দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ২৩ জুন (রবিবার) পালিত হল ৬৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। ১৯৪৯ সালের এই দিনে পুরান ঢাকার কে এম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে সর্বদলীয় কর্মী সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করে দলটি। কিছু সংখ্যক প্রগতিবাদী নেতার উদ্যোগে বাঙালি জাতির মুক্তির লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আজকের ক্ষমতাসীন দলটি।
প্রথম অবস্থায় মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি, শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক ও কারাবন্দি অবস্থায় শেখ মুজিবুর রহমান দলের যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে যাত্রা শুরু করলেও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ১৯৫৫ সালে কাউন্সিলের মাধ্যমে দলের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেয়া হয়। নতুন নামকরণ করা হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। ১৯৫৭ সালে মত বিরোধের কারণে মাওলানা ভাসানী আওয়ামী লীগ ত্যাগ করলে শেখ মুজিবুর রহমান দলটির প্রধান নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নামে পরিচিতি লাভ করে দলটি। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ভাষা আন্দোলন, খাদ্য আন্দোলন, মুসলিম লীগবিরোধী ২১ দফা প্রণয়ন ও যুক্তফ্রন্ট গঠন, চুয়ান্নর নির্বাচনে বিজয় ও মুসলিম লীগের ভরাডুবি প্রভৃতি ঘটনার ভেতর দিয়ে ষাটের দশকেই আওয়ামী লীগ হয়ে ওঠে পূর্ব বাংলার রাজনীতির প্রধান চালিকাশক্তি।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৯৭৫ সালে বাকশাল প্রতিষ্ঠার সময় অন্যান্য দলের মতো আওয়ামী লীগও বিলুপ্ত হয়। পরবর্তীতে ১৯৭৭ সালে তৎকালীন সরকারের জারি করা পিপিআরের অধীনে দলটি পুনরায় আওয়ামী লীগ নাম ধারণ করে আত্মপ্রকাশ করে।
১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ মুজিবুর রহমানের জেষ্ঠ্য কন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নেন।
১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে দলটি ‘৭৫ পরবর্তী সময়ে প্রথম বার সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট দ্বিতীয় বারের মতো রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসে।
৬৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছিল ক্ষমতাসীন এ দলটি। সূর্য উদয়ক্ষণে কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় কর্মসূচি।
রবিবার সকাল ৭টায় ধানমন্ডিস্থ বঙ্গবন্ধু ভবনে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন দলের নেতারা। সোয়া সাতটায় ভবন প্রাঙ্গণে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন, পায়রা উন্মুক্ত ও বেলুন উড়ানোর কর্মসূচী সম্পন্ন করেন।
প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়া দিবসটি উপলক্ষে দেশজুড়ে নেওয়া হয়েছিল শোভাযাত্রা, টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর কবরসহ বিভিন্ন শহীদ মিনার ও বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, শপথ গ্রহণ, মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা, স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ, বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ, বৃক্ষরোপণ, স্বেচ্ছায় রক্তদান, আলোচনা সভা প্রভৃতি।