

বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়া ‘চলো চলো ঢাকা চলো’ কর্মসূচির ব্যানারে ১২ মার্চ পল্টন ময়দানে মহাসমাবেশ আয়োজনের ঘোষণা দেন চলতি জানুয়ারির গোড়াতেই। আর এ জানুয়ারিরই শেষ নাগাদ এসে শোনা যাচ্ছে- একই দিন একই স্থানে মুক্তিযোদ্ধা মহাসমাবেশ করবে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। ওই সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হচ্ছেন বলেও আলোচনা চলছে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে।

রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তির এমন অবস্থান বড় ধরনের সহিংসতার আশঙ্কা তৈরি করেছে। এমনকি ওই সহিংসতা অতীতের যে কোন সহিংস ঘটনার ভয়াবহতা ছাড়িয়েও যেতে ‍পারে।

পরস্পরকে আক্রমন করে দেওয়া উভয় পক্ষের কেন্দ্রীয় নেতাদের সাম্প্রতিক বক্তব্য সহিংসতার আশঙ্কা আরো বাড়িতে তুলছে বলেও মনে করছেন তারা।

তাদেও ধারণা, পরস্পরবিরোধী দুই পক্ষের সমাবেশ একই দিনে হলে রাজপথ ছাড়াও শহরের অলিতে গলিতে সংর্ঘষ ছড়িয়ে পড়তে পারে।

সম্ভাব্য এই সহিংসতা এড়াতে ক্ষমতাসীনদেরই এগিয়ে আসা উচিৎ বলেও মনে করছেন বিশিষ্টজনরা।

তাদের অভিমত, দু’টি দলেরই দায়িত্ব আছে। তবে সরকারি দলের দায়িত্বটা অনেক বেশি।

এ প্রসঙ্গে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম বাংলানিউজকে বলেন, ‘দু’দলের পাল্টা-পাল্টি কর্মসূচি কোন সুস্থ রাজনীতির ধারা নয়। দু’টি দলই দেশ চালিয়েছে, ভবিষ্যতেও চালাবে। এখন এক দল ক্ষমতায় আছেন, আর একদল অতীতে ছিল।’

বর্তমান সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র চালানোর জন্য সহনশীলতা দরকার। মানুষ ভয় পায়, জীবন দিতে হয়- এমন রাজনীতি কেউ পছন্দ করে না। করতে পারে না। রাজনীতিতে মানুষকে শ্রদ্ধা করতে হয়। কিন্তু দু’টি জোটের কেউই মানুষকে শ্রদ্ধা করে না।

কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘এমন একটা সময় আসবে যখন এদেশের মানুষ তাদের প্রত্যাখান করবে। দু’দলের আচরণে মনে হয় সেই দিন বেশি দূরে নয়।’

তিনি বলেন, ‘বড় দুটি দলের দায়িত্বহীন হওয়া উচিৎ নয়। কারণ, এই পাল্টাপাল্টি রাজনীতির কারণে তাদের কাছে জনগণ আজ জিম্মি হয়ে পড়েছে। জনগণকে এ অবস্থা থেকে রক্ষা করতে সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে।’

বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিকুল হক বলেন, ‘দু’টি দল যদি এরকম পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষণা করে তা হলে দেশ ও দেশের জনগণের জন্য হবে খুবই খারাপ। রাজনৈতিক পরিস্থিতি যাবে ভয়াবহতার দিকে। যা  এ দেশ ও জাতির জন্য হবে দু:খ জনক।’

তিনি বলেন, ‘প্রত্যেককেই রাজনীতির রীতিনীতি বা নিয়ম মেনে চলা উচিৎ। রাজনীতি জমি দখল করার জন্য লাঠি নিয়ে নামা নয়। রাজনীতি গুণ্ডা বা গুণ্ডা বাহিনীর কাজ নয়। রাজনীতি হচ্ছে একটি নিয়মতান্ত্রিক পথ। এ নিয়ম মেনে চলার দায়িত্ব সরকারের বেশি হলেও বিরোধী দলের কম নয়। এদেশের কোন সচেতন মানুষই পাল্টাপাল্টির রাজনীতি পছন্দ করে না।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার রফিক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু  কন্য । আমি মনে করি না তিনি এ রকম পাল্টাপাল্টির রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস- কোন রাজনৈতিক সমস্যা বা কোন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে তিনি রাজনৈতিকভাবেই মোকাবেলা করবেন। আমি তার কাছে এটাই কামনা করি।’

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মোজ্জাফর আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘একই দিনে একই সময় দুই দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেশকে ভয়াবহতার দিকে নিয়ে যাবে। দুই দলের কর্মকাণ্ডে এটা মনে করাই স্বাভাবিক। দুই দলের পৃথক দুই কর্মসূচিতে রাজধানীসহ সারা দেশে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘এখন নয়, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অরাজনৈতিক আচরণের কারণে এ আতঙ্ক একবছর আগ থেকেই ছড়িয়ে পড়ছে।’

উল্লেখ্য, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ৯ জানুয়ারি চট্রগামের পলোগ্রাউন্ডের জনসভায় ১২ মার্চ ঢাকার পল্টন ময়দানে চল চল ঢাকা চলো কর্মসূচি (মহাসমাবেশ) আয়োজনের ঘোষণা দেন।

সম্প্রতি একই দিনে পল্টন ময়দানে মহাসমাবেশ ডাকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। এ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ দেওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে।

একদিকে মহাসমাবেশে ১০ লাখ লোক সমাগমের  টার্গেট নিয়েছে বিএনপি, অপরদিকে বিএনপির মহাসমাবেশের চেয়ে বেশি লোক সমাগমের চেষ্টা চালাচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।

রাজনীতি