নিষিদ্ধ হলে নাম পাল্টিয়ে রাজনীতি করবে জামায়াত

নিষিদ্ধ হলে নাম পাল্টিয়ে রাজনীতি করবে জামায়াত

নিষিদ্ধ হলে নাম পাল্টিয়ে রাজনীতি করতে চায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এ ক্ষেত্রে তুরস্কের ক্ষমতাসীন একে পার্টির আদর্শে গোপনে সাংগঠনিক কাজ চালিয়ে যেতে যায় তারা। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দলটির শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি দল হিসেবেও জামায়াতের বিচারের দাবি উঠেছে। এরই মধ্যে জাতীয় সংসদে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন ১৯৭৩ এর সংশোধনীতে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দলের বিচারের সুযোগ করা হয়েছে। আবার জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে তরিকত ফেডারেশনের একটি রিট আবেদনের ওপর আদালতে শুনানি হয়েছে। এখন কেবল রায়ের অপেক্ষা। এই নিবন্ধন বাতিল হলে বা মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দলটি নিষিদ্ধ হলে কী হবে, এ নিয়ে এরই মধ্যে চিন্তা ভাবনা করছে জামায়াত।

মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করা এবং রাজাকার, আলবদর, আল শামস বাহিনী গঠন করে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতন, লুট, জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করা, দেশত্যাগে বাধ্য করার অভিযোগ আছে জামায়াতের বিরুদ্ধে। এসব অপরাধের দায়ে মুক্তিযুদ্ধের পর পর নিষিদ্ধ করা হয় জামায়াতকে। আত্মগোপনে যান দলটির বর্তমান ও সে সময়ের শীর্ষ নেতা। তবে গোপনে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালু রাখে জামায়াত। মসজিদে মসজিদে ইবাদতের নামে সাংগঠনিক বৈঠকও করে দলটির নেতারা।

তবে ১৯৭৫ সালের পট পরিবর্তনের পর জিয়াউর রহমানের শাসনামলে প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ পায় জামায়াত। তবে আশির দশকের শুরু থেকেই দলটিকে নিষিদ্ধ করতে স্বাধীনতার পক্ষের বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক সংগঠন আন্দোলন কওে আসছে।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত নেতাদের বিচার শুরুর পর থেকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিষিদ্ধ হওয়ার শঙ্কা ভর করে দলটির নেতাদের মধ্যে।

এই অবস্থায় ২০১০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টির সাথে দেখা করে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বাংলাদেশে যদি ধর্মভিত্তিক দলগুলো নিষিদ্ধ হয়ে যায়, তাহলে জামায়াত তুরস্কের ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর দৃষ্টান্ত অনুসরণ করবে। জামায়াত দলের নাম পরিবর্তন করবে। দলীয় গঠনতন্ত্র থেকে ধর্মীয় মতবাদগুলো বাদ দেবে। জামায়াত আদালতের নির্দেশ মেনে চলবে বলেও জানান আব্দুর রাজ্জাক।  ওই বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি মরিয়ার্টি এক গোপন তারবার্তায় এই কথা লিখেন। উইকিলিকস এই তারবার্তাটি প্রকাশ কওে দিয়েছে।
২০১০ সালের ৩ জানুয়ারি ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগের সদর দপ্তরে পাঠানো একটি গোপনীয় তারবার্তায়ও প্রকাশ পায় জামায়াতে ইসলামীর ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা।

ওই তারবার্তায়ও বিশেষ পরিস্থিতিতে দলের নাম পরিবর্তন করে রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার কথা স্বীকার করেন আবদুর রাজ্জাক। এসব বিষয়ে জানতে আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার ব্যক্তিগত সহকারী মোশাররফ সংবাদ মাধ্যমকে জানান, এই জামায়াত নেতা বর্তমানে দেশের বাইরে আছেন।

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দ-প্রাপ্ত জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের একটি চিঠিও প্রকাশ করেছে উইকিলিকস। ২০১২ সালে ‘পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে নতুন কর্মকৌশল গ্রহণ সময়ের দাবি’ শিরোনামে ওই চিঠিতে দলেন নাম পরিবর্তনসহ তিনটি সংস্কারের কথা বলেন।

নতুন কর্মপন্থা হিসেবে তিনটি প্রস্তাবের মধ্যে ছিল- এক. জামায়াত যেমন আছে তেমন থাকবে।

দুই. জামায়াত নিয়ে পেছন থেকে একটি নতুন সংগঠন গড়ে তুলবে।

তিন. যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা হচ্ছে তারা নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়াবে এবং সম্পূর্ণ নতুন লোকদের হাতে জামায়াতকে ছেড়ে দেওয়া হবে।

এর মধ্যে তৃতীয় কৌশলটি আর কার্যকর হবে না বলে জানিয়েছেন জামায়াতের নেতারা। পেছনে থেকে নতুন সংগঠনকি হেফাজতে ইসলাম কি না, সে বিষয়েও স্পষ্ট করে কিছু বলতে চান না জামায়াতের নেতারা। তবে আদালত জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে দিলে অল্প দিনের মধ্যেই বিষয়গুলো স্পষ্ট হবে বলে জানিয়েছেন নেতারা।

 

 

রাজনীতি শীর্ষ খবর